Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

তরী ধরবে জামায়াত-বিএনপি!

আবদুর রহিম

নভেম্বর ২, ২০২২, ০১:০৪ এএম


তরী ধরবে জামায়াত-বিএনপি!

জামায়াতের ভোটের পলিসির শীর্ষ নেতারা কারাগারে। এর মধ্যেই দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন। দেশের সব আসনে রোকন বৈঠকের মাধ্যমে দিচ্ছেন প্রার্থীর ঘোষণা। সমপ্রতি ঢাকা মহানগরীর একটি সমাবেশে তিনি বলেছেন, ভিন্ন নামে জামায়াত নিবন্ধন পেতে আবেদন করবে। আইনজীবীরা কাগজপত্র তৈরি করছেন।

এমন ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে দলটির সমর্থিত দুটো দল ইসিতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে। একটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’-বিডিপি, অন্যটি ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’-এবি পার্টি। বিডিপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম (চান), সম্পাদক নিজামুল হকের (নাঈম) জামায়াতের সাথে এখনো সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা দল ছেড়েছেন এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। আর এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রত্যেকেই এক সময় জামায়াতের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন।

তবে তারা বছর দেড়েক আগে জামায়াত ত্যাগ করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে সিরিজ আন্দোলন করছে দলটি। এর মধ্যেই বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংক্ষেপে ‘বিএনএম’ নামে একটি দল নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করেছে।

সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। প্রথম সারির কোনো নেতাও নির্বাচনে যেতে ইচ্ছুক নন। তবে দলের এক সময়কার যারা সংস্কারপন্থি ছিলেন তারা যেকোনো উপায়ে এবারও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে তরীতে উঠতে চাচ্ছে। একই পথে হাঁটছে জামায়াতে ইসলামীও। বিএনপি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে না যেতে অটল থাকে তবে জামায়াত সরকারের ইশারায় ভোটে যেতে রাজি রয়েছে।

২০ দলের গতিবিধিতে নজর রাখা অভিজ্ঞরা বলছেন, একটি অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকার জামায়াত ও বিএনপির কিছু নেতার মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির মধ্যেও কিছু লোভী ব্যক্তি রয়েছেন যারা ক্ষমতার লোভে দল ত্যাগ করে সরকারের ইশারায় পা দিতে পারেন। আর অন্যদিকে নিবন্ধন বাতিল হাইকোর্টে ঝুলে থাকা জামায়াতে ইসলামীও যদি এ সুযোগে নতুন নামে নিবন্ধন পেতে সবুজ সংকেত পায় তাহলে তারা অবশ্যই ভোটে যাবে। আর জামায়াতের বর্তমান আমির সম্পূর্ণ ভোটের পলিসিতে আগ্রহী।  

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার অন্তত ৮০টি দল নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংক্ষেপে বিএনএম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি আলোচনায় রয়েছে। এ তিনটি দল তাদের দলীয় কার্যালয়, দলের কার্যক্রমসহ সব বৃত্তান্ত উপস্থাপন করেছে। বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেলে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তিনটি ভোটে অংশগ্রহণ করতে নিবন্ধন পেয়ে যেতে পারে বলে বেশি শোনা যাচ্ছে।  

গত ২৩ অক্টোবর নীরবে ৫৫/১, পুরানা পল্টন  বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই ঠিকানা ব্যবহার করে  ড. আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আবেদন করেন। যিনি দলটির আহ্বায়ক। তার বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। বিএনপির মধ্যে যারা সংস্কারপন্থি বিভিন্ন সময় জিয়া পরিবারকে মাইনাস করতে চেয়েছেন তাদের একটি অংশ এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে যারা সংসদে রয়েছেন তাদের দু’-একজনও এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়াপন্থি গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা আমার সংবাদকে বলেন, ‘ষাটের দশকে যে নেতা ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন, ১৯৯১ সালের পর দুইবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে নির্বাচনে হেরে    
যান অথচ একাদশ সংসদ নির্বাচনে একমাত্র ওই নেতা বড় ব্যবধানে জিতে যান। যেখানে বিএনপির অন্য সাবেক জনপ্রিয় মন্ত্রী-এমপিরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে ভরাডুবির শিকার হন।

সেই নেতাই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বলেছিলেন, ‘আপনার বিবেচনায় যাকে ইচ্ছা, তাকেই ভোট দিন। আমি সেই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যখন দলের পক্ষে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে, নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছে সেখানে বিএনপির প্রতিনিধিত্বকারী নেতা ভোট চেয়েছেন সুশীলদের ন্যায়, বামপন্থিদের ন্যায়, বুদ্ধিজীবী কবি-সাহিত্যেকদের ন্যায়! সেই নেতাই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাননি, বন্দি খালেদা জিয়ার পক্ষে ভোট চাননি, জিয়াউর রহমানের পক্ষে ভোট চাননি এমন সব জবাব দলের ভেতর এখনো অজানা। আসলে বিএনপিতে তিনি কী চাচ্ছেন এখনো অজানা।

ভোট এলে জোট ঐক্য নিয়ে ওই নেতা আন্দোলন করেন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও তিনি মাঠে নেমেছেন। অথচ খালেদা জিয়ার জন্য কোনো আন্দোলনের ডাক দেননি। প্রেস ক্লাবে দু’-একটি সমাবেশে ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। যে নেতা খালেদা জিয়ার জন্য ভূমিকা পালন করতে পারেন না, মুক্তি নিশ্চিত করতে সরকারকে বাধ্য করতে পারেন না, সেই নেতা ভোট এলে সমাবেশের প্রধান নেতা হয়ে যান; হুঁশিয়ারি দেন। তার পক্ষে সরকারের ইশারায় অনেক কাজই করা সম্ভব। বিএনপি কৌশলে একটি সংগঠন করে ফেলারও ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। ভোটে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ বলে মনে করছেন তিনি। এবারও ওই নেতারা সাথে অন্তত শীর্ষ ৫০০ নেতা ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছেন বলেও দাবি উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ  আমার সংবাদকে বলেন, ‘যারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ব্যবহার করে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছেন তারা সরকারের লোক। দেখেন এখনো দেশে অর্ধশত বছর রাজনীতি করছে, যাদের অবস্থান আছে তারাও এখনো নিবন্ধন পাচ্ছে না। অথচ নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু লোককে দিয়ে এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জায়েজ করার জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সরকার চাচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ জন্য অনেকগুলো লোককে দিয়ে বিএনপি ভোটে গেছে এমন ষড়যন্ত্রই হচ্ছে। কিন্তু যারা বিএনপিকে ভালোবাসে তারা কেউ ভোটে যাবে না। এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনই বিএনপির মৌলিক দাবি।’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘নতুন দল নিবন্ধন কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শর্ত পূরণ করেছে কি-না, গঠনতন্ত্র ঠিক আছে কি-না সব দেখা হবে।  যদি শতভাগ শর্ত পূরণ হয়, তাহলে নিবন্ধন দেয়া হবে। শর্তপূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন পাবে না। এ বিষয়ে আমাদের সব ধরনের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। চিঠিও দেয়া হয়েছে দলগুলোকে।’

Link copied!