ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad
ট্রাম্পের কাছে নালিশ নিয়ে মুখ খুললেন প্রিয়া সাহা

‘আযানের ধ্বনিতে আমি শিশুকাল থেকেই আতঙ্কে ছিলাম’

ইমা এলিস, নিউইয়র্ক

ইমা এলিস, নিউইয়র্ক

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ১১:১৬ এএম

‘আযানের ধ্বনিতে আমি শিশুকাল থেকেই আতঙ্কে ছিলাম’
ছবি: সংগৃহিত

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ থেকে ‘৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু নিখোঁজ’ নালিশের ব্যাপারে এবার মুখ খুললেন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও এনজিওকর্মী প্রিয়া সাহা।

২০১৯ সালের ১৭ই জুলাই হোয়াইট হাউজে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে এক সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে যে নালিশ করেছিলেন প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর তার ব্যাখ্যা দিলেন প্রিয়া সাহা। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস। 

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের’ এক সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে প্রিয়া সাহা প্রায় সাড়ে ৪ বছর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে সেই নালিশের ব্যাখ্যা করেন।

২০১৯ সালের ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না, থাকতে চাই।’ ট্রাম্প তখন বলেন, ‘বাংলাদেশ?’ জবাবে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে ওই বাংলাদেশি নারী আরও বলেন, ‘এখনো সেখানে এক কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে থাকতে আমাদের সহযোগিতা করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’

তখন ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, ‘কে জমি নিয়ে গেছে?’ উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলো। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে আসছে।’ কেন তিনি এসব কথা ট্রাম্পকে বলেছিলেন তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলেন প্রিয়া সাহা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রিয়া সাহা বলেন, আমার পূর্বপুরুষ মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা তালুকদার, বা ছোট জমিদার ছিল। তাদের অনেক জমি ছিল। এখন পর্যন্তও আমাদের ৩শ’ একর সম্পত্তি রয়েছে আমার বাপ-দাদাদের। যে জমিটা এই মুহূর্তে দখল করে খায় রাজনৈতিক সবচাইতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে। বিষয়টি রাজনৈতিক নেতারা জানেন।

তিনি বলেন, একটি গ্রামকে কীভাবে সিস্টেম্যাটিকভাবে উচ্ছেদ করে তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের গ্রাম। কী কী করা হয় সেখানে, ধরেন যখন ফসল হয় আমরা রাতে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই বলে যে আযানের ধ্বনি শুনলে তাদের মন ভালো হয়ে যায়, আর আমি আঁতকে উঠি। কারণ ভোর রাতে তারা গরু ছেড়ে দিতো, আযানের পর তারা হয় ফসল কেটে নিয়ে যাবে, নয়তো আক্রমণ করবে। আযানের ধ্বনিতে আমি শিশুকাল থেকেই আতঙ্কে ছিলাম। সকাল হলেই মনে হয় এই বুঝি আক্রমণ করলো। আমাদের জায়গার ওপর একশতটি চিংড়ির ঘের আছে, চিংড়ির ঘের থেকে অনেক টাকা আয় হয় তা সকলেই জানেন।

সেই চিংড়ির ঘেরগুলো তারা দখল করে নিলো। ২০০৪ সালে যখন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীরা ক্ষমতায়, সে সময় আমার বাবার জমির ওপর বিশাল ইটের ভাটা করলো। কত মামলা-মোকদ্দমা করা হলো। কেউ শোনে না। এখনও দুটি ইটভাটা আছে, ইট কাটা হয় এবং এই ইট দিয়ে বাগেরহাটে সকল কন্সট্রাকশন কাজ করে। পিরোজপুরে সে বড় কন্ট্রাক্টর এবং আমার বাবার জায়গার ওপরে সেই ইটের ভাটা।

প্রিয়া বলেন, তারা আমাদের ঘের থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাবে। আমাদের বিধবা জেঠিমা ছিলেন, জেঠির একটি গরু ছিল, গাভি, স্বামী মারা গেলে সেটি বাবার বাড়ি থেকে দিয়েছিল, গাভিটি প্রসবের কাছাকাছি ছিল। তেমনি অবস্থায় গাভিটি জবাই করে খেয়ে ফেলে এবং বাছুরটা ভাসিয়ে দেয় নদীতে। কিন্তু তার কোন বিচার হয়নি। 

