Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

প্রস্তুত ইসি তবুও সংশয়

আবদুর রহিম

জানুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০২:০৪ পিএম


প্রস্তুত ইসি তবুও সংশয়

২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছরের শেষদিকে হবে তফসিল ঘোষণা। এ লক্ষ্যেই চূড়ান্ত পথে নির্বাচন কমিশন। তবে সমপ্রতি মাঠে ছড়িয়ে পড়ে শঙ্কার খবর। নির্বাচন নাকি অন্য কিছু। ক্ষমতাসীন দলের কিছু মিত্ররা জানায়, হয়তো এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাও হতে পারে। 

অন্যদিকে, বিএনপি সরকারের পদত্যাগ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে ১০ দফায় সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে। তবে নেতৃত্ব ও মাঠ গুছিয়ে শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ। তারা বলছে কমিশনও ভাঙবে না, তত্ত্বাবধায়কও হবে না— ভোট হবে শেখ হাসিনার অধীনে। এ পরিস্থিতে এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দৃষ্টি দেয় বিশ্ব। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ১১টি দেশের প্রতিনিধি ইসির সাথে বৈঠক করেন। 

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, মূলত আমাদের ইলেকশন প্রস্তুতিটা কেমন এ বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য তারা এসেছেন। আমাদের ইলেক্টোরাল রোলগুলো আমরা অবহিত করেছি। ইলেকশন পার্টিসিপেটরি কনটেস্ট হবে— এগুলো অবহিত করেছি। আমাদের উদ্যোগ আছে কি-না এবং আমাদের বর্তমান অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা জানিয়েছি, আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের রোড অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। 

আমাদের প্রস্তুতি রয়েছি এবং আমরা যথাসময়ে ইলেকশন করব। তিনি আরো বলেন, মতপার্থক্য থাকার কারণে নির্বাচনি পরিবেশ পুরোপুরি অনুকূল নয়। তবে অচিরেই এই মতপার্থক্য দূর হবে এবং সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। কিন্তু নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারিনি। আমরা বলেছি— যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সে হিসাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০২৩ অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য চাপের বছর হবে এবং পরাশক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। 

ফলে মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। জনগণের সাথে যোগাযোগ রেখে, তাদের সামনে মন্দার বাস্তব কারণগুলো তুলে ধরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ। 

ফলে এর আগেই দলকে প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল। কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কঠোর বার্তা দিয়ে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো মনোযোগ নেই বিএনপির। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি-না, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে দলটি। 

এভাবে আবারও মানববন্ধন, লংমার্চ, গণঅনশন, সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়েও ভাবা হচ্ছে। অবস্থা বুঝে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ঠিক করবে যুগপৎ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা দলটি।

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, এবারের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এ নির্বাচন সবার কাছে শতভাগ গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি আমাদের দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সভায় বলেছেন, প্রয়োজনে বিরোধী দলে যাব। এত বড় একটি ঘোষণাকে অনেকে হালকাভাবে নিলেও আমরা দলের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছি।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। আমাদের কথা পরিষ্কার— এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। আমরাও নির্বাচনে যাবো না। 

তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। তবে সমপ্রতি বিস্ফোরক মন্তব্যে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, ‘এবার নির্বাচন হবে কি-না, এটিও এখন বড় একটি কারণ রয়েছে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সব কিছু মিলিয়ে হয়তো যথাসময়ে এবার নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশে আগামীতে যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, এখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের সীমাবদ্ধতা আছে।

গতকাল ১১টি দেশের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে চায়। আমরা বলেছি, অতীতেও নির্বাচন গণমাধ্যম কর্মীরা কভার করেন এবং পর্যবেক্ষকরাও থাকেন। সামনের নির্বাচনের সময়েও আমাদের দিক থেকে সব ওপেন করে দেয়া হবে। আমরা কোনো অন্তরায় করব না। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে আমাদের পলিসি অনুযায়ী তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা সেগুলো পাঠিয়ে দেবো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। 

বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে সুরাহা করতে হয়। পলিটিক্যাল ডায়লগের জন্য কোনো পক্ষকে নির্বাচন কমিশন বলেছে কি-না প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমি যেটা ওনাদেরকে বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে এগ্রিমেন্টের প্রয়োজন আছে। যেন ইলেকশনটা সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এই আবেদনটা আমরা প্রথম থেকে করে আসছি। 

তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন যে নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অ্যালাউ করবেন। তার সঙ্গে বিদেশি ডেলিগেট দেখা করার পর এমন আশ্বাস দেয়ায় তারা আনন্দিত। আমরাও আনন্দিত। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যদি ভোট দেখেন তাহলে বিদেশিরাও দেখবে আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে।

ইভিএম নিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না : মতবিনিময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ইভিএম সম্পর্কে জানতে চান জানিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম সম্পর্কেও তারা প্রশ্ন করেছেন। ইভিএম নিয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ ইভিএম এভেইলেবল হবে কি-না এবং আমরা কি পরিমাণ ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারব— এ বিষয়ে এখন নিশ্চিত হতে পারিনি।

সবাই চায় অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন —ইইউ :  ইইউর হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোনো সুপারিশ নেই। নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন চার্লস। তিনি বলেন, আমরা ইইউ মিশন থেকে ইসির সঙ্গে বৈঠক করেছি। নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সাথে আমাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। 

গত বছরের জুলাইয়ে শেষ বৈঠকের পর থেকে এটির আরও অগ্রগতি হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিদেশি মিশনের সাথে কথা বলার জন্য আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইইউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়। ইসি এ বিষয়ে ইতিবাচক। আমরা মনে করি, ইসির কাজ এবং অগ্রগতিতে প্রযুক্তিগত ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এই ইইউ কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে ইসির প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আমাদের মধ্যে আলোচনা বেশি হয়েছে। সবাই চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই আমরা ইসির কাছে কোনো সুপারিশ করিনি। তারা তাদের কাজ করবেন।

মতবিনিময়ে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব মিশন ব্রেন্ড স্পাইনার, ডেনমার্কের অ্যাম্বাসেডর ইউনি স্ট্র্যাপ পিটারসন, সুইডেনের অ্যাম্বাসেডর আলেকজান্ডার বার্গ বন, জার্মানির অ্যাম্বাসেডর আচিম টোস্টার, কিংডম অব নেদ্যারল্যান্ডসের অ্যাম্বাসেডর এনি গিরার্ড ভ্যান লুইন, ফ্রান্সের ডেপুটি হেড অব মিশন গিলিয়াম এড্রেন ডে কের্ডেল, ইতালির ডেপুটি হেড অব মিশন মাটিয়া ভেনচুরা, স্পেনের হেড অব মিশন ইগনাসিয়ো সাইলস ফার্নান্দেজ, সুইজারল্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর নাথালি চুয়ার্ড, নরওয়ের অ্যাম্বাসেডর এস্পেন রিক্টার সেভেন্ডসেন প্রমুখ বৈঠকে ছিলেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি —ইসি হাবিব : অন্য একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। বাংলাদেশের সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ভোট নিয়ে কেউ যেন আঙুল তুলতে না পারে সে জন্য সজাগ রয়েছে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রত্যেক সাংবাদিকের ক্যামেরা হলো নির্বাচন কমিশনের চোখ।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘কূটনৈতিক বিষয়ে প্রত্যেকটি দেশে কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় রয়েছে। সেগুলোতে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর আমরা সবসময় দেখে আসছি, এ বিষয়গুলো তখই ঘটে যখন রাজনৈতিক বিভক্তি দেখা দেয়। 

তখন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু গোপন বিষয় বিদেশিদের জানিয়ে দেন। এটি খুবই অশুভ লক্ষণ। তারা ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দলকে চাপ সৃষ্টি করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।  সমপ্রতি আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের নির্বাচন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিদেশিরা কথা বলছেন। এর মানে হচ্ছে—  তাদের কাছে এসব অনিয়মের কিছু দলিল হাতে এসে পৌঁছেছে। তাই তারা জোর দিয়ে কথা বলছেন। এটি কোনোভাবেই ভালো বিষয় নয়।’

টিএইচ

Link copied!