ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

৬২ বছর বয়সে মাস্টার্স পাস!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

জুলাই ২৩, ২০২২, ০১:৪০ এএম

৬২ বছর বয়সে মাস্টার্স পাস!

মাত্র চার বছর বয়সে মাকে হারান আরেফা হোসেন। আট বছর বয়সে হারান বাবাকে। পাঁচ বোনের মধ্যে আরেফা তৃতীয়। অভিভাবক ছিলেন একমাত্র বড় বোন। কিন্তু অল্প বয়সেই বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। পরে বাকি তিন বোনসহ তার আশ্রয় হয় একটি অনাথ আশ্রমে। অনাথ আশ্রম থেকে ভর্তি হন মিশনারি স্কুলে। 

মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময় বাংলা একটি সিনেমা দেখেন তিনি। যে সিনেমায় দেখানো হয় এক এতিম মেয়ে স্বেচ্ছায় মানুষকে সেবা দিচ্ছে। সেই সিনেমা দেখার পর স্বপ্ন বুনতেন তিনিও একদিন সেবিকা হবেন। 

১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহীর খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৮১ সালে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮২ সালের ৬ জুন ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাসপাতালে (বর্তমানে আধুনিক সদর হাসপাতালে) নার্স হিসেবে যোগদান করেন। 
 
চাকরির দুবছর পরই বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বছর না যেতেই কোলজুড়ে আসে সন্তান। একদিকে সংসারের ব্যস্ততা, অন্যদিকে কর্মময় জীবন। এগুলো বাদ দিয়ে আলাদা কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করার সুযোগ ছিল না তার। তবে মনে তার সুপ্ত বাসনা তাড়া করত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। 

সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আবার শুরু করেন পড়াশোনা। ১৯৯৬ সালে বিএসসি করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মহাখালী সেবা মহাবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে স্নাতক শেষ করেও ক্ষান্ত হননি তিনি। 

পরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার জন্য ভর্তি হন। ২০১৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চলতি বছরের ১৫ জুন ৬২ বছর বয়সে সনদ গ্রহণ করেন তিনি।  

এ বয়সে আরেফা হোসেনের উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টি জেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ইসলামবাগের বাসিন্দা আরেফা হোসেন। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর চাকরিজীবনের ইতি ঘটে তার। একই বছরের ৭ নভেম্বর তিনি স্বামীকে হারান। 

বর্তমানে দুই ছেলে সন্তান নিয়ে তার পরিবার। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৮ বছরের চাকরিজীবন শেষ করে বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। 

আরেফা হোসেন বলেন, আমার জন্ম নাটোর জেলায়। সেখানেই আমাদের বাড়ি ছিল। আমরা পাঁচ বোন ছিলাম। ছোট বেলায় মা-বাবা মারা যান। বড় বোন আমাদের দেখাশোনা করতেন। কিছুদিন পর বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না। 

আমিসহ আমরা তিন বোন সেখানে এক অনাথ আশ্রমে থাকা শুরু করি। সেই অনাথ আশ্রমেই সময়টা কেটেছে। এক বদ্ধপরিকর জীবন কেটেছে আমাদের। যেহেতু এতিম, সেহেতু এর বাইরে আলাদাভাবে জীবন কাটানোর কোনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ছোটবেলায় সবার মনে বড় হয়ে কিছু হওয়ার ইচ্ছে থাকে। তবে আমার স্বপ্ন বা ইচ্ছাটা ছিল একটু অন্যরকম। যেহেতু মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি, সেখানেই থেকেছি। 

তিনি বলেন, যখন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন খুব অসহায় হয়ে যায়। তিনি যে পরিবারের হক বা যতই ধনবান হক, এ পেশায় থাকাকালীন বিভিন্ন রোগী ও তাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়েছে। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকায় সেবিকা পেশাটা মহৎ পেশা বলে আমি মনে করি। যে পেশায় মানুষকে খুব কাছ থেকে সহযোগিতা করা যায়। 

আরেফা হোসেন আরও বলেন, আমার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার। কিন্তু চাকরির পর বিয়ে তারপর সন্তান হয়ে যায়। মনে হয়েছিল হয়তো আর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারব না। তবে আমার স্বামী আমাকে সাহস দিয়েছেন। তার অনুপ্রেরণায় আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি। 

তিনি আমাকে বলেছিলেন, উচ্চশিক্ষার যেহেতু সুযোগ আছে, তুমি ভর্তি হয়ে যাও। আমি এ বয়সে মাস্টার্স করেছি আমার স্বামীর অনুপ্রেরণায়। যদিও তিনি আমার সফলতা দেখে যেতে পারেননি। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন। 

আর আমি এ বছর মাস্টার্স শেষ করে সনদ পেয়েছি। আসলে জীবন মানে সংগ্রাম। কথায় আছে যে রাধে, সে চুলও বাঁধে। সংসার আর চাকরির সঙ্গে পড়াশোনাটা একটা যুদ্ধের মতো ছিল। যদি মানুষ ইচ্ছে করে আর পরিশ্রম করে, তবে সফল হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। 

ঠাকুরগাঁও নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজের শিক্ষার্থী সানিয়া আক্তার বলেন, আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ম্যাম চাকরি করছেন। অনেক সুন্দর করে তিনি আমাদের ক্লাসে পাঠদান করান। তার ক্লাসে মনোযোগ থাকলে আলাদাভাবে বাড়তি পড়াশোনার প্রয়োজন হয় না। আর উনি আমাদের অনুপ্রেরণা। 
এ বয়সে যদি ম্যাম উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে আমরাও পারব। 

আমরা সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ম্যামের সফলতা দেখে ইসলামবাগের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, আরেফা হোসেন অনেক শিক্ষার্থীর চোখ খুলে দিয়েছেন। অনেকে বয়স হয়ে গেলেও উচ্চশিক্ষা থেকে পিছিয়ে যায়। আরেফা হোসেন তাদের জন্য দৃষ্টান্তও বটে। 

আরেফা হোসেনের ছোট ছেলে আদিব হোসেন বলেন, আম্মুর সফলতায় আমরা অনেক খুশি। আমরা সন্তান হিসেবে আম্মুকে নিয়ে গর্ববোধ করেছি। আমরা মা-ছেলে একসঙ্গে পিএইচডি করব।

Link copied!