ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ আর কত দূর!

মো. আতিকুর রহমান

মো. আতিকুর রহমান

আগস্ট ২৭, ২০২২, ০২:৪৬ পিএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ আর কত দূর!

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বিশ্ব মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সৃষ্ট বিশাল এক মানবিক সংকট প্রত্যক্ষ করে। সহিংস হামলার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসে, যাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এটি সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রবেশ করা মানুষের নজিরবিহীন এক ঢলের সূচনা করেছিল। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের খোঁজে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির উদার সমর্থন এবং বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে বহুজাতিক সহায়তা প্রচেষ্টার কারণে একটি মারাত্মক মানবিক সংকট এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।

গত ২৫ আগস্ট, রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস পালিত হলো। শরণার্থী জীবনের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের খোলা মাঠে সমাবেশ করে। সমাবেশে গণহত্যা দিবসে স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে মোনাজাত করে রোহিঙ্গারা। এতে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা উপস্থিত ছিল। সেই সমাবেশে শিশুদের হাতে হাতে নিজ দেশ মিয়ানমারের পতাকা দেখা গেছে। ফেস্টুনে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট টু ব্যাক হোম’ লেখা ছিল।

রোহিঙ্গা শিশুরা জানায়, তারা নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, সেখানে খেলতে চায়, পড়তে চায়। তারা সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে চান। রোহিঙ্গারা এদেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। তাদের এই চাওয়ার বিপরিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কতদূর যা একপ্রকার থমকে গেছে বললেই চলে, যা দুঃখজনক। বাস্তবতা  মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না। এমন এক পরিস্থিতি দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহির্বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর জোরালোভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

বর্তমানে দিন যতই যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাস, মাদকের ভয়াবহ গ্রাসে আমাদের ভূখণ্ডকে চরম  অস্থির করে তুলছে। এমন এক বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানাতে হবে তারা যেন রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, ক্যাম্পে কিছু সংঘাত সংঘর্ষ তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করছে। রোহিঙ্গারা তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিচার ও নিজ দেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের  কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করি।

বিপরীতে যদিও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার এবং প্রত্যাবাসন শুরু করতে সহায়ক মাধ্যমগুলোতেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে সরকার দাবি করছে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরেও মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া অর্জন করতে পারেনি, যা দুঃখজনক। যদিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যাও বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সংকট।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, প্রতিবছর ক্যাম্পগুলোতে ৩০ থেকে ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। ফলে বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা, যা দেশকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাপিত করছে, যা দুঃখজনক। বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, যা সার্বিক জনসংখ্যার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সদস্য রয়েছে, যারা বাংলাদেশে এসে পৃথিবীর আলো দেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে নজর রাখতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনার দিকেও। যদিও ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছে ঢাকা, যা ইতিবাচক। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া দলিলও তৈরি হয়েছে এবং দ্রুতই এটি চূড়ান্ত হবে এমনটি প্রত্যাশা করি।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৩ জন। এ জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১২১টি পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা শতকরা ৫২ শতাংশ। আর পুরুষের সংখ্যা শতকরা ৪৮ শতাংশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে-এটাই বাংলাদেশের প্রধান অগ্রাধিকার। আর এটি তারা (রোহিঙ্গা) ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। প্রত্যাবর্তন না হওয়ার বিষয়টি যেমন উদ্বেগের, তেমনি রোহিঙ্গা জনসংখ্যা যে প্রতি বছর বাড়ছে সেটিও উদ্বেগের। যে কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টিতেও জোর করা দরকার। সেজন্য জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চাওয়া দরকার বলে মনে করি।

বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা বা কাজ চলমান থাকলেও রোহিঙ্গাদের যে জীবনমান তাতে করে তাদের দিয়ে সহজে এ কাজে ফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করি। এটা অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। যেমন উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথাই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণে আজকের যে অবস্থান সেটা করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।  যদিও শুরুতে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের খুব নেতিবাচক ধারণা ছিল। নেতিবাচক আচরণ ছিল কিন্তু দৃশ্যমান বাস্তবতায় বলতে হয় এখন তা নাই বললেই চলে যা দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ বলে মনে করি।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে ধারনা করছি বর্তমা ১১ লাখ রোহিঙ্গা আছে, তার সঙ্গে যদি প্রতি বছর ৩৩ হাজার করে বাড়তে থাকে তাহলে এটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার। দ্রুত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিভিল সার্জন, এনজিও এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্য যারা আছে সবার একটাই টার্গেট রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনা কীভাবে জোরদার করা যায় এবং কিভাবে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা।

যদিও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না আসায় রোহিঙ্গাদের তহবিলে টান পড়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই তহবিলে জমা পড়েছে মাত্র ৪২৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, শতকরা হিসেবে যা জাতিসংঘের প্রস্তাবিত অর্থের মাত্র ৪৯ শতাংশ। যা দুঃখজনক।

এমন এক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান নিরাপত্তা এবং অধিকারসহ তাদের নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার বক্তৃতায় এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গত তিন বছরে আলাপ–আলোচনা, চুক্তি সই, তালিকা বিনিময় ইত্যাদির ফলে এ ক্ষেত্রে সামান্যতমও কোনো অগ্রগতি হয়নি, যা আমাদেরকে হতাশা করে।

যদিও গত বছরে দুটো ইতিবাচক কাজ হয়েছে এ ক্ষেত্রে, তা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধে জড়িত মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা। তবে আইনি প্রক্রিয়া একটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এমনকি মিয়ানমার যদি গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ও, সঙ্গে সঙ্গে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরত যেতে পারবে, বিষয়টি তেমন সরল নয় বলে মনে করি।

এক্ষেত্রে আমাদেরকে দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়াটি চালু রাখতে হবে, যাতে বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে না—এ মিথ্যা অভিযোগের সপক্ষে মিয়ানমার কোনো রসদ না পায়। কোভিড মহামারিতে থমকে যাওয়া দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আবার কীভাবে শুরু করা যায়, তা সংশ্লিষ্টদের  ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করি। এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি বিষয় এড়িয়ে যেতে হবে সেটা হচ্ছে দু–পাঁচ শ পরিবারের টোকেন প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি। যেহেতু রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে ফেরত যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাদের এই বিষয়টি জোড়ালো ভাবে তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের ফেরতের তালিকায় রাখা হবে তারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইবে না। কারণ, তারা জানে সেখানে তাদের জন্য কোনো নিরাপদ পুনর্বাসন অপেক্ষা করছে না। তাই মূল বিষয় হবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাপ সৃষ্টি করা, যাতে সব শরণার্থী নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত যেতে পারে। সেই কাজে মিয়ানমার সরকার বা সেনাবাহিনীকে বাধ্য করা জরুরী।

কূটনৈতিক পর্যায়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে মহামারি এবং মহামারি–উত্তর অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত পৃথিবী যেন রোহিঙ্গাদের ভুলে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা এবং তাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনের প্রতিকারের বিষয়টিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়াটা জরুরী বলে মনে করি।

সবশেষে সমস্যা সমাধানে দীর্ঘসূত্রতায় আশাহত হলে চলবে না। আমাদের মেনে নিতে হবে যে এ সংকট নিরসনে ১০, ১৫ বা ২০ বছর লেগে যেতে পারে আর সে জন্য মানসিক এবং বাস্তব প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের । আমাদের দেখতে হবে যে শরণার্থীরা যেন একটা সহনীয় জীবন যাপন করতে পারে, সেই সঙ্গে এই এলাকার স্থানীয় মানুষের সমস্যা সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ ও বিরূপ মনোভাব নিরসন করা যায়।

আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। আমরা চাইনা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইজরায়েলে পরিণত হোক। আমরা চাই দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যমান উদ্যোগ। আর এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে এবং আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের অধিক সদিচ্ছা জরুরী।

লেখক : কলামিস্ট এবং সাবেক প্রধান পিআরডি, বিইউএফটি

আমারসংবাদ/এসএম

Link copied!