ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

যুদ্ধের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

আবদুর রহিম

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২, ০১:১৪ এএম

যুদ্ধের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
ছবি-সংগৃহীত

এখনো থেমে নেই গোলাগুলি। রাখাইন রাজ্যের ওয়েলিডং পাহাড়ে গুলিবর্ষণ চলছে। ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি ও মর্টারশেল। গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ এপার বাংলা কাঁপছে। গতকাল রোববার সকালেও গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছে প্রশাসন। খুব শিগগিরই প্রায় তিনশ পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সমপ্রতি মিয়ানমারের মর্টারশেলের আঘাতে রোহিঙ্গা যুবক নিহত, ৩৫ নং পিলারের কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যাওয়া ও শিশুসহ আটজন আহতের পর তুমব্রুতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জীবন বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে স্থানীয়রা পালাচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মিয়ানমার থেকে আসা অবিস্ফোরিত মর্টারশেল নিষ্ক্রিয় করেছে কয়েক দফায়। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে।

এমন দৃশ্যপটের পরিস্থিতে ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত-চীন মিয়ানমারকে সহায়তা করছে বলেও মনে করা হচ্ছে। ভারত-চীনের বিপরীতে মার্কিন বলয় তৈরিতে আরসা সেখানে অস্ত্রে সাপোর্ট পাচ্ছে বলেও ধারণা। অন্য কোনো ইশারায় মিয়ানমার যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশ সীমায় ঢুকে গুলি চালিয়েছে, মাইন পুঁতে রেখেছে। গত এক মাসে কয়েকবার মর্টারশেল বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এসব কিছুই মিয়ানমারের ইচ্ছায় হচ্ছে বলে দাবি বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু তৈরি করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চলছে। মিয়ানমারে এখনো কয়েক লাক রোহিঙ্গা রয়েছে।

সেগুলোকে ইস্যু তৈরি করে আবার দেশে একটি রোহিঙ্গা স্রোত প্রবাহের চেষ্টা হচ্ছে। কিংবা বাংলাদেশে যাদের ঢুকানো হয়েছে তাদের আজীবনের জন্য প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত করতেই এ ধরনের রাজনৈতিক ঘুঁটি চলছে। আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসার সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বল্প সময়ের যুদ্ধ পরিস্থিতি চাওয়া হচ্ছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

গত এক মাসের ঘটনায় এবার সেখানে সরকারি বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সাংবাদিকদের সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহ করতে দেয়া হচ্ছে না। ঘুমধুম সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তুমব্রু বাজার, তুমব্রু গ্রাম, বাইশফাঁড়ি, কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া, হেডম্যানপাড়া, ইউনিয়ন পরিষদ ও উত্তরপাড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিজিবি সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা উপরের নির্দেশে সাংবাদিকদের আপাতত এসব এলাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, এ এলাকাগুলোতে যুদ্ধ দৃশ্যপটের চিহ্ন রয়েছে। মিয়ানমার সব রাষ্ট্রীয় নীতি ভঙ্গ করেছে, তার প্রমাণ এলাকাগুলোতে রয়েছে।

এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তিনশ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে প্রশাসন। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন তুমব্রু, ঘুমধুম, হেডম্যানপাড়া, ফাত্রাঝিড়ি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী এসব পরিবারের প্রায় দেড় হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যায় কি-না তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল ১৮ সেপ্টম্বর প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে বৈঠকে জানানো হয়, ঘুমধুম ইউনিয়নে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া স্কুলগুলোতেও থাকার কোনো পরিবেশ নেই।

এ পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এলার্ট (সতর্ক) করা হয়েছে, তারা যেন জনগণকে নিরাপদে থাকার নির্দেশনা দেন।

তিনি বলেন, এই মাত্র জরুরি সভার আহ্বান করে সেখানে সবাই মিলে সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাবাসীদের কিভাবে নিরাপদে রাখা যায় সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সীমান্তের মানুষদের আরও কীভাবে নিরাপদে রাখা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ পরিস্থিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাগুলি ও নিহতের ঘটনা চলতে থাকলে বিষয়টি জাতিসংঘে তোলা হবে। গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যেই বিজিবি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। 

