জুন ২১, ২০২৫, ১০:৫০ এএম
উত্তর ইরানের সেমনান প্রদেশে ৫ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কারণ, ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে ইরানের অত্যন্ত গোপনীয় ও কৌশলগত স্থাপনা—সেমনান স্পেস সেন্টার ও মিসাইল কমপ্লেক্সে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সেমনান শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরতায়। এ ধরনের অগভীর ভূকম্পন সাধারণত প্রাকৃতিক হলেও কিছু ক্ষেত্রে পারমাণবিক বিস্ফোরণ বা অস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে বলে মনে করেন ভূকম্প বিশেষজ্ঞরা।
ভূমিকম্প না কৃত্রিম বিস্ফোরণ?
এই প্রশ্ন সামনে এসেছে মূলত ভূমিকম্পের সময় ও স্থান বিবেচনায় নিয়ে। ভূমিকম্পটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের দ্বন্দ্ব চরমে এবং দু’পক্ষ সামরিক হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে সেমনানের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় একটি ভূমিকম্প আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে পড়েছে।
ইরানের ভূকম্পন কি গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প ও ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণের তরঙ্গের ধরনে কিছুটা পার্থক্য থাকে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ও বিভিন্ন ভূকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এ কম্পনের ধরন বিশ্লেষণ করছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান এটিকে নিশ্চিতভাবে পারমাণবিক পরীক্ষা বলছে না, তবে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
সামরিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলেই কম্পন কেন?
সেমনান ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তি কেন্দ্র। এখান থেকেই ইরান স্পেস লঞ্চ ভেহিকল উৎক্ষেপণ করে এবং এখানেই রয়েছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সুবিধা। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই অঞ্চলের ওপর নজর রেখে চলেছে। ফলে এই ভূমিকম্প প্রকৃতিই কি না—তা নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষ করে, ইরান বর্তমানে একাধিক নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ও বহু ওয়ারহেডযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ চালাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই ভূমিকম্পকে কেউ কেউ একটি কভার বা ‘ডিকয়’ হিসেবেও দেখছেন, যার আড়ালে কিছু বড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়ে থাকতে পারে।
ইসরায়েল-ইরান বৈরিতা ও পারমাণবিক দ্বন্দ্ব
এই ভূমিকম্পের মাত্র একদিন আগে ইরান ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে মুখোমুখি হন। সেখানে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও পারস্পরিক হুমকির ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ দাবি করলেও বাস্তবে এটি গোপনে বিস্তার করছে।
এ প্রেক্ষাপটে ভূমিকম্পের বিষয়টি অনেকে কাকতালীয় বললেও অন্যরা এটিকে সম্ভাব্য পারমাণবিক বা মিসাইল সম্পর্কিত পরীক্ষার পরোক্ষ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
সতর্ক নজরে সেমনান
যদিও সেমনানে ভূমিকম্পে কোনো হতাহতের খবর এখনো পাওয়া যায়নি, তবে এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব ও সামরিক সংযোগের কারণে এটি আরেকটি সাধারণ ভূকম্পন হিসেবে নেওয়া যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আইএইএ ও যুক্তরাষ্ট্র, এখন বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যদি এটির সঙ্গে কোনো গোপন অস্ত্র পরীক্ষা বা সামরিক কৌশল যুক্ত থাকে, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিপজ্জনক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
বিআরইউ