Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা

আসাদুজ্জামান আজম

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২, ০১:০৮ এএম


সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা

বাংলাদেশের মিয়ানমার-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়াতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী  বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি বাড়াতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বলা হয়েছে। সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের।

গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদেরও সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তের বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। গত রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ডিসি এবং ইউএনওদের এ নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. রাহাত আনোয়ার বলেন. মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে প্রায় দুই মাস ধরে। বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের ওপারেই রাখাইন রাজ্য।

সেখানে দুই পক্ষের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে মিয়ানমার-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নজর রাখার জন্য মাঠ প্রশাসনের ডিসি এবং ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সব ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভার কার্যপত্রে বলা হয়, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিরোধ, মাদকাসক্তি নিরোধ এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রচারণামূলক সভা করতে হবে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ টিসিবির কার্যক্রম ও বাজার মনিটরিং জোরদার করতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ডিজেলসহ সারের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সীমান্তবর্তী এলাকায় ডিজেল ও সারের চোরাচালান রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের তিনটি সীমান্তবর্তী জেলা হচ্ছে— কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান।

অপরদিকে ভারতের সাথে যে ৩০টি সীমান্তবর্তী জেলা রয়েছে সে জেলাগুলো হচ্ছে— চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা। সিলেট বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে— সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এসব সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরে রাখার জন্য মাঠ প্রশাসনের ডিসি এবং ইউএনওদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত রোববার ঢাকায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হলে তারা সেটা মোতায়েন করবে। সাগরপথে বা স্থল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে রোহিঙ্গারা যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে। এর আগেরবার মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আসার সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু লোকজনের যোগসাজশ ছিল।

এবার যাতে সেটা না হয়, সে জন্য সব সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ সেনা মোতায়েনের কথা ভাবছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই মুহূর্তে সরকার সেনা মোতায়েনের কথা ভাবছে না।

খুরশেদ আলম বলেন, সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেসবের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ লিপি দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের গোলা যেন বাংলাদেশের ভূখণ্ডে না আসে, সেটা দেখার দায়িত্ব মিয়ানমারের। বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও শান্তিকামী রাষ্ট্র। অনেকদিন ধরে অনেক ধৈর্য ধরেই সহ্য করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশীকে নিয়মমাফিক যা করার সেটাই করছি। মিয়ানমারের কাছে আমাদের কথাবার্তা ও যে বক্তব্য দিয়েছি, সেখানে কোনো রকম দুর্বলতা বা নতজানুতা নেই। বরং আমরা শক্ত অবস্থানে থেকেই নিজেদের কথা বলেছি।

গতকাল সোমবার মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী তুমব্রু এলাকা পরিদর্শন করে  বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তের বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

তবে এটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি, আর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমরা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করে রাতের মধ্যে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছি এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা এলাকার বাসিন্দাদের যাচাই-বাছাই করার কাজ শুরু করেছি এবং কাজ শেষ হলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের কোথায় সরানো হবে।  

জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টারশেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। ৯ সেপ্টেম্বর একে ৪৭ এর গুলি এসে পড়ে তুমব্রু এলাকায়।

সর্বশেষ গত শুক্রবার ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবক আহত ও রাতে মর্টারশেলের আঘাতে এক রোহিঙ্গা নিহত ও পাঁচ রোহিঙ্গা আহত হন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে প্রায় দুই মাস ধরে। বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের ওপারেই রাখাইন রাজ্য। সেখানে দুপক্ষের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

এরপর স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে প্রয়োজনে বাড়তি জনবল নিয়োগ করতে সরকার বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দিয়েছে। তবে মিয়ানমার সীমান্তে এখনই সেনা মোতায়েনের কথা ভাবছে না সরকার।

পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের বাংলাদেশি জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছি ২এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। নজর রাখা হচ্ছে, যাতে মিয়ানমারের কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে।

সভায় পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ্বাস, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টান্টু কুমার সাহাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!