ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

সংকটেও আশার আলো

জাহিদুল ইসলাম

নভেম্বর ৩০, ২০২২, ০১:১৩ এএম

সংকটেও আশার আলো

বৈশ্বিক মহামারি এবং তৎপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। দেশে দেশে জ্বালানি সংকট ও মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ। প্রায় প্রতিটি দেশেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলেও কিছুটা ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশে।

নানা সংকটের মাঝেও ধরে রেখেছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হলো তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকট ও মূল্যস্ফীতিতে এই খাত অনেক সমস্যায় পড়লেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় আগের মতোই রয়েছে। অবশ্য এই খাতের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রেখে সরকার ইতোমধ্যে জ্বালানি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কালো অন্ধকারেও রপ্তানি আয়ে আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্প। প্রধানত তিনটি মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসে।

এগুলো হলো— রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় এবং দাতা দেশগুলোর ঋণ ও অনুদান। কিন্তু জ্বালানি সংকট সৃষ্টির পর ক্ষতির মুখে পড়েন অনেক পোশাক মালিক। কারখানা চালু রাখতে বেশি দামে ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন ব্যয় বাড়ালেও বাড়েনি আয়। ফলে ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের। মহামারিকালেও যে খাতটি সাবলীল কার্যক্রম চালিয়ে গেছে জ্বালানি সংকটে সেটিও প্রায় স্থবির। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যেন পাল্টে দিয়েছে পুরো পরিস্থিতি। কঠিন হচ্ছে হিসাব মেলাতে। এরই মাঝে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন যেন নতুন করে জাগিয়েছে আশার আলো।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আরএমজি খাতে রপ্তানি আয় ছিল চার হাজার ৪৭৯ কোটি ৪৮ লাখ বা ৪৪.৭৯ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই আয় ছিল যথাক্রমে ৩২.৮৭ এবং ২৮.৯৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতিবছরই আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল আরএমজি খাত। এ সময় প্রতিমাসে গড় রপ্তানি আয় হয়েছে ৩.৭৩ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু বৈশ্বিক সংকট শুরুর পর গত জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০.৭৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে ৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। সংকটপূর্ব প্রতিমাসের গড় রপ্তানি আয়ের তুলনায় যা ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে এটা বুঝা যায়, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বিগত অর্থবছরের চেয়েও ভালো অবস্থানে থাকত এই খাত।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রায় সব দেশই জ্বালানি, মূল্যস্ফীতি ও ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর সংকটে পড়লেও বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকা দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুতই কমতে থাকে দেশের রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ১৫ মাসের ব্যবধানে তা ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৭.৫৫ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে প্রতিমাসে আমাদের গড় বাণিজ্য ঘাটতি ২.৫১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

অথচ গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির মোট পরিমাণ ছিল ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলার এবং গড়ে প্রতিমাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২.৭৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গড় মাসের হিসাবে বিগত বছরের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমে এসেছে। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সৃষ্ট সংকটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিশ্বের বহুদেশে মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়ালে কৃচ্ছ্রতা সাধনের পথে হাঁটে দেশগুলো। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন পোশাক ক্রয় কমিয়ে দিলে ক্রয়াদেশ ঘাটতিতে পড়ে দেশের আরএমজি খাত। এই কমার হার প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানিয়েছে রপ্তানিকারকরা। কিছুদিন আগেও এক প্রেস ব্রিফিংয়েও এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

গত ১৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পোশাক খাতে সংকট শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ, যা অক্টোবরে আরও বাড়বে। তিনি সে সময় বলেছিলেন অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি ২০ শতাংশ কমতে পারে। বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে অনেক বায়ার অর্ডার হোল্ড (ক্রয়াদেশ স্থগিত) করেছে, কেউ আবার বাতিল করেছে। তাছাড়া পরিবহন ব্যয় বেড়েছে প্রায় চারগুণ। পাশাপাশি দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যে সংকট তাতে যতটুকু উৎপাদন করার কথা, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ডেনিয়েল জানান, আবাসিক এলাকায় ইলেকট্রিসিটি শর্টেজ এখন কিছুটা কম হলেও শিল্পাঞ্চলে কোথাও কোথাও এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত পাচ্ছি না। দীর্ঘ সময় যে বিদ্যুৎ থাকছে না তা নয়, দেখা গেল- বিদ্যুৎ আসে, আবার যায়। এজন্য আমাদের বিপুল পরিমাণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহারে আমাদের ব্যয় প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের লোকাল মার্কেট অ্যাক্সেসরিজের দাম বেড়েছে। ট্রান্সপোর্ট ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে সব মিলিয়ে যখন আমার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। যখন এই ব্যয় নিয়ে আমরা ক্রেতার কাছে যাচ্ছি তারা এগুলো মানতে চায় না। এর দুটি প্রভাব পড়তে পারে।

