ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

বিশ্বব্যাপী তেল-গ্যাস সংকটে আমাদের করণীয়

খালিদ হাসান

খালিদ হাসান

আগস্ট ৭, ২০২২, ০৬:২৭ পিএম

বিশ্বব্যাপী তেল-গ্যাস সংকটে আমাদের করণীয়

গত সপ্তাহে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠাান গ্যাজপ্রোম নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলানের সরবরাহ ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ফলে গোটা ইউরোপ এখন গ্যাস সংকটে পতিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। ফলে সংকটকালীন আসন্ন শীতকালের প্রয়োজন বিবেচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো স্বেচ্ছায় ১৫ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।

গত এক বছরে ইউরোপে ৩৭ ইউরো থেকে বেড়ে বর্তমানে ২০৫ ইউরোতে ঠেকেছে প্রতি মেগাওয়াট ঘণ্টা গ্যাসের দাম। ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি জার্মানির প্রায় ৬০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকায় জার্মানিতে বিকল্প উপায় হিসেবে তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সেখানে জ্বালানি তেলের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

এদিকে গত বুধবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে গ্যাসের দাম সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে ভর্তুকির মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত রাখা হলেও সরকার একাধিকবার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। সরবরাহ কমে এপ্রিল মাস নাগাদ যুক্তরাজ্যে গ্যাসের দাম গত বছরের চেয়ে ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিল মাস থেকে বাসাবাড়ির বাৎসরিক জ্বালানি বিল ৭০০ ইউরো থেকে দুই হাজার ইউরোতে ঠেকেছে। তবে এ বছরের শেষ নাগাদ তা বেড়ে তিন হাজার ইউরো ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পেট্রল ও ডিজেলের দামও রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুন মাসে পেট্রলের দাম বেড়ে হয়েছে ১৮৪ পাউন্ড, এক বছর আগে যা ছিল প্রায় ১৩০ পাউন্ড। দাম বৃদ্ধির ফলে সেখানে পেট্রল ও ডিজেল বিক্রি ৪.৩ শতাংশ কমে গেছে। তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ইউরোপজুড়ে মূল্যস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৪ শতাংশে, গত ৪০ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। আমেরিকার নিজস্ব গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মজুদ থাকার ফলে সেখানে সংকট তৈরি হয়নি।

তবে আমেরিকার তেলের মজুদ কমায় ও গ্যাসোলিনের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি দুই ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় আমেরিকাতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশেরও বেশি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি আমেরিকার শিল্পোৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এরফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির হার কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অস্ট্রেলিয়াতে গত বছরের তুলনায় জ্বালানির দাম প্রায় ১২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্ভাব্য জ্বালানি সংকটের কথা মাথায় রেখে দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী সেখানকার পাঁচটি রাজ্যেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে জানিয়ে এখন থেকেই নাগরিকদেরকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে পশ্চিমা ধনী দেশগুলো জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি সফলভাবে মোকাকিলা করতে পারলেও এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকান দেশগুলোতে জ্বালানি সংকট থেকে নানা ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে এপ্রিল মাস থেকে দাম বৃদ্ধি মোকাবিলায় সরকার জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিয়ে আসছে, যা আগস্ট মাসে উঠিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে।

ফলে জ্বালানি তেলের দাম ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডরসহ লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে জ্বালানি সংকটের ফলে একদিকে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে সেখানকার পাম্পগুলো পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে তেলের মূল্যহ্রাস ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতের দাবিতে লাতিন আমেরিকারজুড়ে গাড়িচালকরা বিক্ষোভ করেছে। রিজার্ভ সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কা কয়েক মাস যাবত অন্ধকারাচ্ছন্ন আছে।

গ্যাস সংকটে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, কলকারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ আছে, তেলের অভাবে পেট্রল পাম্পগুলোতে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না তেল। বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্যের কারণে পাকিস্তান গতমাসে তেল ও গ্যাস আমদানির নতুন চালান স্থগিত করেছে। জুলাই মাসে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ২৩৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে দেশটির অর্থনৈতিক সমন্বয় পরিষদ। গ্যাস সংকটে ২৫ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশটির পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদন পাঁচ হাজার মেগাওয়াট কমেছে।

দেশজুড়ে দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকছে। দেশটির তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছে এ মুহূর্তে জ্বালানি সাশ্রয় ছাড়া কোনো উপায় নেই। সেখানে কর্মদিবস ও কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনাসহ জ্বালানি সাশ্রয়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জ্বালানি তেলের ভর্তুকি বাতিল করে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে ডিজেলের দাম ৬৬ শতাংশ ও পেট্রলের দাম ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি আরও আট রুপি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য ইউরোপ খোলাবাজারের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। ফলে এশিয়ার গ্যাস আমদানিকারক দেশগুলোর প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার ধনী দেশগুলোর মধ্যেও খোলা বাজার থেকে গ্যাস কেনার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে বর্ধিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে খোলা বাজারে গ্যাসের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সপ্তাহেই এশিয়াতে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ শতাংশ। একইসাথে জ্বালানি তেলের দাম ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশকেও বর্ধিত দামে গ্যাস ও তেল আমদানি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, সংস্থাটি বছরে ৬২ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে, যার মধ্যে ৪০ লাখ টন ডিজেল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ থেকে ১০৫ ডলারে উঠানামা করছে।

অন্যদিকে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের ওপরে উঠলেই লোকসান গুনতে হয় বিপিসিকে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে দাম স্থিতিশীল থাকায় সরকারি এই সংস্থাটি প্রতিদিন লোকসান গুনছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। গ্যাস উত্তোলন ও আমদানির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা আছে ৩৭০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে সংস্থাটি প্রতিদিন সরবরাহ করতে পারে ৩০০ কোটি ঘনফুট, যার মধ্যে আমদানিকৃত গ্যাসের পরিমান ৭০-৮০ কোটি ঘনফুট।

২০২০ সালে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ছিলো মাত্র চার ডলার, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ ডলারে। ফলে খোলাবাজার থেকে প্রায় ২৫-৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে আগের মতো আমদানি বহাল রাখতে হলে সরকারকে আরও বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

এদিকে কোভিডের ধাক্কা সফলভাবে সামলে উঠলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে খোলা বাজার থেকে বর্ধিত মূল্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও দ্রুত কমে যাবে।

তাই লোকসান কমাতে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমানোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে নিয়মিত লোডশেডিং করা হচ্ছে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বছরের শেষ নাগাদ ডিজেল ও পেট্রলের দাম প্রতি লিটারে ১৫-২০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও প্রতি ব্যারেলে প্রায় ২০ ডলার ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উত্তোলনে জোর দেয়ার কথা বলে আসলেও সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নেও বাংলাদেশ খুব বেশিদূর যেতে পারেনি। তাই বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে তাল মেলানো ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। ফলে আমদানি হ্রাস, দাম বৃদ্ধির মতো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি সাশ্রয়ই এখন একমাত্র উপায়।

তবে শিল্প-কারখানায় জ্বালানি সংকট যাতে না হয় সেদিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হলে মূল্যস্ফীতিসহ আরও কঠিন সমস্যায় নিপতিত হবে দেশ। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় তেল ও গ্যাসের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ও নির্ভরযোগ্য উৎসের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও সন্ধান জোরদার করতে হবে।

লেখক : সংবাদকর্মী ও গবেষক

Link copied!