সৈয়দ সাইফুল ইসলাম
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম
সৈয়দ সাইফুল ইসলাম
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে ক্রমেই উত্তাপ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা দোলা দিচ্ছে। নির্বাচন কেমন হবে? কবে হবে? কার অধীনে হবে? বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে আসবে কি-না? এমন বহু প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো প্রতিদিনই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ সাজিয়ে দিচ্ছে। আবার ক্ষমতাসীন দলও স্পষ্ট করেই বলছে— সংবিধানের বাইরে কোনো কিছু হবে না। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকেই। অর্থাৎ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, এর বাইরে কিছুই নয়। সরকার ও বিরোধী পক্ষের বিপরীতমুখী এই অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোন পথে সমাধান হবে— তা নিশ্চিত নন রাজনীতিক বা নাগরিক সমাজের কেউই। তবে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাধ্য করার মতো কোনো শক্তি বিএনপি ও তার মিত্রদের নেই। সেই হিসেবে বলা যায়, নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে, দলীয় সরকারের অধীনেই।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সভায় তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে অংশ নিতে যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগের। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বিএনপিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিযোগিতায় চেয়েছি। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগকে শুত্রু মনে করে। তিনি বলেন, আমাদের দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, তার দলের পক্ষ থেকে ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের আকে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না তারা। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র এই অন্যতম নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমাদের সাফ কথা, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। আগে ১০ দফা বাস্তবায়ন, তারপর নির্বাচন।’ তিনি বলেন, “১০ দফার শুরুতেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। ওই ১০ দফার শুরুতেই বলা হয়েছে— ‘বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বতীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বতীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, ওই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করবে।” ড. মোশাররফ আরও বলেন, তার দল এখন নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। তারা এখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নে রাজপথে রয়েছে। দাবি আদায় করেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবো। এখন তাদের নির্বাচনীয় কোনো প্রস্তুতি নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধানাবলি অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিন সময়কালের মধ্যে সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী পরবর্তী প্রণীত বিধানাবলির আলোকে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও তার মিত্ররা এখন রাজপথে যে ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে রয়েছে সে ১০ দফা দাবি আদায় না হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও দশম ও একাদশ সংসদের মতোই অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন ইস্যুতে দুই মেরুতে থাকা দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির বিপরিতমুখী অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দেবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে এ বছরের নভেম্বর মাস থেকে। আইন অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে এ নিয়ে উত্তাপ ততই বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগামী নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে কি-না, সীমানা কেমন হবে তা নিয়ে বিরোধী দলগুলোর এখন খুব একটা বেশি মাথাব্যথা নেই। বিরোধীর লক্ষ্য নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নির্দলীয়। সেই সরকারকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন।
গত ১৮ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যায়। সেখানে গিয়ে তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতি জানতে চায়। ‘মতপার্থক্য ভুলে সব দল নির্বাচনে আসবে’ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের এমনটাই জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী পশ্চিমা কূটনীতিকরা এর ছয় মাস আগে একবার ইসির সঙ্গে বৈঠক করে। চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশে ইইউর হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলি নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে।
ইইউ প্রতিনিধি দল মূলত নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তাদের ভোটার তালিকা (ইলেকট্রোরাল রোল), সংসদীয় আসনের সীমা পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ইসির উদ্যোগগুলো তাদের জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইইউকে তখন জানিয়েছিল, দলগুলো মধ্যে মতবিরোধ আছে, সেগুলো রাজনৈতিক ইস্যু। এগুলো আমাদের জন্য ইস্যু নয়। কাজেই সেই পলিটিক্যাল ইস্যুগুলো, যেগুলো ইলেকশনের জন্য অন্তরায় হতে পারে সেগুলোর সুরাহা রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে। তা হলেই নির্বাচন প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে, সুন্দর ও সুষ্ঠু হবে।
এবি