তারপরে, আমাদের অঞ্চলে (পিরোজপুর) বানিয়ারি নামে একটি গ্রাম আছে, সেই গ্রামে দুই/তিন বছর পরপরই একজন মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই পাড়ায় বৈষ্ণব বাড়ির একটি ছেলেকে মেরে ফেললো। হত্যার পর সুপারি গাছে চারদিকে চার হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় লাশটি। ছেলেটির চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। সেই বৈষ্ণব পাড়ায় দেড় শতাধিক হিন্দু পরিবার ছিল, ঐ ছেলেটিকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার বীভৎস দৃশ্য দেখে ৬ মাসের মধ্যে পুরো বৈষ্ণব পাড়ার সকলে ভারতে চলে গেল। এর তিন বছর পর আরেকজনকে হত্যা করা হয় পার্শ্ববর্তী পাড়ায়। তারও চোখ উঠিয়ে মধ্যবানিয়ার পাড়ার যে সবচেয়ে ধনী পরিবার, তাদের বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে ওই লোকটির লাশ চুবিয়ে রাখলো, শুধু মুখটা পানির ওপরে। যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের সকলেই চেনে।

শেখরা করে, মোক্তাররা করে, মোল্লারা করে-সকলেই তা জানে। এরপর তিন বছর পার হতে না হতেই উত্তর বানিয়ারিতে ঘরে ঢুকে আমার এক কাকাতো ভাইকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে। সে ছিল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তার স্ত্রীও শিক্ষক। তাদের দুটা বাচ্চা। তার ঠাকুরদাও প্রাইমারি শিক্ষক ছিল। এই যে, মানুষ হত্যা করে ক্রমান্বয়ে একটি আতঙ্ক তৈরি করে। তার কোনো বিচার হয় না। আমার গ্রামে আমার এক কাজিন-ব্রাদার বীরেন বিশ্বাসকে দিনের বেলায় পিটিয়ে হত্যা করলো মোল্লারা, তারও কোন বিচার হয়নি।

তিনি উল্লেখ করেন প্রতিটির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেই মামলা হয়েছে। আমাদের অঞ্চলের মানুষেরা মামলা করতে খুব জানে। কিন্তু ওই যে, যেই জজ, সেই পুলিশ, সেই উকিল, সরকারি উকিল, ফাইনালি কিছু হয় না।

এভাবেই প্রথমত: ফসল কেটে নেয়া, দ্বিতীয়ত: কিছুদিন পরপরই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা, তৃতীয় যে কাজটি করে তারা সেটি হলো ফলস মামলা দেয়া। আমাদের গ্রামে এমন অনেক ব্যক্তি আছে, আত্মীয়-স্বজন মানে বংশের লোক, তাদের বিরুদ্ধে ৫০, ৬০, ৭০টি পর্যন্ত মামলা দেয়া হয়। সবগুলোই ফলস। এ ধরনের মামলা দিয়ে বছরের পর বছর সহজ-সরল লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। অর্থাৎ বছরের বড় একটি সময় কোর্টে অতিবাহিত করার পরিবর্তে অনেকে ইন্ডিয়ায় চলে গেছেন।

২০১৯ সালের ১৭ই জুলাই হোয়াইট হাউজে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে সেই নালিশের পর প্রিয়া সাহা  আর দেশে ফিরেননি। ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি এনজিওর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করেন বলে এই সমাবেশে উল্লেখ করেন প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।

সংগঠনের প্রধান রামদাস ঘরামির সার্বিক তত্ত্বাবধানে সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. প্রভাত চন্দ্রদাস। আলোচনায় অংশ নেন শিতাংশু গুহ, অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, ড. দীলিপ নাথ, সোকরানী ধনপাত ও সবিতা দাস প্রমুখ।

এআরএস

Link copied!