Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মানসিক অবসাদ থেকে রক্ষায় পাঁচটি আমল

আমার সংবাদ ধর্ম ডেস্ক

মার্চ ৭, ২০২৩, ১২:৫৮ এএম


মানসিক অবসাদ থেকে রক্ষায় পাঁচটি আমল

আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, আল্লাহ আমাদের জন্য (তাকদিরে) যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট আমাদের স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহরই ওপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’

(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৫১)

বর্তমান সময়ে অনেক তরুণ মানসিক অবসাদে ভুগছে। এর ক্ষতি ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। যে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সে মানুষ যখনই সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে অন্য পথে দৌড়ায় তখনই সে নানা ধরনের অবসাদে ভুগতে থাকে। অন্তরে যখন দ্বিনের আলো না থাকে তখন তার হূদয়রাজ্যে এক ধরনের হাহাকার কাজ করে। বুকের জমিনে কালবৈশাখী ঝড় এসে মনে হয় সব তছনছ করে দেয়। তার জীবন ও সময় বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকে। ভ্রষ্টতার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সত্যের আলোকময় জগতে প্রবেশ করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভোগে মানুষ বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো রোমহর্ষক রাস্তা। মানুষের জীবনে নানা ধরনের মুসিবত আসবে। সব কিছু নিজের মনমতো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিছু বিষয়ে যদি নিজেকে অভ্যস্ত করে নেওয়া যায় তাহলে আশা করা যায় ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাবে। যেমন 

তাওয়াক্কুল

আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা রাখা। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং এ কথা বিশ্বাস করা যে আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা অবধারিত। আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, আল্লাহ আমাদের জন্য (তাকদিরে) যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট আমাদের স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহরই ওপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৫১)

এ জন্য অনুকূল-প্রতিকূল যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আর আল্লাহ থেকে নিরাশ না হওয়া। কেননা নিরাশ মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোনো একসময় আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে ছিলাম। তিনি বললেন,...আর জেনে রেখো, যদি সব উম্মত তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অন্যদিকে যদি সব উম্মত তোমার কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজও শুকিয়ে গেছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)

কর্মব্যস্ত থাকা

অবসাদ থেকে বাঁচতে নিজেকে সব সময় ব্যস্ত কোনো কাজ করা কিংবা কোনো আমলে নিভৃত থাকা। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহর জন্য সর্বদা সজীব থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)

দোয়া করা

কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়ার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা। কারণ আল্লাহর জিকির অন্তর প্রশান্তির অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরা সেই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখো, শুধু আল্লাহর জিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ (সুরা : আর-রাদ, আয়াত : ২৮) আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে কোরআনে কারিমকে আল্লাহ তাআলা মুমিনের জন্য আরোগ্যস্বরূপ নাজিল করেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করবেই আল্লাহ তাআলার অন্তরে প্রশান্তি দান করবেন। তার তৃষ্ণার্ত, উদ্বেলিত হূদয়ে জিকির হবে এক ফোঁটা পানির মধ্যে যা অন্তরকে মুহূর্তেই শীতল করে দেবে। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে তাদের জন্য এটা হিদায়াত ও উপশমের ব্যবস্থা।’ (সুরা : হা-মিম আস-সিজদাহ, আয়াত : ৪৪) এখানে কোরআনের দুটি গুণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এক. কোরআন মানবজীবনের হিদায়াতের জন্য পথপ্রদর্শক, দুই. কোরআন আরোগ্যদানকারী।

দরুদ পাঠ করা

প্রিয় নবীর ভালোবাসা হূদয়ে ধারণ করে রাসুলের প্রতি বেশি পরিমাণে দরুদ পাঠ করা। এর মাধ্যমে মানুষের মানসিক অবসাদ ঘোচাতে সাহায্য হবে। প্রভাতের সুনসান নীরবতায় ঝিরঝির একটু বাতাস যেভাবে মনকে দোলা দিয়ে যায়, ঠিক সেভাবে এই দরুদ তার মনকে আনন্দিত করে তুলবে।

উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে জেগে দাঁড়িয়ে বলতেন, হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করো, তোমরা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করো। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙাধ্বনি। মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। উবাই (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি তো খুব বেশি পরিমাণে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরুদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করব? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইছা করো। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা করো, তাহলে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরুদ পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরুদ পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা করো, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভালো। আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার দরুদ পাঠে কাটিয়ে দেব? তিনি বললেন, তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপ ক্ষমা করা হবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)

বেশি বেশি এই দোয়া পড়া

আসমা বিনতে উমাইস (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেব না, যা তুমি বিপদের সময় পাঠ করবে? তা হচ্ছে, ‘আল্লাহু আল্লাহু রাব্বি লা উশরিকু বিহি শাইয়ান।’

অর্থ : আল্লাহ! আল্লাহ! আমার রব্ব! তাঁর সঙ্গে আমি কাউকে শরিক করি না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২৫)

Link copied!