Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

খেলাপির ৬২ শতাংশই ১০ ব্যাংকে

রেদওয়ানুল হক

মে ২৯, ২০২৩, ১২:২১ এএম


খেলাপির ৬২ শতাংশই ১০ ব্যাংকে
  • মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা
  • তিন মাসে বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা

অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে বিপুল ঋণ বিতরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। একইসঙ্গে খেলাপিদের একের পর এক ছাড় দেয়ার পাশাপাশি ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিপুল ঋণ পুনঃতফসিলের পরও ক্রমাগত বাড়ছে অর্থনীতির নেগেটিভ সূচক খেলাপি ঋণের পরিমাণ। মাত্র তিন মাসে ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়ে চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে (গত ডিসেম্বর শেষে) যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।  দেশে কার্যরত ৬১ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১০টি ব্যাংকেই রয়েছে বিপুল এ খেলাপি ঋণের ৬২ শতাংশ। গতকাল রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ-২০২৩ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের এ চিত্র উঠে এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপির তথ্য গোপন করেছে ব্যাংকগুলো। এ তথ্য যোগ করলে বছর শেষে খেলাপির পরিমাণ হতো এক লাখ সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। তাই মার্চ প্রান্তিকের তথ্য নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাতের বড় দুই সমস্যা। বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগের কথাও বলছেন অনেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের (২০২২) একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের আট দশমিক ৮০ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, ১০টি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ রয়েছে ৮১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকে ১৪ হাজার ৯৪৩ কোটি, জনতা ব্যাংকে ১৪ হাজার ৮৮৭ কোটি, সোনালী ব্যাংকে ১২ হাজার ছয় কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে সাত হাজার ৭৭৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকে সাত হাজার ৫৮৫ কোটি, বেসিক  ব্যাংকে সাত হাজার ৪৭৫ কোটি, ইসলামী ব্যাংকে ছয় হাজার ১০১ কোটি, এবি ব্যাংকে চার হাজার ৬৯ কোটি, পদ্মা ব্যাংকে তিন হাজার ৪২৭ কোটি ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে তিন হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৯৫৮ টাকা। বেসরকারি ব্যাংক ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৮৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংক ৩৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি চার হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংক ৬২ হাজার ২৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে; তাদের খেলাপি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪২ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তমতে পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে। আএমএফের এ হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।

খেলাপি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাতে বড় দুই সমস্যা। পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগ করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা পালন করতে হবে।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে আমাদের তেমন সফলতা আসছে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে অ্যাকশনে যেতে হবে। একটা সময় বেঁধে দিতে হবে, যে সময়ের মধ্যে খেলাপি কমাতে হবে। আর খেলাপি কমাতে না পারলে সেসব ব্যাংকগুলোর শাখা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন কঠোর হচ্ছে না, শুধু নির্দেশনা দিয়েই যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ২-৩ শতাংশ করে ছাড় দিলে খেলাপি কীভাবে কমবে— এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের এখন খেলাপি কমাতে অ্যাকশনে যেতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের দুর্বলতাগুলোও দেখতে হবে। কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। তাই বলে ঢালাওভাবে ছাড় কেন।

Link copied!