আ. হামিদ, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
জুলাই ৩, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কেউটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লুৎফুন্নাহার লাকীর আত্মহত্যার পেছনের চাঞ্চল্যকর কারণ উদঘাটন হয়েছে।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা করার পর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোয় লাকী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ইবনে মাসুদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
লুৎফুন্নাহার লাকী উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের হলুদিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে। গত ২৪ জুন নিজ কক্ষে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। পরে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর, ২৭ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লাকীর মৃত্যুর পর তার ঘর থেকে পাওয়া একটি ডায়েরিতে আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ডায়েরির পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল প্রতারণা, অবহেলা ও হতাশার করুণ বর্ণনা।
২০২৪ সালে প্রশিক্ষণে পরিচয় হয় গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইবনে মাসুদের সঙ্গে। মাসুদ প্রেমের অভিনয় করে লাকীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। প্রায় দুই বছরের এই সম্পর্কের একপর্যায়ে লাকী অন্তঃসত্ত্বা হন। তখন মাসুদকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে জানায়, সে বিবাহিত এবং তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
ডায়েরিতে লাকী লিখেন, “আজ বিকেল পর্যন্তও বেঁচে থাকার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তোমার অবজ্ঞা আমাকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। তুমি জানো, তোমার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি দুর্ঘটনার শিকার হব— তবুও তুমি আমাকে থামালে না। তুমি চাও আমি মরে যাই, আর তুমি সুখে সংসার করো? আমি এখন পোকা মারার বিষ খাব…”
এই ডায়েরিতে মাসুদের বিরুদ্ধে প্রতারণার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন লাকী।
এ ঘটনায় লাকীর বাবা আব্দুল লতিফ গত ২৮ জুন মধুপুর থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ইবনে মাসুদের নামে মামলা দায়ের করেন।
মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরানুল কবীর রুবেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাসুদ শিক্ষিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরবর্তীতে গর্ভবতী হলে মাসুদ বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়, এতে লাকী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অভিযুক্ত মাসুদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
ইএইচ