ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

গভর্নর ম্যাজিকে সবাই খুশি!

রেদওয়ানুল হক

জুলাই ২৭, ২০২২, ০১:০৬ এএম

গভর্নর ম্যাজিকে সবাই খুশি!

আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে কাজ করে স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি। সরকার আইনি ও নীতি সহায়তা দিলেও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে গভর্নরের। এ খাতের শৃঙ্খলা বিধানে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সবাইকে খুশি করার সুযোগ থাকে না। মূলত সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর লাগাম টানতে ও অনিয়মকারীদের শায়েস্তা করতেই তৎপর থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক্ষেত্রে কোনো নির্দেশনায় একটি পক্ষ খুশি হলেও বেজার হয় অন্য পক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য যোগদান করা গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত এক সার্কুলারে সব পক্ষকে খুশি করতে পেরেছেন।

যদিও এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, এটি চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত। খোদ ব্যাংক কর্মকর্তারাই দ্বিমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা গণমাধ্যমের সম্মুখে এ নীতির পক্ষে কথা বললেও পেছনে বলছেন ভিন্ন কথা। প্রভাবশালী মহলকে সুবিধা দিতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ : কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। হোটেলে বসে ব্যাংকের সিআরআর, এসএলআর কমানোর সিদ্ধান্ত হয় কী করে? শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা প্রভাবিত।

তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের ধারাবাহিকভাবে সুযোগ দেয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য এগুলো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এতে আমাদের দেশের বড় অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। কিন্তু শাস্তি হয় ছোট কর্মকর্তাদের। আর্থিক খাতের সমস্যা সমাধানে ছোট-বড় সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।  

ঋণখেলাপিদের গণছাড়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘ছোটখাট কিছু ঋণের বিষয়ে স্বল্পসময়ের জন্য ছাড় দেয়া যেতে পারে। কিন্তু বিশাল অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে এত দীর্ঘ সময়ের জন্য সুবিধা দেয়া একেবারেই ঠিক হয়নি।’ ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান-এমডিরা খুশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখান থেকে অনিয়মের সূত্রপাত হয়, ক্ষমতা যখন সেখানে চলে যায়, তখন তারা খুুশি হওয়া স্বাভাবিক। আর চেয়ারম্যানরা খুশি হলে এমডিদের খুশি না হয়ে উপায় নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু পলিসি দেবে— এমন অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, শুধু পলিসি দেয়া নিয়ন্ত্রকের কাজ হতে পারে না। তা যথাযথ পরিপালন হচ্ছে কি-না, সেটিও দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক ভালো পলিসি আছে; কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। এ ছাড়া এত মাইক্রো লেভেলে গিয়ে মনিটরিংয়ের সক্ষমতাও নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের।

ঋণখেলাপিদের গণছাড় দিয়ে সার্কুলার জারির পর গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে গণছাড় বা ঢালাও সুবিধা দেয়া হয়নি বলে ব্যাখ্যা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার গভর্নরের সাথে দেখা করে এমন সিদ্ধান্তের জন্য সাধুবাদ জানান।

তবে ধারণা করা হচ্ছিল, এমন সার্কুলারে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন ব্যাংকাররা। সুবিধাবাদী চক্র তাদের জিম্মি করে নানাভাবে ফায়দা  নেবে। বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী তারাই শাস্তির মুখোমুখি হবেন। তাই ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে মাস্টার সার্কুলারের রিভাইস করার দাবি আসতে পারে বলে গুঞ্জন ছিল।

তবে মালিকপক্ষের বিপক্ষে গিয়ে তারা কতটা শক্ত ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। গত সোমবার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়ে কার্যকালের প্রথম ব্যাংকার্স সভায় বসেন গভর্নর। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত অবস্থানের কারণে মাস্টার সার্কুলার নিয়ে কোনো আপত্তি তুলতে পারেননি ব্যাংকাররা।

সভা শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকের হাতে দায়িত্ব আসায় কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। যেসব ব্যাংকে সুশাসন আছে, তারা এটি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবে। যদি কোনো ব্যাংকে সুশাসন না থাকে, তাহলে তাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি তদারকি করবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে তারাও খুশি।

তবে অব দ্যা রেকর্ড, বেশ কয়েকজন এমডি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা এ বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারেননি।

