ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

তিতাসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম

জাহিদুল ইসলাম

অক্টোবর ২৫, ২০২২, ০১:১৪ এএম

তিতাসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম

আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে অনিয়ম এবং হিসাবে বিচ্যুতি থাকায় আগের বছরে অডিট ফার্মের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হলেও তা গায়ে মাখেনি জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সমাপ্ত বছরেও একই বিষয়ে ফের আপত্তি জানিয়েছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান শফিক বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট।

সূত্র জানায়, ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে অডিট ফার্ম শফিক বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টকে নিয়োগ করা হয়। নিরীক্ষায় অনেক অসঙ্গতি খুঁজে পায় তারা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নিয়ে আগের বছরও ‘আপত্তি’ (কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন) তুলেছিল শফিক বসাক কোং। এ থেকে বোঝা যায়, অডিট ফার্মের আপত্তি গ্রাহ্য করছে না তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে— আর্থিক প্রতিবেদনে গ্রাহকের বিপুল আমানত দেখালেও এ বিষয়ে যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় হিসাব গড়মিল, বাল্ক গ্রাহকদের শাস্তিমূলক জরিমানা দেখানো হলেও বাস্তবে তা আদায় না হওয়ায় আয় বেশি দেখানো, দুর্বল মৌলভিত্তির ফারমার্স ব্যাংকে এফডিআর বিনিয়োগের ফলে আদায় নিয়ে শঙ্কা এবং এ নিয়ে যথাযথ প্রভিশন না রাখা, ইনভেন্টরিস খাতে বিপুল ব্যয় দেখানো, অথচ বেশির ভাগই মৃত ও অপ্রচলিত আইটেম, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুসারে ইক্যুইটি মানিকে শেয়ার ক্যাপিটালে রূপান্তর না করায় শাস্তির কবলে পড়ার শঙ্কা ইত্যাদি।

আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের বিষয়ে জানা যায়, ৩০ জুন ২০২২ হিসাব বছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি দায় হিসেবে গ্রাহক আমানতের দুই হাজার ৬১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এসব আমানতের তথ্য জোন বা আরএসও অফিস থেকে সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু নিরীক্ষাকালে দেখা যায়, জোন বা আরএসও অফিসের সাথে প্রধান কার্যালয়ের তথ্যে গরমিল রয়েছে। এদিকে প্রায় দুই দশক ধরে বৃহৎ ইউনিট গ্রাহকদের বিশাল অংকের জরিমানা দেখানো হলে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আদায় নেই বলে জানিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে জানা যায়, বিলম্বে বিল পরিশোধের কারণে বৃহৎ ইউনিট গ্রাহকের ওপর শাস্তিমূলক সুদ, মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ ও হাই হিটিং ভ্যালু বাবদ ৩০ জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ২৯৮ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সাল থেকে এই আয় ও পাওনা হিসাব দেখিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো টাকা আদায় হয়নি।

এ বিষয়ে নিরীক্ষকদের অনুসন্ধানে যে বিষয়টি বোঝা যায়, বৃহৎ ইউনিট গ্রাহকরা দীর্ঘদিন যাবত অনাদায়ী মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ, হাই হিটিং ভ্যালু ও জরিমানামূলক সুদ দিতে আগ্রহী নয়। ফলে এই আর্থিক প্রতিবেদনে এই পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট সন্দেহ করছেন। এই অনাদায়ী টাকার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনের পরামর্শও দেয়া হয়েছে শফিক বসাক অ্যান্ড কোং-এর পক্ষ থেকে। তবে এ নিয়ে এখনো প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। ফলে আর্থিক প্রতিবেদনে এমন বাহুল্য আয় দেখানোয় তা বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করার মতো বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া সমাপ্ত বছরে ইনভেন্টরিস খাতে ক্যারিং অ্যামাউন্ট দেখানো হয়েছে ২০৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ২০১৩ সালে মৃত ও অপ্রচলিত স্টক মূল্য দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আবার ২০২২ সালে পুনরায় ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করতে গেলে আগের চেয়েও বেশি মৃত ও অপ্রচলিত আইন শনাক্ত করা হয়, কিন্তু সঠিক তথ্য না থাকায় সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ ক্ষেত্রে সম্পদ অনেক নেমে আসবে, তা ছাড়া আইএএস-২ অনুসারে ইনভেন্টরিসকে লোয়ার অব কস্ট এবং নিট রিয়েলাইজেবল ভ্যালুতে নিরূপণের কথা বলা হলেও কোম্পানির হিসাব নীতি অনুসারে একে ব্যয় মূল্যে দেখানো হয়েছে, যা আইএএস-২ এর ব্যত্যয়।

প্রতিষ্ঠানটি এফআরসির নির্দেশনা অনুসারে ইক্যুইটি মানিকে শেয়ার ক্যাপিটালে রূপান্তর করেনি। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশ সরকার এবং তিতাস গ্যাসের মধ্যে সহায়ক ঋণচুক্তি (এসএলএ) অনুসারে ৫২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ইক্যুইটি মানি পেয়েছে সরকারের কাছ থেকে, যা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে সংরক্ষণ আছে।

কিন্তু ২ মার্চ, ২০২০ তারিখে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোম্পানির ইক্যুইটির অংশ হিসেবে শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অন্য যেকোনো নামে প্রাপ্ত মূলধন এ ধরনের অর্থ প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার মূলধনে পরিণত করতে হবে এবং এই অর্থ ফেরত দেয়া যাবে না। কিন্তু তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এফআরসির প্রজ্ঞাপন অনুসারে শেয়ার মূলধনে তা রূপান্তরিত করেনি এবং এই অর্থকে বকেয়া দেখানো হয়েছে। ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত এ ধরনের বকেয়া অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়াত্বের দায় মাথায় নিয়ে নাম পাল্টানো পদ্মা ব্যাংকে ৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে (এফডিআর) বিনিয়োগ করেছে। তবে নিরীক্ষক বলছে, ব্যাংকটি দুর্বল ক্রেডিট যোগ্যতার কারণে এই বিনিয়োগ আদায় করার বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফলে এই বিনিয়োগের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে মিনহাজ ইলাহি ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, কোনো কোম্পানির কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন মানেই তাতে ঝামেলা আছে। এখন পুঁজিবাজারে শেয়ারটির দাম কমবে কি-না তা নির্ভর করবে যারা এই প্রতিষ্ঠানের বেশি সংখ্যক শেয়ার ধারণ করছে তাদের ওপর। তবে অবস্থা পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে এমন ঘটনায় অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দেবে, এতে শেয়ার দরও কমে যাবে। কিন্তু এর ফলে মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হওয়ার নিয়ে অডিটর হিসেবে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, জানতে চাওয়া হয় শফিক বসাকের কাছে।

এসময় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পার্টনার এবং তিতাস গ্যাসে অডিটের দায়িত্বে থাকা শেখ জাহিদুল ইসলাম দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, বিগত বছরে যে সব বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে তার অধিকাংশই এখনো সমাধান হয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তারা চেষ্টা করছে এখান থেকে উত্তরণের। পাশাপাশি এটা শুনেছি তারা নাকি নতুন সিস্টেম বসিয়েছে। এতে তারা আশা করছে আগামীতে হয়তো এই সমস্যা থাকবে না।

এসব বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে তাদের অফিসে গেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাওয়া যায়নি। তবে পাবলিক রিলেসন্সের দায়িত্বে থাকা মীর্জা মাহাবুব শেয়ার ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক শেয়ার ডিপার্টমেন্টে গেলে তারা বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে অডিটে বলা হয়েছে সেগুলো অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট দেখে। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হুমায়ূন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

Link copied!