Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

৩ জন নিহত, তবুও মাঠে বিএনপি!

আবদুর রহিম

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৮:০৩ পিএম


৩ জন নিহত, তবুও মাঠে বিএনপি!

দুই সপ্তাহে বিএনপির ৩ নেতা নিহত ও ২ হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ২শ জনের অধিক। নাম উল্লেখ করে আসামী করা হয়েছে ৪ হাজার ৮১ জনকে। অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ২৫ টি স্থানে। বাড়িঘরে-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থানে। দুই সপ্তাহ আগে নিত্যপণ্যে মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচী পালনরত অবস্থায় ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হয়। সর্বশেষে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচীতে যুবদল নেতা শাওন নিহত হয়। সারা দেশে গত ২২ আগষ্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতেও বিএনপি এবার মাঠ ছাড়ছে না। সারাদেশে কর্মসূচীতে নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করছেন কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভোলায় দুই নেতা ও নারায়াণগঞ্জে একজন গুলিতে নিহতের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সারা দেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচীতে আওয়ামী নেতাকর্মীদের বাধা ও পুলিশের হামলার ঘটনায় রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ মাঠ ছাড়বে না। আবার বিএনপিও এবার কাউকে খালি মাঠে গোল দিতে দেবে না। এ পরিস্থিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত শনিবার সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচীতে বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে।  ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীরা বিএনপির উপর হামলার চালিয়েছে। এতে প্রায় ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়।

দুই সপ্তাহে বিএনপির কর্মসূচীতে ঘটনা 
নূরে আলম,আব্দুর রহিম ,শাওন  নিহত, আহত ২ হাজারের অধিক, গ্রেপ্তার ২শ জনের অধিক।
নাম উল্লেখ করে আসামী ৪০৮১ জন , অজ্ঞাত আসামী প্রায় ২০ হাজার,১৪৪ ধারা জারি ২৫ টি স্থানে।
বাড়িঘরে-ব্যাসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা ৫০ টি স্থানে

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় পুলিশ ও আওয়ামী নেতাকর্মীদের হামলায় হামলায় প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে আহত দুই জনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলেও দাবী তোলা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এছাড়া দেশব্যাপি অনেক নেতাকর্মীর বাসায় হামলা চালানো হয়েছে বলেও বলছে বিএনপি।

বিএনপির দপ্তর সূত্রের ভাষ্য, শান্তিপূর্ণভাবে সারা দেশে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মসূচী পালন করে আসছে। এই কর্মসূচীতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও সমর্থন দেখে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের ভিতরে কিছু সদস্য ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপরে স্বশস্ত্র হামলা করে নিহত, আহত ও পঙ্গু করছে। এছাড়াও নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘর,ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যপক ক্ষতিসাধন করছে। এই হামলা থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না।

গত ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ বিশেষ করে নারায়নগঞ্জ, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল,মুন্সিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ,লক্ষীপুর, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট, ব্রাক্ষনবাড়ীয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও ময়মনসিংহে হতাহত ও গ্রেপ্তার হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপির দপ্তর ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দাবি, গত ১৫ বছরে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগ ও পুলিশ গুম, খুন,নির্যাতন করেছে বলে দাবী তোলা হচ্ছে। ২০১১ সালে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে পুলিশ গুলি করে আহত করেন। সেই সময় বিরোধী দলের চীপ হুইপ জয়নাল আবেদীনকে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন হয়। ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচনের সময় বাংলা মটোরসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে হামলা হয়েছে।

এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দেশে গণবিরোধী, সরকার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষদের হত্যা, আহত, গ্রেপ্তার যে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন তা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। হত্যাকারী এবং হামলাকরীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি, অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার জন্য সরকারকে আহ্বান জনাচ্ছি। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে কোন দলের সদস্য হিসাবে কাজ না করে দেশের সংবিধান রক্ষা এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করার অনুরোধ করছি। সরকার যদি এই অশুভ তৎপরতা বন্ধ না করে জনগণের যে ঐক্যের আন্দোলন শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে গণবিষ্ফরণে পরিণত হবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে এই সকল অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার করা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী নেতাকর্মীর উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সু শাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেছেন, রাজনীতি হচ্ছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়। কিন্তু গুলি করে হামলা করে নির্যাতন করে গণতন্ত্র রক্ষা হয় না। অতীতেও যারা এমন করেছেন তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। বর্তমানে যারা গুলি ও হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন ভবিষ্যতে তাদের পরিণতি ভালো হবে না।

এআর/ইএফ

Link copied!