Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

‘৩০০ টাকা মজুরি দে নইলে বুকে গুলি দে’

মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

আগস্ট ২২, ২০২২, ০৩:১৪ এএম


‘৩০০ টাকা মজুরি দে নইলে বুকে গুলি দে’

দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা প্রত্যাখ্যান করে কাজে যোগ না দিয়ে ফের আন্দোলনে নেমেছে সিলেটের চা-শ্রমিকরা। মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা করার দাবিতে গতকাল রোববার সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে সাধারণ শ্রমিকরা মিছিল ও সমাবেশ করেন। চা-শ্রমিকের সন্তান ও আন্দোলনকারী দেবাশীষ গোয়ালা বলেন, চা-বাগান মালিকরা আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন।

১২০ টাকা থেকে মাত্র ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করে তারা আমাদের দয়া দেখাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কারও দয়া চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি চাই। বর্তমান যুগে কোথাও এত কম টানা মজুরি নেই। আন্দোলন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি, তাই আমরা আমাদের দাবিতে অনড়।

তিনি আরও বলেন, কতিপয় নেতাদের বশে এনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা এক ধরনের প্রতারণা। আমরা ১৪৫ টাকা মজুরি নয়, ৩০০ টাকা মজুরির বাস্তবায়ন চাই। আন্দোলন চলাকালে ‘আমরা সবাই শ্রমিক সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা। ৩০০ টাকা মজুরি দে নইলে বুকে গুলি দে’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন সিলেট ভ্যালির চা-শ্রমিকরা। চা-শ্রমিকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবেন না তারা।

গতকাল সকালে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড ও নিজ শরীরে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লিখে মাঠে নেমেছেন শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে তারা সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অপরোধ করে রাখেন।

এ সময় আন্দোলনকারি রানী গোয়ালা আমার সংবাদকে বলেন, ‘মালিকরা কি আমাদের কষ্ট বুঝবে না? আমরা হাড়ভাঙা খাটুনির জন্য তারা (মালিকপক্ষ) আরাম-আয়েশে থাকে। আমাদের প্রতি কি তাদের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ নেই। তারা আমাদের সব দিক দিয়ে বঞ্চিত করে রেখেছে। আমরা ১৪৫ টাকা মজুরি মানি না। এর থেকে আমাদের গুলি খেয়ে মরে যাওয়া ভালো। আমরা যখন এমনিতেই মরছি তাহলে অমনিতে মরা ভালো।’

এদিকে চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বাইরে থেকে উসকানি দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। গতকাল দুপুরে সিলেট মহানগরের লাক্কাতুরা চা-বাগানের সামনে শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চা-শ্রমিকদের দাবির সাথে আমি একমত। তবে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে জড়িত থাকার কারণে শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তকেও সম্মান জানাতে হয়। এখন যারা আন্দোলনে আছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ করব— রাস্তা অবরোধ বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে তৈরি না করে। যেহেতু আপনারা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন— সেহেতু আপনারা বাগানে অথবা কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে আপনাদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করুন। কিন্তু রাস্তু অবরোধ করে রাষ্ট্রের অথবা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করবেন না। তিনি আরও বলেন, ৩০০ টাকা মজুরির পক্ষে আমি একমত।

তবে শোকের মাসকে সম্মান জানিয়ে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলাম। এ ছাড়া আমাদের আন্দোলনে বাইরে থেকে বিভিন্ন সংগঠন ঢুকে পড়েছে। যদি কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, ভাঙচুর বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় তবে তার দায়ভার চা-শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে আমি নেবো না। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায় করতে হবে। আমাদের চা-শ্রমিকদের বাইরে থেকে উসকানি দেয়া হচ্ছে। যার ফলে রাস্তাঘাটে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছেন শ্রমিকরা। আমি এর পক্ষে নই।’ 

Link copied!