ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

ওরা ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার!

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

ডিসেম্বর ২৩, ২০২২, ০৫:০৫ পিএম

ওরা ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার!

পৃথবীর সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি হয়েই আসছে। কিন্তু এসব হত্যার ভেতর কিছু হত্যাকাণ্ড সত্যিই ভয়ংকর। পৃথিবীর বুকে এ রকম নৃশংস খুনের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। সেসব খুনের বর্ণনা দেওয়া লোমহর্ষক ব্যাপার। শুধু একটা নয়, খুনিরা একের পর এক খুন করে নিজেদের নাম লিখিয়েছে সিরিয়াল কিলার হিসেবে।

 সিরিয়াল কিলার কাকে বলে? 
যে একটার পর একটা খুন নির্বিঘ্নে সংগোপনে চালিয়ে যেতে পারে তাকে সিরিয়াল কিলার বলে। সিরিয়াল কিলাররা সাধারণত রাগ, উত্তেজনা, অর্থের প্রভাব ইত্যাদি কারণে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে থাকে। চলুন জেনে নিই পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ংকর কয়েকজন সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে-

এরশাদ শিকদার: বাংলাদেশের ইতিহাসে সিরিয়াল কিলারদের ভেতর তার নাম স্মরণাতীত। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনায়। পরবর্তীতে ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে সে খুলনায় চলে আসে জীবিকার সন্ধানে। প্রথম দিকে সে কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এরপর আস্তে আস্তে ছোটখাটো চুরিচামারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় রাঙ্গা চোরা নামে ডাকতে থাকে সবাই। চুরি করতে করতে একসময় যোগ দেয় খুনিদের সঙ্গে। একের পর এক খুন করতে থাকে সে। রাজসাক্ষী হয়ে আদালতকে নূরে আলম জানায়, কমপক্ষে ৬০টি খুন করেছে সে। আদালতের কাছে সে ২৪টির হুবহু বর্ণনা তুলে ধরে। এরশাদ শিকদারের ছয়টি বিয়ের কথা জানা যায়। বহু নারীর নির্যাতনের খবরও দেয় নূরে আলম। সে জানায়, কৌশলে মিষ্টি ব্যবহার করে নারীদের তার আস্তানায় এনে নির্যাতন চালাত এরশাদ শিকদার। ১৯৯৯ সালে যখন সে গ্রেপ্তার হয়, তখন তার নামে মামলা ছিল ৩টি। এরপর তার নামে আরো ৪৩টি মামলা দায়ের করা হয়। সাতটি মামলায় তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয় নিম্ন আদালতে। চারটি মামলায় হয় যাবজ্জীবন। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা আদালতে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।  

