Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

একই দিনে ঢাকায় বহুদলীয় রাজনৈতিক সমাবেশ

ভেঙে পড়ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা

নুর মোহাম্মদ মিঠু

অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ১২:২৯ এএম


ভেঙে পড়ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা

নগরবাসীর ভোগান্তি

নগরবিদরা বলছেন, কলকাতা ও দিল্লির মতো শহরের প্রান্তে কিংবা শহরতলীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে হবে

সভা-সমাবেশের কারণে সৃষ্ট যানজট নিয়ন্ত্রণ ট্রাফিক পুলিশের জন্য চাপের ও চ্যালেঞ্জিং, নির্দিষ্ট মাঠ কিংবা উদ্যানে করা গেলে ভোগান্তি কমবে

—মুনিবুর রহমান
অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) ডিএমপি  

স্বাভাবিক সময়েই যেখানে যানজটের ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশের কারণে যেন স্থবির হয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের জনজীবন। দীর্ঘদিন ধরে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহৎ দলগুলোর পাশপাশি অন্যান্য দলও ঢাকার রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। গতকালও ঢাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৬টি রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করে। যার ফলে ঢাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় যানজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও যেন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখতে নিরুপায় হয়ে পড়েন। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার সংবাদকে বলেন, রাস্তার সঙ্কুলান, খানাখন্দ, বিভিন্ন সংস্থার চলমান উন্নয়নকাজ, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন কারণে যেখানে স্বাভাবিক সময়েও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা কঠিন, সেখানে একই দিনে সব রাজনৈতিক দলের এমন সভা-সমাবেশের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখাটাই বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকেই ঢাকাজুড়ে যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী। মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড়ে যখন ব্যাপক যানজট দেখা দেয়, তখন শাহবাগ, মালিবাগ, পান্থপথ, গ্রিনরোড এলাকায়ও যানবাহনের দীর্ঘসারি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর বিএনপির সমাবেশ স্থলের আশপাশেও গণপরিবহন না পেয়ে দীর্ঘ সময় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মোট কথা, গতকাল সকাল থেকেই নগরবাসীকে রাস্তায় চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিকেল গড়াতেই এই ভোগান্তি আরও বাড়তে থাকে। একই সময়ে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদেরও। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সিগন্যাল দিয়ে রাস্তার একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ কোথাও কোথাও সিগন্যাল ছাড়ারই সুযোগ পাননি তারা। 

যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল হোসেন। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেন। বেলা ৩টার দিকে তিনি মৎস্যভবন সিগন্যালের জ্যামে আটকা পড়েন। তিনি বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার উপর রাজনৈতিক সমাবেশ চলছে। আমাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে সড়কের যানজট ঠেলে চলতে হচ্ছে। বাড্ডা থেকে গুলিস্তান যাচ্ছিলেন বাকি বিল্লাহ। তিনি জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকুক বা না থাকুক শুক্রবার ছাড়া তাকে সবসময়ই যানজটে পড়তে হয়। তিনি বলেন, যেদিন পল্টনের দিকে রাজনৈতিক সমাবেশ থাকে সেদিন শান্তিনগর, মৌচাকের দিকে যানজটে পড়তে হয়। আজকে রাস্তায় গাড়ি কম, জ্যামও বেশি। দুপুর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ চলছে। সেখানে ভোর থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সাথে ওই এলাকায় মানুষের ঢল নামে। এতে আশপাশের রাস্তা ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। সমাবেশ স্থলের আশপাশে গণপরিবহন না পেয়ে যাত্রীদের দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটেও গন্তব্যের দিকে রওনা হন। 

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, সমাবেশের জন্য কিছু কিছু জায়গায় মানুষের চলাচল বেড়েছে। এতে এসব এলাকায় যানজট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রতিটি সিগন্যালেই যানবাহনগুলোকে কিছুটা সময় থামতে হচ্ছে। কাকরাইল, পল্টনের দিকে গাড়ি চাপ থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। এর ফলে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে যানবাহনের ধীরগতি শুরু হতে থাকে। একপর্যায়ে সেটি দীর্ঘ যানজটে রূপ নেয়। একই ইস্যুতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে দেখিয়ে নগরবিদরা বলছেন, কলকাতা ও দিল্লিতে শহরের প্রান্তে অথবা শহরতলীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি করা হয়। সেখানে সবাই অংশগ্রহণ করে। সেখানে এমন যানজট হয় না। আমাদের দেশে বড় বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে শহরে, বাণিজ্যিক এলাকাতে করা হয়। এর কোনো সমাধানই হচ্ছে না। যদিও সমাধানের উত্তরও সবার জানা আছে। কিন্তু এসব নিয়ে কেউই কাজ করছে না। 

ট্রাফিকের পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবার পল্টন, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের দিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলায় আশেপাশের এলাকায় মানুষের চলাচল বেড়ে যায়। বিশেষ করে শান্তিনগর, কাকরাইল এলাকাগুলোতে মানুষের চাপ বেশি দেখা যায়। এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। বিকেলে অফিস শেষে ঘরমুখো মানুষও গতকাল ভোগান্তিতে পড়েন। যানজট আরও বাড়তে পারে কি-না জানতে চাইলে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শান্তিনগর ছাড়া অন্য সব এলাকা দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। তবে বিকেলের পর কী হবে, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা অনুমান করা যায়নি। তবে সড়কে যান চলাচলে গতিশীলতা রাখতে কাজ করার কথা বলেছিলেন ট্রাফিক কর্মকর্তারা। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘সভা-সমাবেশের কারণে সৃষ্ট যানজট আমাদের জন্য চাপ ও চ্যালেঞ্জিং। সমাবেশ ছাড়াও যানজটের তীব্রতা বাড়ার আরও বহু কারণ রয়েছে। যেগুলোর সবই বিবেচনায় রেখে ট্রাফিক পুলিশকে কাজ করতে হয়। এর মধ্যে রাস্তার সংকট, লেন সংকট, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী, গর্ত, খানাখন্দ, বিভিন্ন সংস্থার চলমান উন্নয়নকাজ, এসব মিলিয়ে সমাবেশের দিনগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশকে ডিসিপ্লিনের বিষয়ে জনগণকেও সহায়তা করতে হবে। যেমন— ফুটওভারব্রিজের ব্যবহার অন্যতম। এ ছাড়াও গাড়ি চালকদের যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা না করা, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী না রাখা। আরও অনেকগুলো বিষয় রয়েছে এসবের মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জনগণ সহায়তা করলে যানজটের ভোগান্তি কমিয়ে আনা সম্ভব। 

আমার সংবাদকে তিনি আরও বলেন, ঢাকায় ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা, সেখানে রাস্তা রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে যানজট সমস্যা দূর করতে সেফ স্পটে প্রোগ্রাম করা যায়। যেমন— নির্দিষ্ট কোনো মাঠ, উদ্যান বা প্রাঙ্গণ। এতে ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব হবে।      
 

Link copied!