Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

আবার কবে দেখা যাবে মাঠে

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ৯, ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম


আবার কবে দেখা যাবে মাঠে
  • বাফুফের গড়িমসিতে ধ্বংসের পথে নারী দল

মেয়েদের ফুটবল খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ফেডারেশন। তাদের যে একটা ইউনিটি ছিল সেটি মনে হয় ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে 
—গোলাম সারোয়ার টিপু, সাবেক ফুটবলার, বাংলাদেশ জাতীয় দল

  •  হঠাৎ চার দিনের ছুটিতে কৃষ্ণা-সানজিদারা
  •  অনুশীলন চললেও সাত মাস ধরে নেই কোনো খেলা
  •  এখনও মে মাসের বেতন পাননি ফুটবলাররা

মূল হেডলাইন দেখে হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছেন। এমন প্রশ্ন তো এখন উঠতেই পারে। একের পর এক অভিযোগ বাসা বাঁধছে বাফুফে ভবনে। তবুও যেন দায়সারা ভাব বাফুফে কর্তাদের। নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে খেলাপ্রেমীদের মধ্যেও। আসলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ভবিষ্যতটা কী? নেই কোনো খেলা। বেতনও খুব সামান্য; তবুও মে মাসের বেতনটাও এখনো পাননি ফুটবলাররা। কোনো একটা দিক যদি ঠিক থাকতো তাহলে হয়তো বাফুফে ভবনে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু কোনোটাই ঠিক নেই। খেলাও নেই; বেতনও নেই। খাবারের মানও কমে আসছে দিন দিন। 

এদিকে গতকাল থেকে চার দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে সাবিনাদের। হঠাৎ করেই তাদের ছুটি দেয়া হলো কেন জানার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটাও সম্ভব হয়নি। উইমেন্স সুপার লিগ অনুষ্ঠিত হবে। তার জন্য পাঁচতারকা হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানও করা হয়েছে। জমকালো এমন আয়োজন দেখে নারী ফুটবলাররাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু তিনবার শুরুর তারিখ ঘোষণা করেও নির্দিষ্ট সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ভেন্যু এবং চার দল চূড়ান্ত না করেই মেয়েদের এ টুর্নামেন্ট নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বারবারই দিয়ে যাচ্ছেন নানা আশ্বাস। তবে এখন তাদের কোনো আশ্বাসই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়েদের। চারদিনের ছুটি দেয়া হলো হঠাৎ করেই। এর অর্থ কী? তাহলে কী নারীদের ফ্রাঞ্জাইজি লিগ শুরু হচ্ছে না! এ বিষয়েও কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু আমার সংবাদকে বলেন, আমার মনে হয় মেয়েদের ফুটবলের প্রতি বাফুফে ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে মেয়েদের ফুটবলকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বাফুফে। মেয়েদের যে একটা ইউনিটি ছিল; সেই ইউনিটি টা মনে হয় ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে। হঠাৎ ছুটির কারণে অনেকেই হয়তো নাও ফিরতে পারেন। তিনি আরও বলেন, এখানে মানসিক একটা ব্যাপার আছে। সেটা যদি না থাকে তাহলে মেয়েরা কীভাবে ফুটবল খেলবে! প্রি-অলিম্পিক খেলার জন্য মেয়েদের মিয়ানমার পাঠানো হলো না। অথচ পুরুষ দলকে সৌদি আরবে ক্যাম্প করানো হলো। সেটি হোক; বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলের বাইরে অনুশীলন করার দরকার আছে। তবে মেয়েদেরকেও অন্তত একটু গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। সেই গুরুত্বটা দিচ্ছে না বাফুফে। যে কারণে ধীরে ধীরে নারী দলটা ভেঙে যাচ্ছে। একের পর এক নারী ফুটবলাররা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ’

অন্যদিকে আগামী মাসে ঘরের মাঠে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই সম্ভাবনাও এখন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। গতকাল এক সূত্র থেকে জানা গেছে, ওই সময়ে নেপালকে আনার চেষ্টা করছে বাফুফে। গেল মাসেই পদত্যাগ করেছেন নারী দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। তিনি যাওয়ার পর নতুন কোনো কোচও এখনো খুঁজে পায়নি বাফুফে। ছোটনকেও অনুরোধ করা হয়েছে; মেয়েরাও কয়েকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তার মান ভাঙানো যায়নি। গত বছর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে এনেছিল এই মেয়েরা। নেপালে তাদেরকে হারিয়েই সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সাবিনা-কৃষ্ণারা। ছাদখোলা বাসে ট্রফি হাতে বাফুফে ভবনে এসেছিল তারা। সেটিই শেষ ম্যাচ। এরপর এখনো পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি নারী ফুটবল দলকে। মাঝে মিয়ানমার যাওয়ার কথা ছিল অলিম্পিক বাছাই খেলতে। বাফুফে অর্থের দোহাই দিয়ে তাদেরকে পাঠায়নি। কাঠমান্ডুতে সিরাত জাহান স্বপ্না করেছিলেন চার গোল। তিনিও দল ছেড়েছেন কিছুদিন আগে। সবশেষ দল বাফুফে ভবন ছেড়েছেন নারী দলের অন্যতম ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। সিরাত জাহান স্বপ্না কদিন আগে জানিয়েছেন, তিনি দল ছাড়ছেন, আর ফুটবলই খেলবেন না। 

নারী ফুটবল দলের আরেক সদস্য আঁখি খাতুন জানিয়েছেন, তিনি চীনে চলে যাচ্ছেন। তবে ফুটবল আর খেলবেন কি-না, তা খোলাসা করে বলেননি। দলকে সাফল্য এনে দেয়া এরকম কৃতী ফুটবলারদের এভাবে বিদায় নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও ফুটবল থেকে বিদায় নিয়েছেন সাফজয়ী দলের আরও দুই ফুটবলার আমুচিং মোগিনি ও সাজেদা খাতুন। বাংলাদেশে নারী ফুটবলারদের যে ক্যাম্পের আয়োজন করে ফুটবল ফেডারেশন, সেখান থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়। এরপরই তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। কেন তাদের বাদ দেয়া হয়েছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা ফুটবল ফেডারেশন দেয়নি। কেবল নারী ফুটবলাররাই নন, এই দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও গত মাসে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে। অথচ এই ছোটনই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন অনন্য এক সাফল্য।
 

Link copied!