এরপরও সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ না হলে বিষয়টি জাতিসংঘে তোলা হবে। একের পর এক বাংলাদেশ সীমায় মিয়ানমারের গোলাবারুদ ও আক্রমণের ঘটনায় এ দিন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঢাকা। গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে আবারও তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি এসব ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টারশেল পড়ার ঘটনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকলের আলোকে খতিয়ে দেখছে। 

তিনি বলেন, আবারও একই ঘটনা ঘটায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকলের আলোকে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনা মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ফলে ভুলক্রমে ঘটেছে নাকি উসকানিমূলক তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ওপারে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া মর্টারশেল ও গুলির খোসা এসে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুং সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে। এ ঘটনায় সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে বসবাসকারীদের মধ্যে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর নোম্যান্স ল্যান্ডে তিনটি মর্টারশেল এসে পড়লে সেখান থেকে একটি বিস্ফোরিত হয়ে ইকবাল (১৭) নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো না আসায় তাকে দাফনও করা যায়নি।

এছাড়া ওই ঘটনায় শিশুসহ আহত ছয়জনের মধ্যে দুজন বর্তমানে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপর তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আরও একজন চট্টগ্রাম এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নোম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে চার হাজার ৬৬৩ জন। এরা ছাড়াও স্থানীয়দের বেশির ভাগই ভয়ে এলাকা ছেড়ে দূরে আত্মীয় স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এসে পড়ে তিনটি মর্টারশেল। ক্যাম্পের নিকটবর্তী এলাকায় এসে পড়ে আরও দুটি। পাঁচটি মর্টারশেল পরপর বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।’

বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষ বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। আমরা শুরু থেকেই সতর্ক আছি। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। তাদের গোলা যেন আমাদের দেশে না আসে সে বিষয়ে তাদেরকে আগেও জানানো হয়েছে। নতুন করে আবারো জানানো হবে এবং কূটনৈতিকভাবেই এটি বন্ধ করার জন্য আলোচনা হচ্ছে।’

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, ‘আমরা জরুরি সভায় সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিভাবে সেখানকার বসবাসকারীদের নিরাপদ রাখা যায়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

গত ৩০ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ৩০০ থেকে ৪০০ গজ ভেতরে মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার ঘুরতে দেখা যায়। সে সময় মিয়ানমার থেকে কয়েক রাউন্ড গোলাবর্ষণ করা হয়। তার আগে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় মিয়ানমারের দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর ওপার থেকে গুলির খোসা এসে পড়ে তুমব্রু এলাকায়।

ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) সোহাগ রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে কারা গোলাগুলি করছে, গোলা এসে কোথায় পড়ছে, সেখানে (সীমান্তে) গিয়ে এসব তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পুলিশের নেই। সীমান্ত এলাকায় কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সেখানে বিজিবি তৎপর রয়েছে।’

রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন,  ‘ইচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমার বাংলাদেশে মর্টালশেল নিক্ষেপ করছে।  একটি চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার চায় বাকি রোহিঙ্গারাও যেন বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও চলে যায়। এছাড়া উসকানি দেয়া হচ্ছে যে, বাংলাদেশ যেন যুদ্ধে জড়ায়। এতে রোহিঙ্গা নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কয়েকটি দেশের ইঙ্গিত ও সহযোগিতা রয়েছে বলেও ধারণা করছি। গত এক মাসে মিয়ানমার চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি ভেঙে ফেলেছে। তারা দুঃসাহসের চূড়ান্ত পথ বেছে নিয়েছে। বাংলাদশকে সতর্কতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন  আমার সংবাদকে বলেন, ‘মিয়ানমার আকাশসীমা লঙ্গন করে ফেলেছে। তারা কোন উদ্দেশ্যে এমন উসকানি দিচ্ছে তা বাংলাদেশকে গভীরভাবে চিন্তা করে মোকাবিলা করতে হবে। তারা একটি যুদ্ধ চাচ্ছে, আর বাংলাদেশ যদি জড়িয়ে যায় তাতে মিয়ানমার লাভবান হবে। তারা চিরস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে দেবে। নতুন করে আরো কিছু রোহিঙ্গা ঢুকিয়ে দেবে।’

Link copied!