Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

থ্রি এঙ্গেল মেরিনের জালিয়াতি!

আসাদুজ্জামান আজম

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ১২:৪১ এএম


থ্রি এঙ্গেল মেরিনের জালিয়াতি!

অভিজ্ঞতা সনদ, চুক্তি, ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র দিয়ে ৪৪৮ কোটি টাকার ড্রেজার ক্রয়ের কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বেসরকারি শিপইয়ার্ড থ্রি এঙ্গেল মেরিন লিমিটেডকে মাত্র এক মাস সাতদিনের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

এ সাজার ফলে গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটির সব ক্রয় কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারার কথা। বিষয়টি সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা প্রকাশ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সাজা আরোপের ফলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) থেকে নেয়া শত শত কোটি টাকার ফেরি, ওয়েলট্যাংকারসহ বিভিন্ন জাহাজ নির্মাণকাজ নেয়ার ক্ষেত্রে একই ধরনের জালিয়াতি করেছে কী না— তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এ শিপইয়ার্ডের বিরুদ্ধে নদীর জমি দখল ও ভরাটেরও অভিযোগ রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রহস্যজনক কারণে বিআইডব্লিউটিএর কয়েকজন কর্মকর্তা এ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন মন্ত্রণালয়েরও কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের তৎপরতায় গত ২ আগস্ট এ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির চিঠি দেয়া হলেও তা বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।

তারা আরও জানান, শুধু তাই নয়, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি কমিটি জালিয়াত এই শিপইয়ার্ডকে কালো তালিকাভুক্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। ওই কমিটির এমন সময়কালের জন্য কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছিল, যেই সময় প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে।

শুধু তাই নয়, কমিটির ওই সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য লিখিতভাবে জোর সুপারিশ করেছেন বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের সদ্য দায়িত্ব পাওয়া প্রধান প্রকৌশলী ও এ সংস্থার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রকিবুল ইসলাম তালুকদার। যদিও সংস্থাটির চেয়ারম্যান সার্বিক পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।  

জানা যায়, থ্রি এঙ্গেল মেরিনকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি চিঠি দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

সংস্থাটির পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ) কাজী ওয়াকিল নওয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিআইডব্লিউটিএর ‘৩৫ ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ১ এপ্রিল আহ্বান করা ১৩ নম্বর প্যাকেজের অধীনে লট-১ ও লট-২ এর ড্রেজার, সহায়ক জলযান ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার টেন্ডারে অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

চিঠিতে বলা হয়, উক্ত দরপত্রে স্পেসিফিকেশন এক্সপেরিয়েন্সে এর বিপরীতে আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত অভিজ্ঞতার সনদ ও চুক্তিপত্র জাল প্রমাণিত হওয়ায় পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৪ এবং পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ১২৭(৪)(৫) অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপনার প্রতিষ্ঠানকে অত্র কর্তৃপক্ষের সব ক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বিরত রাখা হলো।

থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম  বিষয়টি স্বীকার করে ‘সরল বিশ্বাসে’ ভুল আখ্যায়িত করে ক্ষমা চান। আরও জানা গেছে, প্রতিটি লটের প্রাক্কলিত দর ছিল ২২৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে দুটি লটের মূল্য ছিল ৪৪৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। থ্রি এঙ্গেল মেরিনে কাজ পেতে সর্বনিম্ন দর প্রস্তাব করেছিল। তবে দরপত্রের সঙ্গে জমা দিয়েছিল জাল তথ্য-উপাত্ত ও সনদ। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের একটি চুক্তিকে ১৮০ কোটি টাকা বা দুটি চুক্তির প্রতিটিতে ৯০ কোটি টাকা দরের ড্রেজার বা জাহাজ নির্মাণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ওই ড্রেজার বা জাহাজ ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটির সুপারভিশনের আওতায় নির্মাণ করতে হবে।

এ শর্ত পূরণ করতে ইউনিকর্ন ফ্রেইট সার্ভিসেস নামক প্রতিষ্ঠানের ‘এমভি ইউনিকর্ন এক্সপ্রস-১’ ও ‘এমভি ইউনকর্ন এক্সপ্রেস-২’ নামক দুটি জাহাজ নির্মাণ বাবদ একটি ১৩০ কোটি ও আরেকটি ৯০ কোটি টাকার চুক্তিপত্র ও অভিজ্ঞতা সনদ জমা দেয় থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন। যদিও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির যাচাইয়ে ওই চুক্তিপত্র ও অভিজ্ঞতা সনদ জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়। একইসঙ্গে ভ্যাটের কাগজ, ব্যাংক লেনদেন ও জাহাজের ক্ল্যাসিফিকেশন সংক্রান্ত কাগজপত্রও সঠিক ছিল না। এছাড়া জাহাজ দুটির আকার ও ধারণক্ষমতা সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছে, সেটিও সঠিক ছিল না। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক ও সিপিটিইউর পরিচালক আজিজ তাহের খানের সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।

Link copied!