Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

ব্যাংকের টাকা লুট

ব্যবস্থা না নেয়ায় সংসদে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা

মো. মাসুম বিল্লাহ

এপ্রিল ৭, ২০২৩, ১১:৩৩ এএম


ব্যবস্থা না নেয়ায় সংসদে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা

ব্যাংকের টাকা লুটপাট এবং বিদেশে পাচারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ করে সংসদে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ফিরোজ রশীদ এ সমালোচনা করেন।  এ সময় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তিনি ইফতারে যে টাকা খরচ হয় সেটি নিষেধ করেছেন। কিন্তু ইফতারে আর কি যেত, হয় তো ১০০ কোটি টাকা যেত। কিন্তু এখানে (ব্যাংকে লুটপাট) এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে আমেরিকায় পালালেন আমজাদ সাহেব। পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও একাধিক বাড়ি কিনে বসবাস করছে। সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমজাদ। উনি একা তো এই টকা মারেননি। এক হাজার কোটি টাকা তো কম নয়। আমরা জানি যে ব্যাংকিং অবস্থা খুব শক্ত। সমস্ত ব্যাংক সেক্টর এখন অটোমেশন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত ইনটার্নাল অডিট  করে, প্রত্যেকটি ব্যাংকে অডিট করে। স্টক এক্সচেঞ্জে আজকে যে লেনদেন হবে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ জানবে কার কত বাকি আছে। তিনশ বাকি থাকলে তার পরদিন ক্রেডিট করতে দেবে না। আর এখানে এক হাজার কোটি টাকা, এটা তো এক দিনে নেয়নি। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন তারা কি করল। যাদের ওপর দায়িত্ব ছিল, মনে করতে হবে যে সরিষায় ভূত রয়েছে। সবাই যে এর সঙ্গে জড়িত।  

সংসদে অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা কোনো কথা বলতে পারব না কারণ অর্থমন্ত্রী এখানে কখনো থাকেন না। উনি কোনো কথাই তো শুনতে চান না। আজ পর্যন্ত এই যে পত্রিকায় বড় বড় হেডিং পড়তে থাকলে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী তরফ থেকে বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসেনি। কারণ তারা জানেন এক হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। এইখানে যদি পাঁচ হাজার কোটি টাকার উপরে হয় তাহলে নড়েচড়ে বসে। ১০ হাজার কোটি টাকা হলে আরেকটু নড়েচড়ে বসে।

এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে, কাদের টাকা? এটা তো এই দেশের জনগণের টাকা। ব্যাংকের মালিক তো জনগণ। প্রধানমন্ত্রী লাইসেন্স দেন ঠিকই, তার অর্থ এই নয় যে লাইসেন্স একটা কামান দিয়ে দিলাম যাকে ইচ্ছা তাকে মারো। জনগণের টকাটা নিয়ে বিদেশে পারি জমাচ্ছে। এই ব্যাংকগুলো এখন পারিবারিক ব্যাংক হয়ে গেছে। এগুলো জনগণের ব্যাংক নেই। আমরা টাকা রাখি ঠিকই কিন্তু ওই ব্যাংকের মালিকদের চাকর বাকরের যদি অসুখ হয় সিঙ্গাপুর চলে যাবে, ব্যাংকক চলে যাবে চিকিৎসার জন্য।

তিনি আরও বলেন, এই যে টাকা, এর জবাবদিহিতা কে দেবে? সংসদে আমরা যদি কথা না বলি, জনগণ যদি না শোনে আর কেউ তো বিধি ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কারণ মন্ত্রী নাই, মন্ত্রী এখানে থাকেন না। কোন মন্ত্রীর কি দায়িত্ব তাও আমরা ঠিকমতো জানি না। কে কি কাজ করে জবাবদিহিতা তো নেই কোনো। কোনো জবাবদিহিতা নেই, মন্ত্রীদের জাবাদিহিতা নেই। কোথাও যদি কারো জবাবদিহিতা না থাকে তাহলে এই দেশটা চলবে কিভাবে? সবাই শুধু প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দেবেন— তাকে যদি ব্যবহার করেন ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি বলছেন’। উনি তো একটা ব্যাংকের লাইসেন্স দেন, ব্যাংক কিভাবে চলবে সেটি দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের তাদেরকে জবাবদিহিতায় আনতে হবে। কেন এই ব্যাংকের টাকাগুলো, জনগণের টাকাগুলো লুটপাট হচ্ছে। কে এ জন্য দায়ী। এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি করতে পারেন। তদন্ত কমিটি করেন, আমরা বের করে দেবো।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এইমাত্র প্রতিমন্ত্রী বিরাট লম্বা চওড়া একটা বিবৃতি শুনালেন। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, উনি দিন-রাত পরিশ্রম করে আগুন নিভিয়েছেন (বঙ্গবাজার)। আসলে আগুন নেভেনি।  আগুন এখনো জ্বলছে। ওখানে বাহিনীর লোকজন গিয়ে কোনো রকম পুলিশের হেডকোয়ার্টার রক্ষা করতে পেরেছে। একটি দোকানও রক্ষা হয়নি, সেটি হলো আসল কথা। শত চেষ্টা সত্ত্বেও কোনো দোকান রক্ষা হয়নি। কোনো দোকানের একটি মালও কেউ রক্ষা করতে পরেনি। আর যত বেশি লোকজন গেছে তত বেশি লুটপাট হয়েছে। এটি স্বীকার করেন না কেন। ওখানে যদি কাউকে যেতে না দিতেন, আগে গিয়ে পুলিশ, আর্মি, বিজিবি যদি দেখত তাহলে লুটপাট হতো না। আপনি বিরাট একটি স্টেটমেন্ট দিলেন যে, সব কিছু আপনি করছেন। করেছেন ঠিকই কিন্তু মানুষ রক্ষা পায়নি।
 

Link copied!