ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

লুক ইস্ট পলিসি: আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা

ড. সাবেরা চৌধুরী

ড. সাবেরা চৌধুরী

এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০২:০১ পিএম

লুক ইস্ট পলিসি: আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা

মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়াই মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় এবং এটি কেবল বাণিজ্যের মাধ্যমেই সম্ভব। ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে, বাণিজ্যই জাতিসত্তার জীবনরেখা। পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ বাড়ছে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি এবং লাখ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার চালিকাশক্তি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য । এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতির উন্মুক্ততা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরনের সফলে উদাহরণ।

গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ আমদানি বাণিজ্য নীতি থেকে রপ্তানিমুখী বাণিজ্য নীতিতে যাওয়ার চলে গেছে কারণ এটি দেখা গেছে যে রপ্তানি হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ইঞ্জিন।

৭০-এর দশকে পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ (কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর) রপ্তানিমুখী বাণিজ্য নীতিকে ব্যাপক মাত্রায় গ্রহণ করার জন্য আমদানি নীতি সংস্কার করে। এর ফলে যেসব সম্ভাবনা এবং সুবিধা তৈরী হয়েছে তা পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিকে উন্নয়নের জন্য একটি যৌথ গোষ্ঠী গঠনের জন্য উৎসাহ দিয়েছে।

এটি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের জন্ম দেয়। বর্তমানে, আসিয়ানের ১০টি সদস্য দেশজুড়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন-চীন কৌশলগত প্রক্সি প্রতিযোগিতা সমগ্র অঞ্চলজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রতিটি পক্ষই নিজেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হিসেবে তুলে ধরতে আগ্রহী।

চীন অনেক আগেই এই অঞ্চলের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলেছে। চীনের একচ্ছত্র শক্তি নিয়ে অস্বস্তি এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার কার্যক্রম দিন দিন বাড়াচ্ছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) হল বাইডেনে প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক চাল হলেও এখনো এটি স্পষ্ট নয় যে এটি একটি নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পুরানো খেলায় ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না।

এক্ষেত্রে আসিয়ান সদস্যদের ভূমিকা এবং তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রর আলোচনার কৌশলই শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যত গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করছি।

আসিয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশ ‘লুক ইস্ট পলিসি’ গ্রহণ করেছে। আসিয়ানের সঙ্গে ভৌগলিক নৈকট্য বাংলাদেশকে আসিয়ানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি বৃহত্তর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো গত তিন দশকে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে সদস্য রাষ্ট্রটি আগামী বছরগুলিতে আরও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

লুক ইস্ট পলিসি আমদানি সহজ করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি আসিয়ানের বাজারে ধাক্কা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২০ সালে আসিয়ান (ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম) থেকে আমদানির পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বাংলাদেশের রপ্তানি গন্তব্য মূলত ইইউ এবং নাফটা দেশগুলোর দিকে। তবে সীমিত কিছু দেশে রপ্তানি প্রবণতায় কিছু ঝুঁকি রয়েছে।

বিদ্যমান অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য প্রত্যাহার করা হলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমান ইইউ এবং মার্কিন বাজারের উপর অত্যধিক নির্ভরতা একটি বৈচিত্র্য বিরোধী নীতি হিসাবে কাজ করতে পারে।

আসিয়ান থেকে আমদানি কয়েক বছর ধরে তীব্রভাবে বেড়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সালে আমদানি ছিল ৫৭৬৮৯ মিলিয়ন টাকা যা ২০০৯-১০ সালে বেড়ে ২,৯২,৯৬৬ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। কয়েক দশক ধরে আসিয়ান থেকে আমদানির বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪৪ শতাংশ, ২৩.৫৯ শতাংশ এবং ৫.৮ শতাংশ। ১৯৯৯-০০ থেকে ২০০৯-১০ এর মধ্যে রপ্তানি মাঝারিভাবে বেড়েছে ৩৯২১ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৯৬২৬ মিলিয়ন টাকা। রপ্তানির শতাংশের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। গত এক দশকে আসিয়ানে রপ্তানি গড়ে ১.৮৯ শতাংশ, ১.৬৪ শতাংশ, ১.৪৫ শতাংশ এবং ২.২৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। আসিয়ানে রপ্তানির গড় বৃদ্ধির হার হয়েছে ১.৬ শতাংশ।

আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের ‘লুক ইস্ট পলিসি’ এর মূল দেশ। আসিয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কেন্দ্রীভূত।

