Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিঘ্নিত মেধা

মুরতুজা হাসান

মুরতুজা হাসান

ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ০১:০৭ এএম


সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিঘ্নিত মেধা

অটো পাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মেধার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে ধারণা করছেন শিক্ষাবিদরা।

তারা বলছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে করা প্রশ্নে অনেক প্রশ্ন থেকে কম উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আরও সংক্ষিপ্ত করে পড়ছে। এভাবে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়েও ভালো নম্বর পেয়ে যাচ্ছে তারা। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ এর হারও বেড়েছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।

এভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে যদি পরীক্ষা চলতে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী জীবনে হুমকির মুখে পড়বে। অনেক কষ্ট করেও এটা থেকে উত্তরণ হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। পরিপূর্ণ মেধার মূল্যায়নের জন্য পরিপূর্ণ সিলেবাস অনুসারেই পরীক্ষা নেয়া উচিত। এভাবে শর্টকাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে গ্যাপ থেকেই যাবে।

এই পদ্ধতিকে দ্রুত বিদায় দিয়ে ২০২৩ সাল থেকে পরিপূর্ণ সিলেবাস অনুসারে পরীক্ষা নেয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।পরীক্ষা বলতে যা বোঝানো হয় তা হচ্ছে না এ পদ্ধতিতে। অনেক বিষয়ে না পড়েও ভালো ফলফল করলে ভবিষ্যতে এ সময়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। অবিলম্বে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের এ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

করোনাকালে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর স্কুল-কলেজ খুলেছিল ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও পরপর দু’বছর মাধ্যমিক পর্যায়ের এসএসসি ও সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এইচএসসি ও সমমানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হয়।

এদিকে এমসিকিউ পরীক্ষাতেও প্রশ্ন কমিয়ে আনা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা শুরু হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মধ্য দিয়ে। এর আগে মহামারিজনিত পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া, কিছু কিছু বিষয় পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর ফলে মেধার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান শিক্ষাবিদরা। তবে খুব দ্রুত এই পদ্ধতিকে বিদায় জানানোর পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘পরিপূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু যেহেতু কোভিড পরিস্থিতি এবং কোভিডোত্তর পরিস্থিতিতে আমরা একটু জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সে জন্য ছেলেমেয়েদের তেমন ক্লাস করানো যায়নি। তথ্যপ্রযুক্তি আমরা সবার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সরকার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়েছে।

এতে মেধার একটি মূল্যায়ন হয়, কিন্তু পরিপূর্ণ মেধার মূল্যায়নের জন্য পরিপূর্ণ সিলেবাস অনুসারেই পরীক্ষা নেয়া উচিত। তবে সেটি ২০২৩ সাল থেকে আশা করা যায়, পরিপূর্ণ সিলেবাসেই পরীক্ষা হবে। পরিপূর্ণ আর সংক্ষিপ্ত এই দুটোর মধ্যে যেমন পার্থক্য আছে মেধার মূল্যায়নে সেই পার্থক্যটা কিছুটা প্রতিফলন হবে এটিই খুব সুন্দর।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান আমার সংবাদকে বলেন, ‘যেকোনো জিনিস শর্টকাট করতে গেলে তো ওইভাবে মূল্যায়ন হয় না। এটি তো একটি শর্টকাট পদ্ধতি, কিছু জিনিস তো গ্যাপ থেকেই যাবে। এটি যেকোনো বিষয়ই হোক। এটি পূরণ করতে গেলে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে শিক্ষার্থীদের কষ্ট করতে হবে, শিক্ষকদেরও কষ্ট করতে হবে।’

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘অটোপাস কিংবা শর্টকাট একটি আপতকালীন নিউ ‘নরমাল’ মেধা মূল্যায়ন পদ্ধতি। প্রকৃত মেধার মূল্যায়নে এর ভূমিকা অকিঞ্চিৎকর। এর মাধ্যমে অর্জিত ফলাফল ও স্বাভাবিকভাবে পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়ায় অর্জিত ফলাফলের মধ্যে সূক্ষ্ম গুণগত তারতম্য থাকবে। তবে ‘মন্দের ভালো বলে যে ব্যাপারটা রয়েছে তার আলোকেই বৈশ্বিক করোনা সঙ্কটের কালে এই ব্যবস্থাকে কিছুটা প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে, এর আপেক্ষিক গুরুত্ব বিবেচনায়। তবে যত দ্রুত এই ব্যবস্থাকে বিদায় জানানো যায় ততই মঙ্গল।’

Link copied!