নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৯, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান বলেছেন, সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না৷ আমাদের ব্যর্থতা ও জনবল স্বল্পতা রয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। এখানে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়।
শনিবার দুপুরে গাজীপুর শহরে জিএমপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।
জিএমপি কমিশনার বলেন, সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের ওপর ছিল। আমরা প্রিভেন্ট করতে পারিনি। প্রিভেনশন সব সময় করা যায় না। বিশ্বের কোনো দেশ ক্রাইম একেবারে শূন্যতে নিয়ে আসতে পারেনি। তাই, আমাদের শত চেষ্টার পরেও ক্রাইম হয়ে যেতে পারে। যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, বাদশা নামের এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এ সময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারেন, তখন তার কাছ থেকে ছুটে যেতে চান এবং কিল-ঘুষি মারেন৷ এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকেন৷ এটি সাংবাদিক (আসাদুজ্জামান তুহিন) তার পেশাগত কারণেই ভিডিও করেন। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলিট করতে বললে তিনি রাজি হন না। একপর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়৷ সিসিটিভি ফুটেজে আমরা ৮ জনকে চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ বাকি একজনকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারব৷
জিএমপি কমিশনার জানান, সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—জামালপুরের মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর এলাকার মোবারকের ছেলে মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তার স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং সুমন নামের একজন।
তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধের চিত্র ধারণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক। তাকে হত্যাকারী আসামিদের পিএম রিপোর্ট পেলেই চার্জশিট দেওয়া হবে ১৫ দিনের মধ্যে। দ্রুত সময়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে ক্রাইম দমন করা যাবে।আসামিরা যদি নাও স্বীকার তবে, এভিডেন্সই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে।
যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারার দায় নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার। তিনি নিহত আসাদুজ্জামান তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে ক্রাইম বেড়ে যায়। এটা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। এছাড়াও আগের রেজিম এই জেলায় শক্তিশালী। সেই দলটি গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করছে। সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে। এই নজরদারি করতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তবে, মানুষের স্বস্তি ফেরাতে কাজ করছে জিএমপি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাতজনের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বাকিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।