Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৪,

রাজনৈতিক সমঝোতা চায় যুক্তরাষ্ট্র

আবদুর রহিম

জুন ৭, ২০২৩, ১১:২৯ এএম


রাজনৈতিক সমঝোতা চায় যুক্তরাষ্ট্র

দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক ও বিএনপির মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক করল যুক্তরাষ্ট্র। এক দিন আগে জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরের সঙ্গেও বৈঠক হয়। দেশটি জানতে চেয়েছে নির্বাচনের প্রস্তুতি, সংঘাতমুক্ত ও রাজনৈতিক সমঝোতা বিষয়ে

বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনা পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করবেন। তারা চায় খালেদা জিয়ার মুক্তি। সে ক্ষেত্রেও সরকার নমনীয় হতে পারে। এছাড়া বিএনপি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায়— সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে ‘জাতীয় সরকার’ গ্রহণ করবে বলে মনে করছি।
—দিলীপ বড়ুয়া
সাধারণ সম্পাদক
সাম্যবাদী দল

বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর যাতায়াত বাড়ল মার্কিনপাড়ায়। তাদের সঙ্গে চলছে সিরিজ বৈঠক। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংঘাত-সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চাচ্ছে দেশটি। ঘোষণা করেছে নতুন ভিসানীতি। তবে তাদের এই হস্তক্ষেপকে ভালো চোখে দেখছেন না দেশের রাজনীতিবিদরা। কূটনীতিকপাড়ার সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চাচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে চাচ্ছে। দেশের শীর্ষ দলগুলোকে সেই বার্তা দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে এক টেবিলে আলোচনায় বসেছে। 

গতকাল ফের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এর আগের দিন সোমবার জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরের সঙ্গেও বৈঠক হয়। রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিহীন একটি অন্তর্বর্তী সরকার চাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে জাতীয় সরকার। এ নিয়ে পর্দার আড়ালে চলছে বিতণ্ডা। এ ছাড়া ভিন্ন রূপরেখা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। কূটনীতিকরা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাতমুক্ত নির্বাচন আয়োজন করতে বার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক সমঝোতার কড়া নির্দেশনাও দিয়েছেন তারা। 

গত ২৫ মে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা মো. এ আরাফাত এবং বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এমন পরিস্থিতিতেই হঠাৎ গতকালও শোনা গেছে আলোচনার খবর। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনি সমস্যা সমাধানে সরকার আলোচনায় রাজি হয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকেই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা আছে। বিএনপির সঙ্গে যে কোনো আলোচনা হতে পারে। প্রয়োজনে জাতিসংঘ প্রতিনিধির মধ্যস্থতায়ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। তবে আমুর এমন প্রস্তাবে কোনো আগ্রহ দেখায়নি বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এসব নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। কে কোথায় কী বক্তব্য দিয়েছে, তা আমাদের জানার কথাও না।

তবে রাজনৈতিক এমন পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়ুয়া আমার সংবাদকে বলেন,  সামনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে না; একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কারণ, সরকার দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন দেবে না।  আর বিরোধীরা এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনা পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন। বিএনপির কাছে সেটি গ্রহণযোগ্য হতেও পারে।  বিএনপিকে এনে নির্বাচনে যেতে হবে— এটি আমার মনে হচ্ছে। আর বিএনপি চায় খালেদা জিয়ার মুক্তি। সে ক্ষেত্রেও সরকার নমনীয় হতে পারে। এছাড়া বিএনপি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায়; সেট হয়তো গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে ‘জাতীয় সরকার’ গ্রহণ করবে বলে মনে করছি। আর এগুলোর বাইরে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে আরও কিছু নির্ভর করছে। 

এ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় —মির্জা ফখরুল : গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে আসেন সরকারবিরোধী দলের শীর্ষ নেতা  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বিএনপি মহাসচিবকে বহনকারী প্রাইভেটকারটি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ভবনে ঢোকে। এক ঘণ্টা পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে গাড়িটি বেরিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে জানিয়েছে বিএনপি। পিটার হাসকে ফখরুল জানান, এ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি জানান, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে যান এবং প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। সে সময় তারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং নতুন মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং বিষয়টি আবারও মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করা হয়েছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি পিটার হাসকে জানান, নতুন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অপকর্ম আর অপশাসনের কারণে এমনটি হয়েছে। তবে দেশের মানুষ একে স্বাগত জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল গুলশানে রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়েছিলেন ফখরুলসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা। তখন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছিল, বৈঠকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং অহিংস রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে রাজনৈতিক বিরোধ এখনো কাটেনি। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করলেও তা নাকচ করে আসছে আওয়ামী লীগ। এক দিন আগে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। তিনি কিছু না জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতের জিজ্ঞাসায় তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তার কাছে তুলে ধরেন। আন্দোলনে ‘ব্যর্থ’ হয়ে বিএনপি বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এক দিন আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, কূটনীতিকরা সীমা ছাড়ালে সরকার ব্যবস্থা নেবে। 

সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক : এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সরকারি অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বক্তব্য ছিল। সেসব বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন এবং এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে আইনমন্ত্রী ওই বৈঠক সম্পর্কে আর কিছু বলেননি। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলতি মাসেই জেনেভা যাচ্ছেন। তার আগে শ্রম আইন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানল যুক্তরাষ্ট্র।
 

Link copied!