Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

একাধিক পদ থাকলেও নেই চিকিৎসক ১১ বছর ধরে বন্ধ চক্ষুসেবা

বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবান প্রতিনিধি

অক্টোবর ২৫, ২০২২, ০১:৫৬ এএম


একাধিক পদ থাকলেও নেই চিকিৎসক ১১ বছর ধরে বন্ধ চক্ষুসেবা

দীর্ঘ ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে চক্ষু চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে বান্দরবান সদর হাসপাতালে। পদ থাকা সত্ত্বেও নেই চক্ষু চিকিৎসক। এতে জেলার চক্ষু রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচের পাশাপাশি পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে পরিচালিত সিচুয়েশন এনালাইসিস অফ ভিশন-২০২০ অনুসারে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ অন্ধ এবং ২১ শতাংশের বেশি মানুষ স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন। এছাড়া দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিশু চোখের সমস্যায় ভুগছে। এ তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হয়, বান্দরবানেও চোখের সমস্যায় ভুক্তভোগী রোগীর সংখ্যাটা কম নয়।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো.ইস্তিয়াকুর রহমান জানান, চক্ষু চিকিৎসকের পদ থাকলেও কোনো ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ নেই। চক্ষু চিকিৎসকের পরিবর্তে একজন এমও (মেডিকেল অফিসার) দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হওয়ায় চোখের কোনো রোগীকে সেবা দেন না। এ কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চোখের চিকিৎসার জন্য জেলায় তেমন চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় ২০২১ সালে বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেসরকারি উদ্যেগে গড়ে উঠে বান্দরবান চক্ষু হাসপাতাল।

হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, দৈনিক গড়ে ১৫ রোগী সেবা নিতে আসেন। এখানে ডাক্তারের পরামর্শ ফি ৫০০ টাকা হলেও প্রতি রোগী থেকে ৩০০ টাকা করে নেয়া হয়। মাসিক ৪৫০ রোগী।

এছাড়া বান্দরবান বাজার এলাকার আই কেয়ার চশমার দোকানের দায়িত্বে থাকা রাকিব জানান, আই কেয়ার ও ফ্যাশন অপটিকস নামে তাদের দুটি দোকানে রোববার ও বুধবার ৫০০ টাকায় গড়ে ৬০ রোগীকে সেবা দেন ডা. বিজন কুমার দাস। বান্দরবান অপটিকস চশমার দোকানের দায়িত্বে থাকা বকুল বডুয়া জানান, প্রতি বুধবার ৫০০ টাকার বিনিময়ে গড়ে ১৫ রোগীকে সেবা দেন ডা. সৌমেন তালুকদার।

আই সেন্টার চশমার দোকানের দায়িত্বে থাকা মো. সাহেদ জানান, প্রতি বুধবার ৪০০ টাকার বিনিময়ে অন্তত ১০ রোগীকে সেবা দিয়ে থাকেন ডা. মোহাম্মদ সৌমিম (শামীম)। হিলভিউ হাসপাতালের ম্যানেজার মো. খালেদ জানান, প্রতি রোব, বুধ ও শুক্রবার দুইজন চক্ষু চিকিৎসক ৫০০ টাকার বিনিময়ে সেবা দেয়া হয়। এই তিনদিন অন্তত ৩০ রোগী পরামর্শ নিতে আসেন। চকিৎসা নিতে আসা মং হাই চিং মারমা জানান, চোখের চিকিৎসা হয় না এখানে। গত মাসে বৃদ্ধ বাবাকে চট্টগ্রাম থেকে চোখের চিকিৎসা করিয়ে এনেছি। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা হলে স্থানীয় অনেক হতদরিদ্ররা কম খরচে চিকিৎসা নিতে পারতো।

চক্ষু রোগী মো. আনিছুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছি। পরে চট্টগ্রাম পাহাড়তলি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। সদর হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় পরামর্শ নিতেও সুদূর চট্টগ্রামে যেতে হয়। বান্দরবান সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ এক যুগেরও আগে ডাক্তার সরোজ কান্তি নন্দী থাকাকালীন হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেয়া হতো। ২০১১ সালের মে মাসে চক্ষু চিকিৎসক পদের বিপরীতে যোগ দেন ডা. অজয় কিশোর বড়ুয়া। তবে তিনি চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হওয়ায় চোখের কোনো রোগীকে সেবা দেন না। ফলে সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর ধরে কোনো চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রয়েছে চক্ষু চিকিৎসা সেবা।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালের ৫ জুন থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত থানচি মেডিকেল অফিসার হিসেবে, পরে ২০১০ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত বান্দরবান সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডা. অজয় কিশোর বড়ুয়া। ২০১১ সালের ২৫ মে বান্দরবান সদর হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক পদের বিপরীতে যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

ডা. অজয় কিশোর বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০১১ সালে যোগদান করি। বান্দরবান সদর হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি (ডিজি অফিস) ভালো বলতে পারবে।

এ বিষয়ে বান্দরবান সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, পদ শূন্য থাকলে যে কোনো কর্মকর্তাকে পদায়ন করা যায়। সেগুলো ঢাকা থেকে করা হয়। এতে জেলা কার্যালয়ের কোনো ভূমিকা থাকে না। তাকে দিয়ে চক্ষু চিকিৎসা দেয়া না গেলেও জটিল কিছু সার্জিক্যাল অপারেশন করা হয়। এছাড়া চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

Link copied!