ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৩:০৬ পিএম

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা

জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বাড়ছে বারবার। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ওষুধ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, কাঁচামাল, প্যাকেজিং ম্যাটেলিয়ালের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন, বিপণন ও অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে গেলো বছর কয়েক দফায় বেড়েছে ওষুধের দাম। ফের ওষুধের দাম বাড়ানোর আলোচনা উঠেছে।

 ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে কাঁচামাল আনতে সমস্যা হচ্ছে, যার কারণে ওষুধের দাম বাড়াতে আমাদের চাপ রয়েছে। চাপ সামাল দিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা হচ্ছে। 

ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রকাশিত ষষ্ঠ বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের (১৯৯৭-২০২০) এর তথ্য মতে, স্বাস্থ্যসেবা খাতে রোগীর খরচ হচ্ছে ৬৯ শতাংশ। যার বেশির ভাগ ব্যয় হচ্ছে ওষুধের পেছনে। আবার ওষুধের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সক্ষমতা হারাবে। দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র সীমার নিচে আরও বড় জনগোষ্ঠী নেমে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের বাড়তি সুবিধা নেয়াও কম দায়ী নয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রায় সময় আমি শুনি নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ বেশি লেখার জন্য অনেক চিকিৎসক বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে থাকেন। 

অনেকে নাকি ওষুধ কোম্পানির টাকায় ওমরাহ করে থাকেন। এমনও শুনি ওষুধ কোম্পানি অনেক চিকিৎসকদের ফ্ল্যাটও কিনে দিয়েছে। চিকিৎসকরা এসব সুবিধা নিলে তো ওষুধের দাম বাড়বে। কিছু দিন আগে যেসব ক্যালসিয়াম ট্যাবলেড প্রতি পিস পাঁচ টাকায় কেনা যেত এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ টাকায়। আমারই তো কিনতে কষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের তো ওষুধ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। এই বক্তব্যের সত্যতা মেলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্যে। 

তিনি বলেন, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপহার কমিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন। ওষুধ কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের এসব বাড়তি সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আর নতুন নয়। বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রযেছে তারা কম দামে কাঁচামাল কিনে বেশি দামে ক্রয়াদেশ দেখিয়ে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। 

অভিযোগ রয়েছে— চীন, ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি করেও বিভিন্ন উৎপাদক উন্নত বিশ্বের যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি থেকে চড়া মূল্যে কাঁচামাল আমদানির কথা বলে। এতে ওষুধের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে দেখিয়ে ওষুধের দাম বাড়ায়। এসব অভিযোগ বিষয়ে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধের দাম ফের আরেক দফা বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে। এসব থেকে পরিত্রাণের জন্য সবার আগে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সিস্টেমে হাত দিতে হবে। তাহলে সমস্যা থেকেই যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার সাথে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি। প্যাকেজিংয়ের সাথে সমন্বয় করে ওষুধের দাম নির্ধারণ সঙ্গত। 

আবার সরকার ওষুধের দাম না বাড়িয়েও অন্যভাবে ওষুধ কোম্পানির সাথে সমন্বয় করতে পারে। ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির বিষয়ে এমন অভিযোগও রয়েছে উন্নত দেশের কাঁচামাল আমদারি কথা বলে কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচ বেশি দেখায়। অথচ তারা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি নয়— চীন, ভারত থেকে কম দামে কাঁচামাল আমদানি করে।’

সরকার সমস্ত জেনেরিকের ওষুধ যদি ফর্মুলার আওতায় নিয়ে আসতে পারে তাহলে ওষুধের দাম কমে যাবে। ১৫০ জেনেরিকের ওষুধের দাম ফর্মুলার আওতায় নির্ধারণ করা হয়। এসব ওষুধে লাভ কম হয় বলে মার্কেটিং করে না। অনেকে তো ফর্মুলার আওতায় দাম নির্ধারণকৃত সব ওষুধ উৎপাদনও করে না। দেশের সব জেনেরিকের ওষুধ ফর্মুলার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে মার্কেটিংয়ের নামে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সেসব বন্ধ হবে। ওষুধ বিষয়ে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকতে হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ১১৭টি ওষুধ সরকার মূল্য নির্ধারণ করে। বাকি প্রায় ১৫শ কোম্পানির ৩৭ থেকে ৪২ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। এসব ওষুধের দাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারক  নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নির্বিকার। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মও এমনটিই নির্দেশ করে। 

দেশের ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতেও তা ছিল। কিন্তু, ১৯৯৪ সালে ওষুধ কোম্পানির দাবির মুখে বলা হলো, ১৭ শতাংশ ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে। বাকিটা নির্ধারণ করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। এটিকে বলা হলো ইন্ডিকেটিভ প্রাইস। সম্প্রতি ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়িয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্যারাসিটামলের ১০টি ও মেট্রোনিডাজলের ছয়টি জেনেরিকের দাম বেড়েছে। এর বাইরে দেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত প্রায় ৪২ হাজার ব্রান্ডের ওষুধের দাম নির্ধারণ করে প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারক। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। 

প্রায় সাত বছর পর আবারো বাড়ানো হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯ থেকে ১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘ওষুধের দাম বৃদ্ধি যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আমরা শিগগিরই মন্ত্রীর নেতৃত্বে ওষুধের দাম নিয়ে বসব। ওষুধের মার্কেটিং পলিসি, প্যাকেজিংসহ অন্যান্য ব্যয় কমানো সম্ভব হলে ওষুধের দাম কমার সুযোগ আছে।’

Link copied!