ফেনী প্রতিনিধি
আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম
ফেনীর পাঁচ সাংবাদিকের ওপর আচমকা হামলার পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে করা তাদের পরিকল্পনা গোয়েন্দা তৎপরতায় ফাঁস হয়েছে।
এ ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় বাসস ফেনী সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ‘একতাই শক্তি’ নামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফেনীর পাঁচ সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে।
এদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমান, দৈনিক ফেনীর সময়ের প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম, এখন টিভি প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম ও এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার জাহিদুল আলম রাজন।
সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়, ৮ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাতে জানা যায়, ‘একতাই শক্তি’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কয়েকজন সদস্য কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছেন। গ্রুপের এক সদস্য সাইফ উদ্দিন লিখেছেন, “আমাদের উচিত গাজীপুরের মতো মিডিয়ার ট্রায়ালটা নেওয়া। এই সুযোগে আমাদের ফেনীর সময়ের শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজনের যেকোনো একটির বিরুদ্ধে সুযোগ নেওয়া দরকার। এখন বিএসএল নিয়ে আসবে না, সব বিএনপির ওপর যাবে।”
অন্য সদস্য সাহেদ অভি লিখেছেন, “এই আরিফ আজম ও শাহাদাত হোসেনদের পা চাটতো আমাদের নেতারা। আরিফ আজম ফেনী কলেজের সামনে নোবেলদের মিছিলের ছবি প্রকাশ করেছে, সবাইকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে। তার ও সম্পাদক শাহাদাতের ১০ বছর পরেও ছাড় নেই। মাটির যত নিচে থাকুক তুলে নিয়ে আসবো। তার সঙ্গে এনটিভির রাজন, যমুনার আরিফসহ সকলকে দেখবো।”
নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, সাইফ উদ্দিন মানিক, ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আবুল হাসনাত তুষার, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার রনি, সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সহ অন্যান্য সদস্যরা ‘একতাই শক্তি’ গ্রুপে এই ধরনের আলোচনা করেছেন। গ্রুপের সদস্যরা গাজীপুর স্টাইলে আচমকা হামলা, কোপাই-কুপাই এবং নির্দিষ্ট সাংবাদিকদের বাড়ি-ঘরে রাতের আঁধারে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করছেন।
গ্রুপের এডমিনরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নূর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার ও কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন শওকত কিরণ, জিমান শুভ, এ এইচ তুষার, জোবায়েদ আকাশ, তৌফিক চৌধুরী, হৃদয় ভূঁঞা, আকাশ আহাম্মেদ, মো: রাকিব, দিলারা সুলতানা মিলা, নিজাম পাটোয়ারী, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, ইকবাল হোসেন বাবলু, লিও চৌধুরী, মো: রোমান, রবিউল হক ভূঁঞা, রবিন, এখলাছ উদ্দিন খন্দকার, রাকিব অর্ণব, ইয়াছিন আরাফাত রাজু, রায়হান হাবিব খাঁন শাকিল, রাকিব আহম্মদ তাহান, মামুন আড্ডা, মো: রিয়াদ হোসেন রিয়াদের নাম জানা গেছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান, গোয়েন্দা তৎপরতায় আগেই এ পরিকল্পনার খবর পাওয়া গেছে। উল্লেখিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে। প্রাপ্ত তথ্য সাইবার সেলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখিত গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্য ফেনীতে হত্যা ও বিভিন্ন মামলায় পলাতক।
ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন, হামলার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ায় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ফেনী জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফেনীর গণহত্যায় জড়িতরা পলাতক অবস্থায় থেকে নানা ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সাংবাদিকদের ওপর এ ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
সাংবাদিক ইউনিয়ন ফেনী সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। তাদের ওপর হামলা ও হুমকি-ধামকি পেশার প্রতি হুমকি স্বরূপ। রাষ্ট্রের উচিত অপরাধীর পরিচয় না দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, না হলে গণমাধ্যম হুমকির মুখে পড়বে, যা কারো জন্যই ফলপ্রসূ হবে না।
ইএইচ