জাভেদ ইকবাল মুঘল: পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া জাভেদ পুরো উপমহাদেশের খুনিদের সম্রাট। ১৯৫৬ সালে ৮ অক্টোবর পৃথিবীকে কলুষিত করার জন্যই এই ঘৃণ্য ব্যক্তির আগমন ঘটে। নৃশংস এই খুনির হাতে প্রায় ১০০ শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। শুধু হত্যা নয়, সে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নও চালাত। মানুষ হত্যায় তার রুচি ছিল বিকৃত। ১৯৯৮ সালে দুজন বালককে যৌন হয়রানি অভিযোগে সে প্রথম গ্রেফতার হয়। কিন্তু প্রশাসন তাকে কিছুই করতে পারেনি। আইনের দেয়াল টপকে সে ঠিকই বের হয়ে আসে। তখনো পর্যন্ত তার ভয়াবহের খবর পৌঁছায় মানুষের কানে। জেল থেকে বের হয়ে সে নিজের কুকর্মগুলো চালাতে থাকে দেদার। সহজে মানুষকে পটাতে সে ছিল ওস্তাদ। মিশুক প্রকৃতির এই খুনির ভাষা ছিল খুব মিষ্টি। তার কথার জালে আটকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করত সে। হত্যার পর সে লাশগুলোকে টুকরো টুকরো করে কাটত। খণ্ডাংশগুলো ফেলে না দিয়ে হাইড্রোলিক অ্যাসিডভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে সেটাকে গলিয়ে তরল বানিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন অথবা নদীতে ফেলে দিত। পুলিশ যখন তার বাড়িতে রেট দেয়, তখন সেখান থেকে উদ্ধার করে ভয়ংকর সব জিনিসপত্র। ঘরের ভেতরে পাওয়া যায় অপরাধে ব্যবহৃত ব্যাগ, ছুরি, অনেকগুলো ছবি, রক্তাক্ত জিনিসপত্র ও অ্যাসিডের বোতল। তার ঘরের সমস্ত দেয়াল জুড়ে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, ‘আমি জাভেদ ইকবাল। ১০০ শিশুর হত্যাকারী। এই পৃথিবীকে আমি ঘৃণা করি। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। এসব কাজের জন্যে আমি মোটেই লজ্জিত কিংবা অনুশোচনায় ভুগছি না।’ জাভেদের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে এসব খুন ও যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখ আছে। বিচারে তাকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেওয়া হয়। এবং এইসব বিভীষিকাময় খুনের বর্ণনা শুনে বিচারক জানায়, ফাঁসির রায় তার জন্যে কমই হয়। এর সঙ্গে তাকে ১০০ বার ছুরিকাঘাত ও তার লাশকে ১০০ টুকরো করে অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখতে বলেন তাকে। কিন্তু ফাঁসির রায় কার্যকর হবার আগেই কারাগারে ছুরিকাহত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সে আত্মহত্যা করেছিল। সালটা ২০০১। দিনটা ছিল ৭ অক্টোবর।

চার্লস শোভরাজ: ৭৮ বছর বয়সী শোভরাজ একজন ফরাসি নাগরিক। তার বাবা ভারতীয় এবং মা ভিয়েতনামী। ‘ছদ্মবেশ’ ধারণের অবিশ্বাস্য কৌশলের কারণে তাকে ‘সার্পেন্ট’ বা সরীসৃপ নামেও ডাকা হতো। ১৯ বছর নেপালের জেলে থাকার পরে ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেলেন আদতে ফরাসী নাগরিক চার্লস শোভরাজ। মুক্তির পরে তাকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট। চার্লস শোভরাজের বিরুদ্ধে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে অন্তত ২০জনকে খুন করার অভিযোগ আছে। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত রিচার্ড নেভিল ও জুলি ক্লার্কের লেখা চার্লস শোভরাজের জীবনী ‍‍`দা লাইফ এন্ড ক্রাইমস অফ চার্লস শোভরাজ‍‍` বইতে এই সিরিয়াল কিলারের অপরাধগুলির বিস্তারিত লেখা হয়েছে। বিবিসি ও নেটফ্লিক্স ২০২১ সালে চার্লস শোভরাজকে নিয়ে একটি সিরিজ করে ‍‍`দা সার্পেন্টোইন‍‍` নামে। তার শিকারদের মৃতদেহগুলির মধ্যে অনেককেই বিকিনি পড়া অবস্থায় পাওয়া যায়, তাই তার আরেক নাম বিকিনি কিলার। সুদর্শন এই পুরুষ মূলত হত্যা করতেন পশ্চিমা পর্যটকদের, যারা সস্তায় বিশ্ব ভ্রমণ করে বেরায়, সেই সব ‍‍`ব্যাকপ্যাকার‍‍`দের। তাদের কাছে থাকা অর্থ তো হাতিয়ে নিতেনই তিনি, আর সঙ্গে নিহতদের পাসপোর্টগুলোও সংগ্রহ করতেন। বিভিন্ন দেশে অন্তত ২০টি খুনের অভিযোগ ছিল চার্লস শোভরাজের বিরুদ্ধে।

