ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

ধুঁকছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

মহিউদ্দিন রাব্বানি

মহিউদ্দিন রাব্বানি

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩, ১১:২৯ পিএম

ধুঁকছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

কয়লা সংকটে ভুগছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পটুয়াখালীর পায়রায় অবস্থিত কয়লা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। অর্থ সংকটে বড় চালান আনতে না পারায় হুমকির মুখে পড়ছে কেন্দ্রটি। এক চালান আনলে দু-তিনদিনেই কয়লা ফুরিয়ে যায়। কয়লা সরবরাহের সাথে হিসাব মিলিয়ে উৎপাদন হচ্ছে বিদ্যুৎ। এক জাহাজে ৩০-৪০ হাজার টন কয়লা আমাদানি হয়। যা দু-তিনদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। মুখিয়ে থাকতে হয় পরবর্তী চালানের জন্য। এ যেন গরিবের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। পিডিবি কয়লার বড় চালানের জোগান দিতে না পারায় ধুঁকছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলার সংকটে বড় চালান আনতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ফলে পর্যাপ্ত কয়লা মজুত করতে পারছে না কেন্দ্রটি। তাদের ধারণা এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হুমকির মুখে পড়বে দেশে সবচেয়ে বড় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন। দেশে মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। দিনে-রাতে বেশিরভাগ সময় পায়রাকেন্দ্র থেকে উৎপাদন সক্ষমতার সমান বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণে যথেষ্ট সময় মিলছে না। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে যে পরিমাণ কয়লা মজুত থাকা প্রয়োজন, সেই মজুত নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এদিকে পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। কম নয়। তাই সব মিলিয়ে বহুমুখী সংকটে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র।

নিবরচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫০-৬০ দিনের কয়লা (জ্বালানি) মজুত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার আবার কোনো দিন ১৪ হাজার টন কয়লা লাগে। দৈনিক জ্বালানি চাহিদা ১২ হাজার টন ধরা হলেও এই কেন্দ্রে ৫০ দিনে অন্তত ছয় লাখ টন কয়লা রিজার্ভ থাকা জরুরি।

কয়লা মজুত নিশ্চিত রাখতে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে চারটি কোলডোম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটির মজুত সক্ষমতা প্রায় দেড় লাখ টন। এক সময় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচ-ছয় লাখ টন কয়লা রিজার্ভ থাকলেও এখন কোলডোমগুলো প্রায় ফাঁকাই বলা চলে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি কোলডোমে গড়ে ২০ হাজার টনের মতো কয়লা মজুত রয়েছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, একেকটা জাহাজ যখন আসে তিন থেকে চার দিনে কয়লা নিশ্চিত হয়। এতে ৩০-৪০ হাজার টন কয়লা পাওয়া যায়। ফলে উৎপাদন শুরু হয়। একটি জাহাজ আনলোড করতে তিন দিন সময় লাগে। আর যে পরিমাণ আনলোড হয় তা তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়। এতে ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এদিকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরো সক্ষমতায় চললে প্রতিদিন ১৩-১৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগে। 

ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন দিন পরপর একটি করে জাহাজ আসে। প্রায় ৫৫ হাজার টন সক্ষমতার এসব জাহাজ নাব্য সংকটের কারণে ৩৫-৪০ হাজার টন কয়লা নিয়ে পায়রার জেটিতে আসে। এই পরিমাণ কয়লা খালাস করে কোলডোমে নিতেও সময় প্রয়োজন হয়। বলা যায়, এখন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থা অনেকটা ‘দিন আনে দিন খায়’ এর মত। এর আগে ডলার সংকটে কয়লা আমদানির বিশাল বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় পায়রায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইন্দোনেশিয়ার কোলমাইনিং কোম্পানি। তখন তারা চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধের তাগাদা এবং সময় দিলেও যথাসময়ে ডলার সংস্থান করতে পারেনি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। ফলে কয়লা আসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কোলইয়ার্ডের রিজার্ভ কয়লা দিয়ে চলতে থাকে পায়রা। আর কর্তৃপক্ষ ডলার জোগাড়ের চেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তখন। ফলে গেল জুন মাসে বেশ কিছুদিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।

সরকার জুন মাসের শুরুতে ডলারের ব্যবস্থা করে দিলেও এলসি খোলাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা পায়রার কোলডোমে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। ২৫ জুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট পুনারায় উৎপাদনে ফেরে। কয়লার চালান আসা বাড়তে থাকলে কিছুদিন পর চালু হয় দ্বিতীয় ইউনিট।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জাহাজ সংখ্যা বাড়িয়েছি। আগে কয়লার যে সংকট ছিল সেটা অনেকটাই সামাল দেয়া গেছে। বর্তমানে কয়লার মজুত আছে ৮৪ হাজার টন। শিগগির মজুত এক লাখ টনের ওপর নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি। তবে আগের অবস্থায় যেতে সময় লাগবে। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি থাকছে। তিনি আরও বলেন, রুটিন অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হবে। তখন পর্যায়ক্রমে একটি ইউনিট বন্ধ রেখে অপরটি চালু রাখা হবে। দুটো ইউনিটের রক্ষাণাবেক্ষণে চার মাস সময় লাগবে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম আমার সংবাদকে বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে কয়লা আমদানি করছি। এতে একটা ঝুঁকি আছে। কয়েকদিন পরপর জাহাজ খালাস হচ্ছে সে কয়লা দিয়ে আমরা উৎপাদন চালাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এমন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জাহারের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাহাজ আসতে বাধা প্রাপ্ত হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। পায়রা কেন্দ্র যেহেতু বড় একটা বেজলোড মনে হয় সেহেতু ফোকাসটা ভালোভাবে থাকা উচিত। নিয়মিতভাবে যেন কয়লা সরবরাহ থাকে এবং কয়লার বিল পরিশোধ নিয়মিত করা যায় সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখা দরকার। 

১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করে কয়লা মজুতের সক্ষমতা প্রায় ছয় লাখ টন কিন্তু কেন্দ্রটিতে বর্তমানে মজুত আছে ৬০ হাজার টন কয়লা। 

জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিজস্ব চাহিদা পূরণের পর সর্বোচ্চ প্রতিদিন ১২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লা দরকার হয়।
 

Link copied!