ইবি প্রতিনিধি
জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৮:০৯ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদ আবদুলাহ নামের এক শিক্ষার্থীর ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
উদ্ধারকৃত লাশ সাজিদ আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলে।
জানায় যায়, বেলা দেড়টার দিকে পুকুরের মাঝখানে কিছু একটা ভেসে উঠতে দেখেন। তবে মানুষের দেহ কী না কেউ নিশ্চিত করতে পারেন না।পরে বিকেল পাঁচটার দিকে লাশটি পুকুরপাড়ের দিকে এলে হলে থাকা শিক্ষার্থীরা সেখানে ভিড় করেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তবে সাঁতার জানতেন বলে নিশ্চিত করেছেন সহপাঠীরা। এ নিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু বলছেন সহপাঠী ও স্বজনরা।
পুকুরপাড়ের দোকানদার আকমল বিশ্বাস ভাষ্য, বেলা একটার দিকে তিনি পুকুরে কিছু একটা ভেসে থাকতে দেখেন। প্রথমে ময়লার স্তূপ মনে করেন। পরে আসরের নামাজের আগে সেটি কিনারার দিকে এলে লাশের বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন অন্য লোকজন আসেন।
নিহতের এক বন্ধু ইনসাফ জানান, ‘আমি গতকাল দিনাজপুরে গিয়েছিলাম। তার সাথে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত ছিলাম। রাত থেকে কল দিয়ে যাচ্ছি বন্ধ। তবে সকালে কেউ একজন কল রিসিভ করে কথা বলেননি।’
এদিকে সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এবং গায়ের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। বাম হাতের কব্জির ওপর ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে চামড়া ছেড়ার মতো আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে বুক, পেট, পিঠ, কোমর থেকে পা পর্যন্ত শরীরের অংশ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যৌনাঙ্গ ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসক ডা. সেলিম।
এদিকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসারত ডা. সুতপা রায় জানান, ‘প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে পিঠের লান্স ফেটে ডুবে গিয়ে মারা গেছে। ডুবে যাওয়ার সিম্পটম পাওয়া গেছে। তবে পোস্টমর্টেম করানোর পর বিস্তারিত জানা যাবে’
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে অবস্থানরত মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ'র পুকুরে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের লক্ষ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
এর আগে শুক্রবার প্রথম নামাজে জানাজা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। টাঙ্গাইলে দ্বিতীয় জানাজার উদ্দেশ্য রওনার সময় লাশবাহী গাড়ি আটকিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত মুচলেকা নেয়া হয়। সাজিদের মৃত্যুর বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা সহ ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করবে।
হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী, সদস্য সচিব একই হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.হ.ম. নুরুল ইসলাম ও সদস্য হিসেবে থাকছেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বারী।
সাজিদের বাবা বলেন, ‘রহস্যজনক মৃত্যু মনে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের অনুরোধ জানাচ্ছি। সাজিদ অনার্সের ফর্ম জন্য টাকা চেয়েছিলো কিন্তু টাকা পাঠাতে একটু দেরি হচ্ছিল। সাজিদের সাথে শেষ কথা হয় গত বুধবারে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, রিপোর্ট পেলেই আমরা প্রকৃত ঘটনাটি জানতে পারবো। সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা) অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করা হবে।’
প্রসঙ্গত, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে আজ সন্ধ্যায় কয়েক দফা দাবি সহ সংবাদ সম্মেলন করেছেন ‘সোচ্চার’ নামক সংগঠন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬তম ব্যাচ (সংবর্ত-৩৬) সংবাদ সম্মেলন করেন।
ইএইচ