টেড বান্ডি: তাকে বলা হয় আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। ইতিহাসে স্বরণীয় এই সিরিয়াল কিলারের জন্ম ১৯৪৬ সালে। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অসংখ্য নিরপরাধ তরুণীকে খুন করে সে। টেড দেখতে অত্যন্ত সুদর্শন ছিল। তার ভিকটিম তরুণীদের সাথে তার পরিচয় হতো পাবলিক প্লেসগুলোতে। যে তরুণীকে সে টার্গেট করত, তার সামনে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার ভান করত কিংবা একজন পুলিশম্যানের অভিনয় সাজাতো সে।তার গাড়িতে সবসময় শাবল থাকত। যার মাধ্যমে ভিকটিমকে মারা হত। মেরে ফেলার আগে ভিকটিমকে টেড ধর্ষণ করত। মেরে ফেলার পর তরুণীর সাথে আবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করত সে! পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি তরণীকে খুন করে টেড। পরবর্তীতে তাকে ইলেক্ট্রিক্যাল চেয়ারে শক দিয়ে মারা হয়।

জেফরি ডাহমার: আমেরিকার সিরিয়াল কিলিঙের ইতিহাসে জেফরি ডাহমারও ভয়ঙ্কর একটি নাম! তার সিরিয়াল কিলিং জীবনে অসংখ্য মানুষ খুনের স্বীকার হয়। যাদেরকে সে নিজের বাসায় নিয়ে যেত এবং নির্মমভাবে হত্যা করত। প্রায় সব ভিকটিমকেই মারার পর তাদের অঙ্গহানি করা হতো। তাদের মাথার খুলি সে সাজিয়ে রাখত! কখনোবা মৃত ভিকটিমের মাংস খেত সে! পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে একজন ভিকটিম পালিয়ে যেতে পারায়। তারপর জেফরি-কে ৯০০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়! কিন্তু জেলের ভেতর সে আত্নহত্যা করে।

এলেকজান্ডার সলোনিক: রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই খুনোখুনিতে হাত পাকায় সে। দুই হাতে পিস্তল পরিচালনা এবং মল্লযুদ্ধে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য তাকে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর আবার সে তার পুরনো পেশায় ফিরে যায়। দুই হাতে অস্ত্র পরিচালনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে হলিউডে তৈরি হয় “হিটম্যান এজেন্ট-৪৭” সিনেমা সিরিজটি। রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুবাধে “এজেন্ট-৪৭”, “সুপারকিলার”- নামগুলো নিজের করে নেয় সে।

জন জর্জ হাই: ‘অ্যাসিড গোসলের হত্যাকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিল সে। হত্যার পর সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে লাশটিকে ডুবিয়ে রাখত পচে যাওয়ার জন্য। অ্যাসিডে ঝলসে দিয়ে সেটাকে প্যাকেটবন্দি করে ফেলে দিত। তার সব সময় একথা মনে হতো যে, পুলিশ তাকে কখনো ধরতে পারবে না। লাশকে সে এমনভাবে গুম করে ফেলত যে, তার বিরুদ্ধে প্রমাণ বা অভিযোগ আনা বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনো ব্যক্তিকে খুন করার পর সে তার সমস্ত সম্পত্তি ভোগদখল করত। সম্পদ দখলের এই আইডিয়া তার মাথায় আসে ১৯৪৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ওই সময়ে সে কাজ করত লন্ডনের গুলিসিস্তার সড়কে কিংস্টনের সম্পদশালী ব্যক্তি উইলিয়াম ম্যাক শোয়ানের বাড়িতে। ম্যাকের মা-বাবাকে দেখাশোনা করার কাজ ছিল তার। এরপর উল্লেখ্য তারিখে জর্জ শোয়ানের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে ড্রামের ভেতর ৪০ গ্যালন সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে তার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিল। দুদিন পরে লাশটাকে উঠিয়ে ম্যানহোলে ফেলে দেয় সে। ইংল্যান্ডের অলিতেগলিতে তার পাশবিক নির্যাতন চালনা করতে থাকে সে। অবশেষে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারকার্য চালনা করে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয় ১৯৪৯ সালের ১০ আগস্ট। বিচারের সময় তার বিরুদ্ধে ৬ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হলেও মূলত সে হত্যা করেছিল ৯ জনকে। ইতিহাসের জঘন্যতম এই সিরিয়াল কিলারের জন্ম ১৯০৯ সালের ২৪ জুলাই, ইংল্যান্ডে।

