Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

বিশ্ব এইডস দিবস আজ

উচ্চঝুঁকিতে তিন শ্রেণির মানুষ

মাহমুদুল হাসান

ডিসেম্বর ১, ২০২২, ০৩:৩৪ এএম


উচ্চঝুঁকিতে তিন শ্রেণির মানুষ
  • দেশে ১৪ সহস্রাধিক এইডস রোগী রয়েছে
  • শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের সংক্রমণ বেশি
  • মাত্র ২৩ জেলায় শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে
  • ২০৩০-এর মধ্যে এইডসমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়

ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ এইডসের উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারে এইচআইভি সংক্রমণের উচ্চহার লক্ষ করা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশে ১৪ সহস্রাধিক এইডস আক্রান্ত রোগীর বিচরণ রয়েছে। তার মধ্যে ৯ হাজারের কম রোগীকে শনাক্তের আওতায় আনা হয়েছে। এখনো শনাক্তের বাইরে পাঁচ সহস্রাধিক রোগী। সব রোগী শনাক্তের আওতায় না আসার অন্যতম কারণ— দেশের প্রতিটি জেলায় নেই এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা। যদিও দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ রয়েছে; কিন্তু অবহেলায় রোগটি যেকোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এছাড়াও দেশে এখনো এইডস বিষয়ে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সেই সাথে বৈষম্য ও কুসংস্কারও কম নয়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, সমকামী ও হিজড়া জনগোষ্ঠী। এদের মধ্যে কনডম ব্যবহারের হার একেবারেই নগণ্য। শুধু ২১ শতাংশ যৌনকর্মী প্রতিটি যৌনকাজে কনডম ব্যবহার করে থাকে। আবার শিরায় মাদক গ্রহণকারীরা একে অন্যের মধ্যে সিরিঞ্জ ভাগাভাগি করে থাকে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সার্ভিলেন্স পরিচালনা করেছিল।

সেখানে দেখা গেছে, এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভির প্রিভিলেন্স ১ থেকে ৪ শতাংশ। শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। পুরুষ যৌনকর্মী কিংবা সমকামীদের মধ্যেও এইচআইভি সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। এ ছাড়াও যেসব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এইচআইভির তথ্য সংগ্রহ করে তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য ফেরত অভিবাসী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য যাওয়ার আগে সব এইচআইভি পরীক্ষার বিধান রয়েছে। গামকার ল্যাবরেটরিতে এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশে ফেরত আসার পর এইচআইভি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক নয়। ফলে ফেরত আসা সব রোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ভবঘুরে, পরিবহন শ্রমিক, ভাসমান যৌনকর্মী ও প্রবাসীদের মাধ্যমে এইডস বেশি পরিমাণে ছড়ায়। এদের সবার আগে শনাক্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এদিকে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে রোগটি নির্মূল করার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দ্বিতীয় ট্র্যাক স্ট্রাটেজি গ্রহণ করা হয়েছে। যা ৯৫-৯৫-৯৫ শতাংশ নামে পরিচিত।

২০২১ সালের জুনে এই স্ট্রাটেজি অনুমোদন করে জাতিসংঘ। এর মানে হলো, ৯৫ শতাংশ সব এইচআইভ রোগীকে শনাক্ত করা। ৯৫ শনাক্ত রোগীকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা। ৯৫ শতাংশ চিকিৎসারত রোগীর ভাইরাসের মাত্র নিয়ন্ত্রণে রাখা। ২০২১ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এসটিডি প্রোগ্রামের তথ্যমতে, ৯৫ শতাংশের বিপরীতে ৬৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এরপর ৯৫ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্যের বিপরীতেও ৭৬ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। আর ৯৫ শতাংশ রোগীর ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ৯৩ শতাংশের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অজ্ঞাত এইচআইভি এইডস রোগী শনাক্তের জন্য ২৩ জেলার সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি শনাক্তের পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। ১১টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে এইডস রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে এআরটি বা চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এইডস রোগী নিয়মিত ওষুধ খেলে সুস্থ থাকবে এবং অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে না। ১০টি সরকারি হাসপাতালে মা থেকে শিশুতে এইচআইভ সংক্রমণ প্রতিরোধে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

দেশের ৯টি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের মধ্যে এইচআইভি শনাক্তকরণ পরীক্ষা, এসটিআই পরীক্ষা, হেপাটাইটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। আক্তান্ত রোগীদের জেল হাসপাতাল থেকে এআরভি ওষুধও বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশের মধ্যে। এইডস মোকাবিলায় বেশ গুরুত্বসহ কাজ করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।এমন পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণকে এইডস সম্পর্কে সচেতন করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস-২০২২।

১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বে এ দিবসটি পালন করে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অসমতা দূর করি, এইডস মুক্ত বিশ্ব গড়ি’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এছাড়া আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চলতি বছরের এইডস পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। পাশপাশি আসিডিডিআরবি, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

জাতিসংঘের এইডস-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের মতে, বিশ্বে প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৫০০ জনেরই বয়স ১৫ বছরের নিচে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৯ মিলিয়ন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক লোক ৩৬ দশমিক ২ মিলিয়ন। মোট আক্রান্তের ১৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন নারী এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন শিশু।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। তার মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ৭৩২ জন। ২০২১ এইডসের নতুন রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৭৬ শতাংশ রোগীকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। সেবা নেয়ার পর ৮৮ শতাংশ মানুুষের এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা : দেশের প্রতিটি জেলায় এইচআইভি শনাক্তকরণ পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করা। সরকারি হাসপাতালেল, মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। প্রতিটি কারাগারে শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা। অভিবাসীদের জন্য এইচআইভ বিষয়ে বিশেষ সেবা চালু করা। এইডস বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করা। দরিদ্র এইডস রোগীদের সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা।

Link copied!