Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪,

র‌্যাবের গুলিতে পঙ্গু

ট্রাইব্যুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিমনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ১২, ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম


ট্রাইব্যুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিমনের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও মেজর রাশেদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন ১৩ বছর আগে গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির লিমন হোসেন।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে এসে লিমন এ অভিযোগ দায়ের করেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “১৩ বছর ধরে আমি ও আমার পরিবার হয়রানির শিকার হয়ে আসছি। একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করলাম। একটি মামলায় এ যাবত পাঁচবার নারাজি দিয়েছি এবং দুই/তিনবার রিভিউ আবেদন করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সুরাহা পাইনি।

“আমি ও আমার পরিবার ২০১১ সালের পর থেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের কর্তৃক বারবার হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। তাই আমি ও আমার পরিবারের সকলের নিরাপত্তা চাই রাষ্ট্রের কাছে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তিনি।

র‌্যাবকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “আমার পক্ষ থেকে বিলুপ্তির দাবি জানাচ্ছি। র‌্যাব- এর কতিপয় সদস্য আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে।”

২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা লিমনকে গুলি করে।

তখন র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, লিমন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোর্শেদ জমাদ্দারের সহযোগী। মোর্শেদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর সময় কলেজছাত্র লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) চিকিৎসা চলাকালে লিমনের বাঁ পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়।

ওই ঘটনায় লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল ঝালকাঠির আদালতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তই এখনো শেষ হয়নি।

সে সময় বরিশাল র‌্যাব-৮ এর উপ-সহকারী পরিচালক-ডিএডি লুৎফর রহমান, কর্পোরাল মাজহারুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. আব্দুল আজিজ, নায়েক মুক্তাদির হোসেন, সৈনিক প্রহ্লাদ চন্দ এবং কার্তিক কুমার বিশ্বাসসহ অজ্ঞাতনামা আরও ছয় র‌্যাব সদস্য ওই মামলার আসামি।

র‌্যাবের ভাষ্য ছিল, অভিযান চালানোর সময় কিশোর লিমন গুলিবিদ্ধ হন। তবে লিমন বলছেন, র‌্যাবের সদস্যরা তার হাঁটুতে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছিলেন।

লিমনকে গুলি করে উল্টো তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুটি পৃথক মামলা দিয়েছিল র‌্যাব। মামলায় তার কাছ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের অভিযোগ আনা হয়। মামলাগুলোতে লিমনের বয়স লেখা হয়েছিল ২৫ বছর। অথচ বিদ্যালয়ের সনদ অনুযায়ী তখন লিমনের বয়স ১৬ বছর তিন মাস।

পুলিশ দুই মামলাতেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে মামলা বিচারের জন্য আদালতে যায়। এক পা নিয়ে লিমনকে ঘুরতে হয় আদালতে। ২০১৩ সালে আদালত মামলা দুটি খারিজ করে দেয়।

ওই সময় দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা লিমনের পাশে দাঁড়ান। বিচারের দাবি উঠতে থাকে সারা দেশে। ঢাকা, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন স্থানে লিমনের মুক্তি ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

লিমনের পায়ে গুলি করা হয়েছিল তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েকদিন আগে। তাই ওই বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। পরের বছর পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এরপর সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষক।

আরএস

Link copied!