জ্যাক দ্য রিপার: পরপর ১১টা খুন করে সিরিয়াল কিলারের খাতায় নাম লেখান জ্যাক দ্য রিপার। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের চারপাশ জুড়ে তার এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হয় ১৮৮৮ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত। লোকচক্ষুর আড়ালে, প্রশাসনের চোখকে উপেক্ষা করে আজীবন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে একের পর এক খুন করে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে সবাইকে। সর্বশেষ মিডিয়ায় তোলপাড় তোলে তার স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠির মাধ্যমে। লন্ডনের সেন্ট্রাল নিউজের কাছে সব খুনের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে এই চিঠি পাঠায় সে। চিঠি দিলেও কেউ তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে ইতিহাস বলে, সেই সময়ের চিফ কনস্টেবল ম্যালভিল ম্যাকনাগটেন জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে তিনজন ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলেন। তার মধ্যে প্রথম জন, এম. জে ডরুয়িট। প্রথম জীবনে তিনি ব্যারিস্টার ছিলেন, পরে শিক্ষক। তালিকায় দ্বিতীয় জন হলেন অ্যারন কসমিনিস্কি নামের এক সাধারণ ইহুদি। তৃতীয় জন হিসেবে যার নাম প্রকাশ পায়, তিনি হলেন একজন উন্মাদ লোক, নাম মাইকেল ওস্ট্রং। কিন্তু এ সন্দেহ নিছকই সন্দেহ-ই থেকে গিয়েছিল কারণ কোনোটার পক্ষেই জোরালো প্রমাণ ছিল না। তুখোড় ডিটেকটিভ ফেডারিক এভারলিনও সন্দেহ করেছিলেন সেভেরাইন ক্লোসোস্কি এলিস জিওর্গি চেপম্যানকে। সেটাও কোনো কাজের হয়নি। অমূলক সন্দেহ। এরপর সন্দেহের তির একাধিক ব্যক্তির দিকে নিক্ষেপ হলেও সবই ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। সুতরাং চিরটাকালই জ্যাক দ্যা রিপার বন্দি রইল বই ও সিনেমার রুপালি পর্দায়। তাকে ও তার খুনগুলোকে নিয়ে তৈরি হয়েছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা এমনকি ভিডিও গেমস। পূর্ব লন্ডনের সেসব খুন করা স্থান এখনো দর্শানার্থীরা ভিড় করে দেখার জন্য। জানা যায়, রিপার যাদের হত্যা করেছিল তারা বেশির ভাগ পতিতা। যৌনকর্ম করার সময় শ্বাসরোধ করে হত্যা করাই ছিল তার নেশা। ঠিক কতজনকে রিপার হত্যা করেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান আজও অপ্রকাশিত।

পেদ্রো লোপেজ: ৮ অক্টোবর, ১৯৪৮। ইকুয়েডরে জন্ম নিল এক ভয়ংকর কিলার। পেদ্রো লোপেজ তার নাম। ধারণা মতে, ১১০-৩০০ ব্যক্তিকে খুন করা এই খুনি প্রথম মিডিয়ার আলোচনায় আসে ১৯৮০ সালের ৯ মার্চ। অগণিত ধর্ষণের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর ভিকটিমকে জবাই করত সে। এরপর রক্ত দিয়ে ধুতো হাত। লন লেইটন্যার নামের এক ফ্রিল্যান্সার স্থানীয় এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এসব খবর জানান দেন। সেটা ছিল ১৩ জুলাই, ১৯৮০, রোববার। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর ষোল বছর জেল হয় তার। তবে কর্তৃপক্ষ তার ভালো আচরণের জন্য দুই বছর সাজা মাফ করে দেয়।

লুইস গারাভিতো: কলম্বিয়াতে পশু নামে পরিচিত সে। প্রায় ৪০০ খুনের মধ্যে অধিকাংশ ছিল পথশিশু। তবে আদালতে প্রমাণিত ভিকটিম সংখ্যা ১৩৮। জানা যায়, বেশির ভাগ খুন ১৯৯০ সালে ঘটায় সে। ধরা পড়ার পর কলম্বিয়া আদালত তাকে ৩০ বছর সাজা দেয়। তবে লাশ শনাক্তকরণে সাহায্য করাতে তাকে সাজা কমিয়ে ২২ বছর করা হয়। এতে করে সাধারণ জনগণ খেপে গিয়ে আলাদা প্রসিকিউশন দাবি করে। গণমাধ্যমগুলোও চাপ দিতে থাকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আগের সাজাই বলবৎ থাকে। কলম্বিয়ার পশু নামে খ্যাত গারাভিতো ১৯৫৭ সালে ২৫ জানুয়ারি কলম্বিয়াতে জন্মগ্রহণ করে।

