আ. হামিদ, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
জুলাই ৩, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
টাঙ্গাইলের মধুপুরে কেউটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লুৎফুন্নাহার লাকীর আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ইবনে মাসুদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লাকীর পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাসুদ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু পরবর্তীতে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লাকী এবং ২৪ জুন রাতে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আত্মহত্যার আগে লাকী তার হাতে লেখা পাঁচ পাতার একটি ডায়েরিতে ইবনে মাসুদের নাম উল্লেখ করে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। ওই ডায়েরিতে তিনি লেখেন— “পৃথিবীতে মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আজ বিকেল পর্যন্তও বেঁচে থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তোমার অবজ্ঞার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম। হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি— সুপ্রিয়, আস্থাভাজন, বন্ধু প্রীতম ইবনে মাসুদ স্যার।
বিগত দুই বছর তুমি আমার মন পাওয়ার চেষ্টা করেছো, ফুঁসলিয়ে আমার সর্বনাশ করেছো। যখন আমি তোমার সব কথা বিশ্বাস করলাম, তখন তুমি আমার হাত ছেড়ে দিলে। আমাকে টার্গেট করে সমাজের কাছে অপরাধী বানালে। তোমার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি কোনো দুর্ঘটনা ঘটাবো— এটা জেনেও তুমি আমাকে আটকাওনি। তুমি চাও আমি মরে যাই, আর তুমি সংসারে সুখে থাকো? আমি পোকা মারার বিষ খাচ্ছি। প্লিজ, আমার সঙ্গে যা করলে, তা আর কারও সঙ্গে কোরো না। আমার মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী।”
লাকীর বাবা আব্দুল লতিফ ২৮ জুন মধুপুর থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ইবনে মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি বা আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুপুর উপজেলা চত্বরে এলাকাবাসী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মীরা এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও অভিযুক্ত মাসুদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে বিটিপিটিতে প্রশিক্ষণকালে ইবনে মাসুদের সঙ্গে লাকীর পরিচয় হয়। ওই ঘনিষ্ঠতা পরবর্তীতে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়। কিন্তু মাসুদ বিবাহিত এবং স্ত্রী-সন্তান রয়েছে জানিয়ে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে হতাশ হয়ে লাকী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
মৃত লুৎফুন্নাহার লাকী টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ মিয়ার বড় মেয়ে।
স্থানীয়রা অভিযুক্ত ইবনে মাসুদকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ইএইচ