আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ
মে ৭, ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম
আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ
মে ৭, ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় শ্মশান সংস্কার নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ বদলির ঘটনা এখন একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও কিছু নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, ইউএনওকে সরিয়ে দেয়ার পেছনে রয়েছে পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং মিডিয়া ট্রায়াল। তবে প্রশাসনিক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের প্রমাণ মেলেনি।
জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা ইউনিয়নের কাঁচামাটিয়া নদীর পাশে অবস্থিত একটি প্রাচীন শ্মশান এলাকার সংস্কার কাজ শুরু করেন ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ। তার নেতৃত্বে সরকারি দখলদার উচ্ছেদ করে শ্মশান ও বাজারের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। শ্মশান সংস্কারকে ঘিরে একটি ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছিল, যেখানে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছিল।
ইউএনও এরশাদুল আহমেদ, ময়মনসিংহে যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কর্মকাণ্ডে প্রভাবশালী কিছু গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ ছিল বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
শ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি রাজু সাহা অভিযোগ করেছিলেন যে, ইউএনও তার অনুমতি ছাড়াই শ্মশান এলাকার ভাঙচুর করেছেন। তবে, স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্র এবং সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, শ্মশান সংস্কারের প্রতিটি পদক্ষেপেই অংশীদারদের সম্মতি ছিল। এমনকি রাজু সাহা পরবর্তীতে ইউএনওকে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তায় দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছেন। এটি অনেকের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে যে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার জন্য রাজনৈতিক স্বার্থে অপচেষ্টা করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত, জেলা প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ইউএনওকে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয় এবং সেখানে নতুন দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এদিকে, ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল এবং প্রশাসনিক সততা ও কঠোরতার কারণে তিনি কিছু শক্তিশালী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।
এছাড়া, ইউএনও এরশাদুল আহমেদ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করার পরপরই হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয় জনগণের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিশেষ করে হিজরা জনগণের মান উন্নয়নে "পুনর্বাসন" প্রকল্পের আওতায় তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, বাসস্থান এবং ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি একাধিক মন্দিরের উন্নয়ন ও সংস্করণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন, যা তার অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রতিফলন।
এখন প্রশ্ন উঠছে, শ্মশানের সংস্কার প্রকল্প ছিল কি নিছক প্রশাসনিক প্রচেষ্টা, নাকি এটি ছিল একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান প্রশাসককে লক্ষ্য করে তৈরি করা একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ইউএনও এর বিরুদ্ধে যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পেছনে কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।
ইএইচ