জিল দ্য রাই: ১৪০৪ সালে ফ্রান্সে জন্ম নেয় এই খুনি। আধুনিক সিরিয়াল কিলারদের গুরু বলা হয় তাকে। বালক শিশু, ব্লন্ড চুল ও নীল চোখ দেখলেই তাদের খুন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ত সে। সে নিজেও ছোট থেকে ব্লন্ড চুল ও নীল চোখে অধিকারী ছিল। শিশুদের সঙ্গে যৌন অত্যাচার করে সে হত্যা করত তাদের। হত্যা করার পর সেটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলত। পরিসংখ্যান বলে প্রায় ৮০-২২০টির মতো খুন করেছে জিল। এরমধ্যে নিজ হাতে করেছে ১০০টির মতো। শিশুদের বয়স ছিল ৬-১৬ এর মধ্যে। শিশুদের তার কাছে ধরে নিয়ে আসত চাকর হ্যানরিয়েট। প্রথমে তাদের ওপর  যৌন অত্যাচার করে এরপর একটি রুমে নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করা হতো। আরো ভয়ংকর খবর হলো জিল এসব শিশুদের রক্ত দিয়ে গোসল করত। হ্যানরিয়েট যখন বাচ্চাদের ওপর অত্যাচার করত জিল সেটা শুনে আনন্দে অট্টহাসি দিত। একের পর এক শিশুকে হত্যা করে রক্তমাখা জামা-কাপড় পুড়িয়ে শান্তি পেত তারা। ফিনকি দিয়ে যখন বাচ্চাদের শরীর থেকে রক্ত বের হতো, জিল তখন সেই রক্ত গায়ে মেখে উল্লাসে ফেটে পড়ত। সিরিয়াল কিলারের খাতায় নাম লেখানোর আগে সে সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ছিল। অবশেষে জিলকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪৪০ সালে ২৬ অক্টোবর রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তখন তার বয়স ৩৬।

রিচার্ড ট্রেটন সেচ: খুনের পর রক্ত ও মাংস খেত ট্রেটন। এই কারণে তাকে ‘ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো’ নামে পরিচিতি লাভ করে সে। ১৯৭৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৫১ বছর বয়সি ইঞ্জিনিয়ার এমরোস গ্রিফিনকে দিয়ে শুরু করে তার হত্যাকাণ্ডের জীবন। তার দ্বিতীয় শিকার টেরেসা ওয়ালিন নামক এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। তাকে হত্যা করার পর তার সঙ্গে নাকি যৌনকাজে লিপ্ত হয়েছিল সে। এমনকি রক্ত দিয়ে গোসলও করে রিচার্ড। এরপর তার নিকটতম প্রতিবেশী ৩৮ বছর বয়সি ইভেলিন মিরোথকে গুলি করে হত্যা করে। মেরিডিটথ ও তার পুরো পরিবারকে গুলি করে মেরে তাদের রক্ত ও মাংস খায় রিচার্ড। এর মধ্যে ছিল, মেরিডিটথের ৬ বছরের পুত্র জেসন, ২২ বছর বয়সি ভাগ্নে ডেভিড। বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পাশে চার্চে ফেলা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি দেখে ফেলে। সেই তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেয়। ওই ব্যক্তির স্বাক্ষর ও রিচার্ডের আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। অবশেষে ১৯৮০ সালের ৮ মে তাকে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের  নির্দিষ্ট তারিখের আগে ২৬ ডিসেম্বর তাকে মৃত অবস্থায় সেলে পাওয়া যায়। ডাক্তারি রিপোর্টে জানা যায়, অতিরিক্ত নেশাজাতীয় ওষুধ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে। কুখ্যাত এই খুনি ১৯৫০ সালের ২৩ মে আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করে।

 

Link copied!