Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

লিবিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটে জিম্মি

আসাদুজ্জামান আজম

অক্টোবর ২৮, ২০২২, ০৫:০৮ এএম


লিবিয়ার শ্রমবাজার সিন্ডিকেটে জিম্মি

দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে জিম্মি বাংলাদেশিরা। ১৫ রিক্রটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে ঢাকাস্থ লিবিয়ান দূতাবাসও পাসপোর্ট জমা ও ভিসা স্ট্যাম্পিং নানা ধরনের হয়রানি করছে।

অবশ্য বায়রার হস্তক্ষেপে গত ২৪ অক্টোবর, থেকে সিন্ডিকেটের বাইরে পাসপোর্ট গ্রহণ ও ভিসা ডেলিভারি দেয়া শুরু করেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যে সব পাসপোর্ট জমা হয়েছে ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের পরে সেই সব পাসপোর্ট ফেরত দিতে অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সোহেল আহসান খান একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য সিন্ডিকেটের একজন প্রভাবশালী সদস্য মেসার্স সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রটিং এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুনের কাছে ১২টি পাসপোর্ট জমা দেন। শুরুতে স্ট্যাম্পিং বাবদ ১৫০ ডলার দেয়ার কথা থাকলেও স্ট্যাম্পিং শেষে পাসপোর্ট আটকে রেখে অতিরিক্ত এক হাজার প৫০০ ডলার দাবি করেন কেফায়েতুল্লাহ। এরপর থেকে শুরু হয় জটিলতা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ সিন্ডিকেট পাসপোর্ট আটকে রেখে অনৈতিক টাকা দাবি করছে, ফলে লিবিয়াগামী শ্রমিকরা পড়েছেন ভয়ানক বেকায়দায়। কয়েকজন ভুক্তেভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ আগামী ৯ নভেম্বরে শেষ হয়ে যাবে। সময়মতো ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরত না পেলে তাদের লিবিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিং এজেন্সিজ-বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ৫৫ শতাংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। দীর্ঘদিন পর লিবিয়ায় বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলেও ১৫টি রিক্রটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কারণে লিবিয়ায় পুনরায় জনশক্তি রপ্তানিতে হুমকি হয়ে পড়েছে। বায়রা সভাপতি আরও বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বায়রার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।

পরে ঢাকাস্থ লিবিয়া দূতাবাসেও বায়রার পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর প্রথম সিন্ডিকেটবিহীন ভিসা স্ট্যাম্পিংসহ পাসপোর্ট বিতরণ শুরু করেছে ঢাকাস্থ লিবিয়ান দুতাবাস।

তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নয়; বরং সিন্ডিকেটমুক্ত পরিবেশ চাই। খুব শিগগিরই লিবিয়া থেকে ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশে আসবে। তারা শুধু সিন্ডিকেটই নয়, স্বল্প খরচে লিবিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণে তারা দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করবেন।

লিবিয়া উত্তর আফ্রিকার সমৃদ্ধশালী একটি মুসলিম রাষ্ট্র। সে দেশে বাংলাদেশি দক্ষ-অদক্ষ কর্মীর অভিবাসন হওয়ায় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে আসছে। সেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় অভিবাসন ব্যয় কম, কিন্তু মাসিক বেতন-ভাতা বেশি। লিবিয়ায় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বেশি।

কারণ, বাংলাদেশিদের সে দেশের আইনশৃংঙ্খলা মানা ও আচরণগত সুনাম রয়েছে। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনকালের শেষ সময়ে ও পরবর্তী বছরসমূহে সে দেশে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও স্থানীয় মিলিশিয়া কর্তৃক আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্মী প্রেরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
 

Link copied!