Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪,

ঢাকায় গণপরিবহন সংকট

আব্দুল কাইয়ুম

আব্দুল কাইয়ুম

জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ১১:৪১ পিএম


ঢাকায় গণপরিবহন সংকট
  • যানবাহন কম, রাস্তা ফাঁকা 
  • যাত্রীসংকটে বাস ছাড়ছে না
  • সবার মাঝে নাশকতার আতঙ্ক
  • দূরপাল্লার যানবাহন কম চলছে 
  • বিভিন্ন কোম্পানির বাস রিকুইজিশনে নেয়া হয়েছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডাকে বিএনপি। এতে করে রাজধানীর সড়কগুলোতে গণপরিবহন ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেকটাই কম। গণপরিবহন না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন পেতে কষ্ট হয়। যদিও কিছু গণপরিবহন চলাচল করছে তবে তা ছিল প্রয়োজনের চেয়ে খুবই কম। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে হেঁটে বা রিকশা দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। তবে যানবাহন কম হওয়ায় রাস্তা একেবারে ফাঁকা। যানবাহনকে যানজটে দাঁড়াতে হচ্ছে না। 

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন কোম্পানির বাস রিকুইজিশনে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন পরিবহনের প্রায় ৫০ শতাংশ বাস রিকুইজিশনে নেয়া হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হরতালের কারণেও অনেকে রাস্তায় বাস বের করছেন না। ফলে দুইয়ে মিলে রাস্তায় নেই বাস। বাস মালিকদের অভিযোগ, রাস্তায় বাস নামালে নাশকতার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তারা পরিমাণের চেয়ে অনেক কম বাস বের করেছেন। 

রাজধানীর খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজারে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় খুবই কম সংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করছে। তাছাড়া শ্যামলী, মোহম্মদপুর, সাইন্সল্যাব মোড়, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, পল্টন মোড়, মৎস্য ভবন ও গুলিস্তান এলাকায় যানবাহন ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও কম চলাচল করছে। ফলে বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ ও অফিসগামী যাত্রীদের বাসের জন্য বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ফলে গণপরিবহন পেতে বেগ পেতে হয়। 
গণপরিবহনের পাশাপাশি অন্যান্য দিনের চেয়ে কম ছিল সিএনজি ও রিকশাও। তাই বাধ্য হয়ে এতে চড়তে গিয়ে যাত্রীদের গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। হাতেগোনা কয়েকটি বাস চললেও ছিল যাত্রীদের অস্বাভাবিক বাড়তি চাপ। আর এ সুযোগে বাসে দ্বিগুণ-তিনগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। বিশেষ করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া ও ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়েছে গন্তব্যে।

সাধারণ জনগণের অভিযোগ, বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে রিকশা বা হেঁটে গন্তব্যে গিয়েছেন তারা। তবে সিএনজিতে বেশি ভাড়া চাচ্ছেন বলে দাবি অনেকের। নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনতে হয়েছে সবার। জনগণ এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি চায়। গণপরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, অন্যান্য দিন পাঁচ মিনিট দাঁড়ালেই বাস পাওয়া যেত। অথচ আজ আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু বাস নেই। একে তো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে। তার ওপর আবার দেরিও হচ্ছে। যদিও রাস্তা ফাঁকা। বাস পেলে বেশি সময় লাগবে না। আরেক যাত্রী বলেন, আমি গ্রামের বাড়ি যাব বলে বের হয়েছি। এখন রাস্তায় এসে দেখি গণপরিবহন কম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে গণপরিবহন পেলেও ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গাড়ির জানালার গ্লাস বন্ধ করে রাখছি। দূরপাল্লার বাস চলবে কিনা জানি না। কিভাবে বাড়িতে যাব সেই চিন্তায় আছি। বাসচালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, যাত্রী কম থাকলেও বাস নিয়ে বের হয়েছি। এখনো পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যায় পড়তে না হলেও মনে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। অন্যান্য দিনের মতো সকাল থেকেই রাস্তায় যানবাহন কম। সকালের দিকে বাস কম থাকে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথেও রাস্তায় গণপরিবহন তেমন একটা নামেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, দূরপাল্লার যানবাহনের কাউন্টারগুলোতে অন্য দিনের মতো নেই যাত্রীর জন্য হাঁকডাক। মাঝে-মধ্যে দু-একটি বাস ছাড়লেও যাত্রী সংকটে তাও ছাড়ছে বিলম্বে। সায়েদাবাদে সারি সারি বাস অপেক্ষমান আছে। তবে যাত্রীর অভাবে এসব যানবাহন দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এদিকে জরুরি কাজ ছাড়া এদিন কোনো যাত্রীকেই চলাচল করতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে অধিকাংশ দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় টিকেট কাউন্টারগুলোতে সুনসান অবস্থা বিরাজ করতে দেখা গেছে। এসব গাড়ির অধিকাংশই চলবে না বলে জানিয়েছেন চালকরা।

দূরপাল্লার বাস কাউন্টারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে দুইটা টিকিটও বিক্রি করতে পারিনি। কোনো যাত্রী নেই। হরতাল আর ভোটের জন্য মানুষ আতঙ্কে আছে। এগুলো আমাদের জন্য সমস্যা। কিছু গাড়ি ছাড়ছে, যাত্রী যা পাচ্ছে তা নিয়েই রওনা দিচ্ছে। আমরা তো যাত্রী ছাড়া গাড়ি ছাড়তে পারি না। দু-চারজন নিয়ে গাড়ি চালালে তো আমাদের খরচ উঠবে না। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, যাত্রী কম তাই বাস কম চলছে। যাত্রী পেলে আমরা গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি। হরতালের মধ্যে গাড়ি চললেও কোনো সমস্যার কথা শুনিনি এখনো। কোনো গাড়িতে ১৫-২০ জন যাত্রী পেলেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ভোটের আগের দিন তাই যাত্রী কম। কিন্তু হরতালের কোনো প্রভাব এতে নেই।

 

Link copied!