Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

চিংড়ির মূল্য হ্রাস

শঙ্কায় হোয়াইট গোল্ডখ্যাত অর্থনীতি

কাজী নাসীর উদ্দীন, সাতক্ষীরা

কাজী নাসীর উদ্দীন, সাতক্ষীরা

ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ১২:৪৬ এএম


শঙ্কায় হোয়াইট গোল্ডখ্যাত অর্থনীতি

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত এবং জাতীয় অর্থনীতি সুসংহত করার ক্ষেত্র হোয়াইট গোল্ড হিসেবে পরিচিত চিংড়িশিল্পের বাজার দরপতনের কারণে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। সাতক্ষীরা জেলার হাজার হাজার চিংড়িচাষির আশা-আকাঙ্ক্ষা, উচ্ছ্বাস এক কথায় তাদের হাসি ম্লান হতে চলেছে। বিশ্ববাজারে দেশের রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির বেশিরভাগ সাতক্ষীরা জেলা থেকে জোগান দেয়া হয়।

অন্যদিকে আমাদের দেশে যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন হয় তার উল্লেখযোগ্য অংশ এই জেলায় উৎপাদন হয় বিধায় সাতক্ষীরার অর্থনীতি দৃশ্যত চিংড়িকেন্দ্রিক। বাজারজাতকরণে চিংড়ির মূল্য এমনই আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে যে, চিংড়িচাষিরা ঘেরের চিংড়ি বাজারজাতকরণে অনীহা প্রকাশ করছে। ২০-৩০ গ্রেডের চিংড়ির স্বাভাবিক বাজার দর ছিল কেজি প্রতি ১০০০ থেকে ১২০০।

সেই চিংড়ি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০০০ থেকে ৭০০০ টাকায় এবং ক্ষেত্র বিশেষ সে অপেক্ষায় অনেক কম। অপেক্ষাকৃত ছোট, ক্ষুদ্র অর্থাৎ গ্রেডবিহীন চিংড়ির বাজারদর আগের মতো না থাকলেও কিছুটা সহনীয়। ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

চিংড়ি উৎপাদনকারী, আড়ৎদার, ডিপোমালিক ও রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৈশ্বিক কারণে চিংড়ির এই দরপতন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ভূ-রাজনীতির বিরূপ প্রভাব চলমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। যার প্রেক্ষাপটে অন্যতম চিংড়ি আমদানিকারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।

পাশাপাশি সন্দেহের তীর এক শ্রেণির ডিপো ও রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টদের দিকে রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে দেশীয় বাজারে চিংড়ির মূল্য কমিয়ে দিতে পারে। তবে আশার কথা, দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে চিংড়ির চাহিদা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অপরাপর বড় বড় শহরগুলোতে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার আশাশুনির বুধহাটা, শোভনালী, মহেশ্বরকাটি, উপজেলা সদর, পারুলিয়া, গাজীরহাট, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বংশীপুর, ইশ্বরীপুর, ভেটখালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ককসিট ভর্তি চিংড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে চাহিদাও।

বিশ্ববাজারে যেমন মূল্য ছিল বর্তমান সময়ে দেশীয় বাজারে তেমন মূল্য না পেলেও চরম বিপর্যয়ের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। চাপড়ার চিংড়ি ব্যবসায়ী মামুন জানান, ইতোপূর্বে জমির হারি, চিংড়ি খাদ্য, ঘের প্রস্তুত শ্রমিক, নৈশপ্রহরী, রেনু পোনার মূল্য সবই বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু উৎপাদিত চিংড়ির মূল্য প্রতিনিয়ত নিম্নমুখী বিধায় চিংড়িচাষিরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ চিংড়িচাষি ব্যাংক ঋণসহ এনজিও ঋণ নিয়ে চিংড়ি ঘেরে বিনিয়োগ করেছে বিধায় ঋণ পরিশোধে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। চিংড়ি বাজার দরের অনাকাঙ্ক্ষিত দরপতনে সরকারের মৎস্য দপ্তরকে বাজার মনিটরিং করা জরুরি। বাজার তদারকি থাকলে চিংড়ির বাজার দর নিয়ে অশুভ এবং অনৈতিকতা ঘটলে তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ পাবেন চিংড়িচাষিরা। চিংড়ির মূল্য হ্রাসের এই চরম দুঃসময়ে চিংড়িচাষিদের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবং নতুন উদ্যমে চিংড়ি চাষ করতে প্রণোদনা এবং সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা সময়ের দাবি।

Link copied!