গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
আগস্ট ৯, ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বৈচিত্রের কাল্পনিক দৃশ্য ভ্রমণ পিপাসুদের অভয়রণ্য জাফলং।
মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা এ জনপদ, প্রকৃতি কন্যা জাফলং'র প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে ভ্রমন পিপাসু হাজারও পর্যটক। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারাচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং তার নিজস্ব রূপলাবণ্য। বালু-পাথর খেকোদের থাবায় জাফলং'র সেই আগের দৃশ্যপট এখন আর নেই বললেই চলে। জাফলং জিরো পয়েন্ট'র পর সম্প্রতি ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বালিঘাট মন্দিরের জুম নামক স্থান থেকে দিনরাত যন্ত্র দানব ফেলুডার মেশিন দিয়ে দেদারসে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। জুম পাড় কেটে অবৈধ ভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে জাফলংয়ের জুমপাড় ও আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ি বিলিনসহ বেশ কিছু পরিবার নিঃস্ব হওয়ার আশংকা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যন্ত্র দানব মেশিন দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে হুমকির মূখে রয়েছে স্থানীয় শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দিরসহ অসংখ্য ফসলী জমি, পানের বরজ ও সুপারী বাগান, ছাড়াও জাফলং চা-বাগান এবং বসতবাড়ি। আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দলনে পট পরিবর্তনের পরদিন থেকেই উত্তর সিলেটের বৃহৎ জাফলংয়ের পাথর কোয়ারী এবং বিছানাকান্দি পাথর কোয়ারী ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুটপাটের মহাযজ্ঞ চলে। শুধু জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট হয়। পাথর লুট-পাটে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.বদরুল হুদা বাদী হয়ে পৃথক-পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ঘটনার প্রায় কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে পাথর লুটপাটকারী মামলার আসামীরা এখনো রয়েগেছে অধরা।
জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি, মন্দির’র জুম, জিরো পয়েন্ট, বাবুল’র জুম এলাকা, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জাফলং সেতু সংলগ্ন পাথর কোয়ারী এলাকায় অবৈধভাবে দানবযন্ত্র দিয়ে রাতের আঁধারে বালু-পাথর উত্তোলনের করা হচ্ছে। চোরাইভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে জুমপাড় এলাকায় শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দির, বল্লাঘাটের পুরাতন পর্যটন স্পট, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, শত হেক্টর ফসলী জমি, চা বাগান, জাফলং সেতু, জাফলং বাজার, নয়াবস্তী, কান্দুবস্তী গ্রামের বসতবাড়ী ও খাসিয়া সম্পাদায়ের, পান সুপারীর বাগানসহ আশ পাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশস্কা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বালু-পাথর খেকোদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের ভাগবাটোয়ারা হওয়ার কারণে প্রশাসন নিরব থাকে। ফলে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি এক সাথে মিলেমিশে বীরদর্পে বিভিন্ন ধরনের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র দানব দিয়ে মাটি কেটে বালু-পাথর উত্তোলনের কাজ চলমান রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসনের লোক দেখানো টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযান পরিচালনাকারী দল ঘটনাস্থল পৌছানোর আগেই আগাম খবর চলে যায় বালু-পাথর খেঁকু চক্রের কাছে।
এসব চক্রের সদস্য আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নামধারী নেতাদের কাছে আজ পরাস্ত প্রকৃতি কন্যা জাফলং। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধধজ্ঞা জারী থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছেনা কোন আইনগত ব্যবস্থা। অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের অবহেলা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফলাতির কারনে পাথর উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকায় রয়েছে চা বাগান, ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাধারণ মানুষ হারাচ্ছে ফসলী জমি ও আবাসস্থল। এসব এলাকা থেকে বালু-পাথর উত্তোলন ও অপসারণ করতে খনিজ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও ঐসব নিয়মের কোন ধারে কাছেই নেই কেউ। তাছাড়াও মন্দিরের জুমপাড় এলাকা একটি বিবাদমান এবং ঝুকিপূর্ণ এলাকা। বিগত সময়ে শ্রী শ্রী বালিবাড়ি মন্দিরের পাড় এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনের সময় মাটির পাড় ধসে,মাটি চাপায় পাচ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিগত সময়ে অর্থাৎ ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে উক্ত ভূমি থেকে পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিবাদমান ব্যাক্তিদের মধ্যে গুলাগুলি হয় এসময় জুমপাড় এলাকা সংলগ্ন কান্দুবস্তী গ্রামের লিটন নামের এক স্কুল ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করেও পাথর খেকোদের থামানো সম্ভব হচ্ছেনা। এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর ও বালু লুটপাটের সাথে জড়িদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। সরকারী বিধি নিষেধ থাকা সত্বেও যারা অবাধে জুমপাড়সহ অপরাপর জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করে পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের সৌন্দর্য বিনষ্ট করছেন তাদের বিরুদ্ধে শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।