প্রথমত, বায়ার যদি এই দরে ক্রয় করতে রাজি হয় তাহলে আমাদের রপ্তানির ভলিউম বাড়বে। দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রাইস আন্ডার কাটিং শুরু হতে পারে। মালিকরা ক্ষতি সত্ত্বেও কমমূল্যে ক্রয়াদেশ নেবে, কারণ কারখানা চালু রাখতে হবে। এই অবস্থা তৈরি হলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়বে এই খাত। এছাড়া ডলারের দাম ফ্রি ফ্লোটিং থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এক বছর আগে ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা, বর্তমানে তা ৯৫-৯৬ টাকায় ওঠানামা করছে। আমরা মনে করি, যদি ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে আমরা বিদ্যুতের মূল্য বেশি হলেও তা মোকাবিলা করতে পারব।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রেট মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিয়েছে এমনটা জানালে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা এখনও সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে বলে মনে হয় না। নির্দেশ মানলে ডলার কেনা-বেচায় ব্যবধান এক টাকা হতো। কিন্তু ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের এই ব্যবধান এখনও বেশি। এমনটা হলে সার্বিক অর্থনীতির জন্য তা ভালো হবে না।

কারণ আমদানি হলো রপ্তানির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। তবে সবকিছুর পরও আগামী দিনগুলোতে পোশাক খাত আবার ভালো অবস্থানে যাবে বলে আশা করেন। তিনি বলেন, ইউরোপে এখন সাসটেইনেবল অবস্থায় যাচ্ছে। আশা করছি আগামী কোয়ার্টারের মধ্যে আমরা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।

এদিকে নিত্যপণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে দ্রুতই রিজার্ভ কমতে থাকলে ব্যাংকগুলোও এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করে। তবে রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে আমদানি হ্রাসের পরিকল্পনা সঠিক নয় বলেই মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, আমদানি কমালে ট্যাক্স কমে যাবে। তাছাড়া আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের দুটি অতি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কটনবেজ গার্মেন্টসের জন্য কটন, আরেকটি নন-কটনের জন্য ম্যানমেইড ফাইবারও আমদানি করতে হয়। এগুলোর কোনোটিই আমাদের দেশে হয় না। তবে এই মুহূর্তে আমাদের বিলাসী পণ্য আমদানি থেকে বিরত থাকা উচিত।

জানা গেছে, এসব পণ্য আমদানির পর দেশেই সুতা, ফেব্রিকের পাশাপাশি অন্যান্য এক্সেসরিজের কাজ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এসব কাঁচামাল আমদানিতে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি কাস্টমস বন্ড এবং বন্দরে হয়রানির কারণেও বিলম্বিত হচ্ছে উৎপাদন।

তারা বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প সময়ের সঙ্গে বাধা। সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারলে প্রতিযোগিতায় ছিটকে পড়তে হয়। রপ্তানির ক্ষেত্রে যে শঙ্কা, সে বিষয়ে বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, এখানে দুটি সিগমেন্ট আছে। একটি বৈশ্বিক, অপরটি স্থানীয়। বৈশ্বিকটা হলো- যে পরিস্থিতি তাতে অর্ডার কম পাচ্ছি।

আর স্থানীয় যেটা সেখানে গ্যাস-বিদ্যুতের একটা সমস্যা। অর্ডার এলে আমরা অনটেস্ট শুরু করতে পারছি না এবং যুদ্ধের কারণে আমাদের অনেকগুলো মাল রেডি পড়ে আছে। এক্সপোর্ট করতে পারছি না এবং পেমেন্টও পাচ্ছি না। এসব ঝামেলায় আছি আমরা। ক্রাইসিসটা না হলে এক্সপোর্ট আরও বেশি হতো। রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিবছরই ইপিবির একটা টার্গেট থাকে, আমরা সেই টার্গেট থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি।

Link copied!