বাংলাদেশের রপ্তানি তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল বাজার থাকা সত্ত্বেও অতীতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ডিজিটাল বাণিজ্য একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র যেখানে আসিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বৃহত্তর ডিজিটাল আন্তঃব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংগত করে ডিজিটাল বাণিজ্য ধারাগুলোকে কার্যকর করা গেলে এই অঞ্চলের এসএমই খাত বৈশ্বিক মুনাফা অর্জনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আসিয়ানের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নাতীত। বাংলাদেশ তার বিকাশমান আইসিটি সেক্টর থেকে আইসিটি বিশেষজ্ঞদের রপ্তানির জন্য আসিয়ান ডিজিটাল হাবে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিছু আসিয়ান সদস্য বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে।

উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্ব রাজনীতিকদের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন থেকে বুঝা যায় যে কিছু আসিয়ান সদস্য নিজেদের সক্ষমতা জাহির করতে শুরু করছে এবং বিশ্বমঞ্চে বড় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। সুতরাং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষেয়ে ‘আসিয়ান কী মনে করে এই মতামতটি সামনের বছরগুলোতে আরও ঘন ঘন উচ্চরিত হবে। এমন একটি সম্ভাব্য পটভূমিতে বাংলাদেশের উচিত এমন একটি পথ খোলা রাখার চেষ্টা করা যাতে দক্ষিণ পূর্ব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাংলাদেশী পণ্যগুলির জন্য একটি নতুন গন্তব্য তৈরি করতে পারে।

আসিয়ানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য সম্পর্ক শুধু বাণিজ্য ও বিনিয়োগই বাড়াবে না, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জন্যও উপকৃত হবে। বাংলাদেশ যদি আসিয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করতে পারে তাহলে উভয় দেশই লাভবান হবে। পশ্চিমা বিশ্বে রপ্তানির নির্ভরতা কমাতে হলে আমাদের পূর্ব দিকে তাকাতে হবে, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে নতুন বাজার তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ আসিয়ানের সঙ্গে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য সংযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে আসিয়ানে রপ্তানির শতাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়নি। আসিয়ানে রপ্তানির গড় শতাংশ হয়েছে ১.৬ শতাংশ যখন আমদানি হয়েছে ১৬ শতাংশ।

রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি এবং বাণিজ্যের ভারসাম্য আসিয়ানের অনুকূলে। তাই বাণিজ্যের প্রতিকূল ভারসাম্য বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। রপ্তানি/আমদানি গড় হল মোট রপ্তানির সঙ্গে মোট আমদানির অনুপাত। এতে বুঝা যায় যে আসিয়ানে বাংলাদেশের রপ্তানি/আমদানি অনুপাত সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের মোট আমদানি অনুপাতের চেয়ে কম। এতে বোঝা যায় রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি। শুধুমাত্র রপ্তানি বৃদ্ধিই ব্যবধান পূরণ করতে পারে।

আসিয়ানে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শুল্ক সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে। মানসম্পন্ন পণ্য, অপ্রচলিত পণ্য, জনশক্তি সরবরাহ, পর্যটন, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সেবা খাতের মাধ্যমে আসিয়ান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো, সড়ক, রেলপথ ও গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর বিধ্বংসী প্রভাব সত্ত্বেও, বাংলাদেশ সেই মুষ্টিমেয় দেশগুলির মধ্যে একটি যারা তাদের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি দেখেছে এবং বিশ্বব্যাংকের ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স ২০২০-এ ৮ নম্বরে উঠে এসেছে।

এ সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের দক্ষতার জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ তার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রগতির মধ্যে একটি উদীয়মান এশিয়ান তারকা হয়েছে। ২০১৭-২০১৯ সময়কালে এর অর্থনীতি ৭.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বিশ্বব্যাপী খুব কম দেশগুলির মধ্যে একটি হিসেবে ২০২০ সালে ২.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিল। চীন প্লাস ওয়ান কনসেপ্ট ছাড়াও সাপ্লাই চেইন হিসেবেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ আসিয়ান ও সার্কের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। অবশেষে আসিয়ানের সাথে এফটিএ করার জন্য জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন। যদি তা অর্জন করা না যায়, বাংলাদেশ আসিয়ানের ১১তম সদস্য হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

লেখক : সিনিয়র গবেষক, সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা

 

Link copied!