অন্যদিকে বিপুল সুবিধার কারণে খেলাপিরা খুশি হয়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন গভর্নর এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে খেলাপি, ব্যাংক মালিক ও ব্যাংকার সবাই খুশি। দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পেরে খুশি বাংলাদেশ ব্যাংকও। কিন্তু বাস্তবে খেলাপি ও সুবিধাবাদী ব্যাংক পরিচালকরা ছাড়া সবাই ক্ষুব্ধ। কারণ, বিশ্বব্যাপী ঋণখেলাপিরা এখন উন্নয়নের দুশমন হিসেবে পরিচিত।

তাই তাদের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কট করা হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্ব, উন্নয়শীল এবং উন্নত রাষ্ট্রে উন্নয়ন-গতি ধরে রাখতে ঋণখেলাপিদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বয়কটের জন্য জোরালো আওয়াজ উঠেছে।

জনকল্যাণকামী কোনো সরকারই তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না। আর্থসামাজিক-রাজনৈতিকভাবে ঋণখেলাপিদের একঘরে করে ফেলা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে বহির্বিশ্বে আর্থিক চিত্র ভালো দেখানোর উদ্দেশ্যে খেলাপিদের গণছাড় দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, নন-পারফরর্মিং লোন বা খেলাপি ঋণের কারণে মানের দিক থেকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো অনেক খারাপ অবস্থানে চলে গেছে। অনেক ব্যাংকের ৮০-৯০ শতাংশ লোন শ্রেণিকরণযোগ্য। এ চিত্র দেশের আর্থিক খাতের জন্য বিব্রতকর। তাই এক ধরনের

গোঁজামিল দিয়ে হলেও কাগজে-কলমে ব্যাংকগুলোর চিত্র ভালো দেখানোর সুযোগ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে নতুন গভর্নর এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে চাপে রেখে যতটা সম্ভব রিকভার করা যায়, সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

গভর্নর হিসেবে অফিস শুরু করার পাঁচ কার্যদিবসের মাথায় আব্দুর রউফ তালুকদারের দেয়া গণছাড়ের ওই সার্কুলার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বড় পর্দায় দেখলে, এতে একজন ঋণখেলাপি ঘুরেফিরে সর্বোচ্চ ২৯ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন।

নতুন নীতিমালায় ১০০ কোটি টাকার কম ঋণে ৬ বছর, ৫০০ কোটি টাকার কম ঋণে ৭ বছর ও ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পরিশোধে ৮ বছর পর্যন্ত সময় দেয়া যাবে। বিশেষ এসব সুবিধা নিয়ে যেসব ঋণখেলাপি নিয়মিত হবেন, তারা ব্যাংক থেকে আবারও ঋণ নিতে পারবেন। এ জন্য তাদের বকেয়া ঋণের ৩ শতাংশ জমা দিলেই চলবে, আগে যা ছিল ১৫ শতাংশ। যেসব মেয়াদি ঋণ নিয়মিত রয়েছে, তাও নতুন করে পুনর্গঠন করা যাবে। এতে বিদ্যমান মেয়াদের অবশিষ্টের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সময় বাড়ানো যাবে, যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। আগে যে কোনো পরিমাণ মেয়াদি খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এককালীন অর্থ জমা দিতে হতো। এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন নীতিমালার কারণে ব্যাংকের ঋণ আদায় আরও কঠিন হবে; তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দেবে; বাড়বে আমানতের সুদ এবং আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণ মন্থর হয়ে পড়বে; বিনিয়োগ কমে যাবে এবং ব্যাংকগুলোর ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। এটি সরকারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত দাবি করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, কালোটাকা, ঋণখেলাপি, দুর্নীতি, সুশাসনহীনতা যে কোনো দেশের ভাবমর্যাদার জন্য বিপজ্জনক। সরকার তাই এসবের চিত্র ভালো রাখতে নানাভাবে উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ পুনঃতপশিলের নতুন সিদ্ধান্ত এ রকমই এক উদ্যোগ।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে।

এই ধারা চলতে থাকলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাড়তি খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে বলে মত খাত-সংশ্লিষ্টদের। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকারের খেলাপি তথ্যের সাথে একমত নন।

তাদের দাবি, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১১ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৬ শতাংশের মতো। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে টাকার অঙ্কে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।  
 

Link copied!