Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

রোজা পালনে নবীজির আদর্শ

আমার সংবাদ ধর্ম ডেস্ক

মার্চ ২০, ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম


রোজা পালনে নবীজির আদর্শ

মুসলমানদের প্রতিটি কাজের আদর্শ উদাহরণ মহানবী (সা.)। পবিত্র মাহে রমজান তিনি কীভাবে কাটাতেন, সেটা জানা আমাদের জন্য জরুরি। আমাদের সিয়াম সাধনা পালন করতে হবে তাঁরই সুন্নাহ মোতাবেক। চলুন জেনে নিই নবীজি (সা.) কীভাবে রমজান কাটাতেন।

সাহরিতে নবীজি (সা.) : সাহরি খাওয়া একটি সুন্নত আমল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে রয়েছে বরকত’ (বুখারি : ১৯২৩)। রাসুল (সা.) কখনো স্ত্রীদের সঙ্গে, কখনো সাহাবিদের সঙ্গে সাহরি করতেন (বুখারি : ৫৬৭)। তার সাহরিতে আড়ম্বরপূর্ণ কোনো আয়োজন ছিল না, ছিল অনাড়ম্বর। ঘরে যা থাকত তা দিয়েই সাহরি খেয়ে নিতেন। কখনো খেজুর, কখনো শুধু পানি। 

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাহরি খাওয়া নির্দিষ্ট একটি বরকতের বিষয়। তোমরা সাহরি খাওয়া ছাড়বে না। যদি তোমাদের কেউ এক ঢোক পানিও পাও, তবু তা দিয়ে সাহরি করে নেবে। কারণ মহামহিম আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সাহরি খাওয়া ব্যক্তির জন্য দরুদ পড়েন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩/১২)

রমজানের দিনে নবীজি (সা.) : সাহরির পর যখন ফজরের আজান হতো, নবী (সা.) ফজরের সুন্নত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন। দিনের আলো ভালোভাবে ফুটলে রাসুল (সা.) রমজান ও রোজা-সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান দিতেন। বিভিন্ন কাজে উৎসাহ প্রদান ও নানা কাজ হতে নিষেধ করতেন। রোজা অবস্থায় তিনি সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে থাকার উপদেশ দিতেন। 

নবীজি (সা.) লাকিত বিন সাবিরা (রা.)-কে বলেছেন, ‘তোমরা ভালোভাবে নাকে পানি পৌঁছাও, তবে রোজা অবস্থায় নয় (অর্থাৎ রোজা অবস্থায় হালকাভাবে পানি পৌঁছাও, অতিরঞ্জন করো না)’ (আবু দাউদ : ২৩৬৩)। রাসুল (সা.) রোজা অবস্থায় মেসওয়াকের খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন। অন্যদের উৎসাহ দিতেন। যেন নিজের মুখে দুর্গন্ধ তৈরি না হয় ও অন্যে কষ্ট না পায়।

আমের বিন রাবিয়া (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে রোজা অবস্থায় এত বেশি মেসওয়াক করতে দেখেছি, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না’ (আত তালখিসুল হাবির : ১/৯)। প্রচণ্ড গরমে রোজা অবস্থায় রাসুল (সা.) কখনো কখনো গরমের প্রচণ্ডতায় মাথায় পানি দিতেন। এক সাহাবি বলেন, ‘আমি দেখেছি, মরুভূমির প্রবল গরম অথবা প্রচণ্ড পিপাসার কারণে রাসুল (সা.) আরোহী অবস্থায় মাথায় পানি দিচ্ছেন। অথচ তখন তিনি রোজাদার ছিলেন’ (আবু দাউদ : ২৩৬৫)। রমজানে রাসুল (সা.) অন্যান্য মাসের তুলনায় আরও অধিক দানশীল হয়ে উঠতেন। 

হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাসে যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি আরও অধিক দানশীল হয়ে যেতেন। কল্যাণ পৌঁছানোর তিনি ছিলেন প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও অগ্রগামী।’ (বুখারি : ৩২২০)

ইফতারে নবীজি (সা.) : ইফতারের সময় হলে রাসুল (সা.) তাৎক্ষণিক ইফতার করে নিতেন। সামান্য বিলম্বও করতেন না। সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণে থাকবে যতদিন তারা অবিলম্বে (সময় হলে তাৎক্ষণিক) ইফতার করবে’ (বুখারি : ১৯৫৭)। নবী (সা.)-এর ইফতার ছিল খুবই সাধারণ। তাতে পাঁচ-সাত পদের খাবারের বাহার থাকত না। 

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) নামাজ আদায়ের পূর্বে কয়েকটি মাত্র পাকা আর্দ্র খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। পাকা আর্দ্র খেজুর না পেলে কয়েকটি শুকনো খেজুর দিয়ে, যদি তাও না পাওয়া যেত তবে কয়েক ঢোক পানি পান করেই ইফতার সেরে নিতেন।’ (আবু দাউদ : ২৩৫৬)

রমজানের রাতে নবীজি (সা.) : রমজানের রাতে রাসুল (সা.) অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।সহিহ বুখারির এক হাদিসে এসেছে, রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা উভয়ে একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। এভাবে শোনানোর পাশাপাশি রাসুল (সা.) এশার পর তারাবির নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবিদের পড়ার নির্দেশ দিতেন। 

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি।

অতএব যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে, সওয়াবের আশায় রমজানের দিনে রোজা রাখবে ও রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ হতে এরকম পবিত্র হবে যেমন নবজাতক মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়’ (নাসায়ি : ১/২৩৯)। রাসুল (সা.)-এর নামাজ বরাবরই ছিল সুন্দর, স্নিগ্ধতর। রমজানেও এর ব্যত্যয় হতো না। তিনি দীর্ঘ রাত পর্যন্ত সাহাবিদের নিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতেন (মুসনাদে আহমাদ : ৬/২৬৭)। রাসুল (সা.)-এর জীবন ছিল এরকম সহজ, সরল, নির্মল ও পবিত্র। রমজানে যা হয়ে উঠত আরও স্নিগ্ধময়। তার সুবাসিত জীবনের স্নিগ্ধ ছায়া পড়ুক আমাদের রমজানে। তার মতো আমলে আমলে ভরে উঠুক আমাদের রমজান।

Link copied!