ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন

ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিতর্কে নেটিজেন

মো. নাঈমুল হক

জানুয়ারি ২৪, ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম

ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিতর্কে নেটিজেন
  • সপ্তমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে আলোচনা
  • ব্র্যাকের শিক্ষক অপসারণের পর থেকে আলোচনা তুঙ্গে
  • সংশ্লিষ্ট সবকিছু বয়কটের ডাক ডানপন্থিদের
  • পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে আজ মানববন্ধন
  • ট্রান্সজেন্ডার নয়, বইয়ে হিজড়াদের কথা বলা হয়েছে
  • গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়ানোর কথা বলছেন কেউ কেউ

ইসলাম মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট 
—আনোয়ার হোসেন মোল্লা, অধ্যক্ষ, উত্তর বাড্ডা কামিল মাদ্রাসা

ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ পরিবর্তন নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের জেন্ডারের আলোচনা থেকে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে গত বছর থেকে সমালোচনা করছেন ডানপন্থিরা। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার পাঠ্যপুস্তক থেকে অপসারণের আলোচনা করায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষককে অপসারণ করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে ডানপন্থিরা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নেটিজেনরা ব্র্যাকসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে। তারা মনে করছেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি এক নয়। হিজড়া বিষয়টি প্রাকৃতিক। হিজড়াদের পক্ষে সহানুভূতি বোঝানোর জন্য ট্রান্সজেন্ডারকে স্বাভাবিক করার প্রয়োজন নেই। তবে কারো মতে, ট্রান্সজেন্ডার নয়, বইয়ে হিজড়াদের কথা বলা হয়েছে। তাদের প্রতি শিশুদের সচেতন করাই মূল উদ্দেশ্য। কেউ কেউ মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আড়াল করার জন্য ট্রান্সজেন্ডারের আলোচনা আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে জেন্ডারের আলোচনার বিষয়ের সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। 

জানা যায়, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতাবিষয়ক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, খুশি আপা (শিক্ষক) ক্লাসে একজন অতিথিকে নিয়ে এলেন। তিনি বললেন, ইনি ছোটবেলায় তোমাদের স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। আজ এসেছেন নিজের স্কুলটা দেখতে। সুমন (শিক্ষার্থী) জানতে চাইল, আপনার নাম কী? তিনি বললেন, আমার নাম শরীফা আকতার। এরপর শরীফা তার জীবনকাহিনি বলতে শুরু করেন। শরীফা বললেন, যখন আমি তোমাদের স্কুলে পড়তাম, তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং (শিক্ষার্থী) অবাক হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনো যা ছিলাম, এখনো তা-ই আছি। নামটা কেবল বদলেছি। ওরা শরীফার কথা যেন ঠিকঠাক বুঝতে পারল না।

আনাই (শিক্ষার্থী) তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ি কোথায়? শরীফা বললেন, আমার বাড়ি বেশ কাছে। কিন্তু আমি এখন দূরে থাকি। আনাই মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি, আমার পরিবার যেমন অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছে, আপনার পরিবারও তেমনি এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে। শরীফা বললেন, তা নয়। আমার পরিবার এখানেই আছে। আমি তাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে অচেনা মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি। এখন সেটাই আমার পরিবার। তাদের অবাক হতে দেখে শরীফা এবার নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করলেন।
ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময় বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালোবাসতাম। কিন্তু বাড়ির কেউ আমাকে পছন্দের পোশাক কিনে দিতে রাজি হতো না। বোনদের সাজবার জিনিস দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সাজতাম। ধরা পড়লে বকাঝকা, এমনকি মারও জুটত কপালে। মেয়েদের সঙ্গে খেলতেই আমার বেশি ইচ্ছে করত। কিন্তু মেয়েরা আমাকে খেলায় নিতে চাইত না। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গেলেও তারা আমার কথাবার্তা, চালচলন নিয়ে হাসাহাসি করত। স্কুলের সবাই, পাড়াপড়শি এমনকি বাড়ির লোকজনও আমাকে ভীষণ অবহেলা করত। আমি কেন এ রকম, এ কথা ভেবে আমার নিজেরও খুব কষ্ট হতো, নিজেকে ভীষণ একা লাগত। 

আসিফ মাহতাব উৎস বলেন, আমরা নারী ও হিজড়াদের অধিকারের পক্ষেই সংগ্রাম করে যাচ্ছি। হিজড়ারা আমাদের সমাজের অংশ। শারীরিকভাবে যারা পুরুষ, যারা নারীর অধিকার চাচ্ছে, বা যে সব পুরুষ সার্জারি অথবা ড্রাগের মাধ্যমে নারীর অবয়ব নিচ্ছে (ট্রান্সজেন্ডার), তারা আসলে আমাদের ভাইবোন, ছেলেমেয়ে যারা হিজড়া তাদের অধিকার ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। এটা আমরা কোনোদিন মেনে নেব না।  নাবিল হাসান, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভরা সেমিনারে পাঠ্যপুস্তকের ২টা পাতা ছিড়ে ফেললেন। আপনারা কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে নেমে পড়লেন প্রতিবাদ জানাতে। প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। জীবনে কখনো হিজরা বা অন্য বাইনারির মানুষের সাথে ৩০ মিনিট কথা বলেছেন কিনা সন্দেহ। স্রেফ হিজড়া পেশায় নিয়োজিত একজন মানুষের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এখানে। আপনারা এখানে সমকামিতা কই থেকে পাইলেন?

সামিনা লুৎফা বলেন, সপ্তম শ্রেণির দুই পৃষ্ঠার ভাঁজে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অথচ দেশে অবৈধভাবে টাকা ছাপানো হচ্ছে এ ব্যাপারে কারো নজর নেই। এছাড়া, দেশে আরও কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে এ নিয়ে তেমন আলাপ হয় না। 

পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন : নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ের শরিফা শিরোনামে গল্প নিয়ে উদ্ভূত আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এনসিটিবিকে সহায়তা করার জন্য পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করে এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।
ইসলাম ধর্মে ট্রান্সজেন্ডারের সুযোগ নেই জানিয়ে ঢাকার উত্তর বাড্ডা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন মোল্লা আমার সংবাদকে বলেন, ইসলামে লিঙ্গ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম পুরুষ ও নারীকে আলাদা আলাদা সত্তা হিসেবে সৃষ্টি করেছে। এর বাইরে আছে হিজড়া জনগোষ্ঠী। তারাও আমাদের সমাজের অংশ। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলাম সমর্থন করে না। এটা ইসলামের মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ বিষয়ে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা উচিত। সেটি হলো, এই অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটিই ব্যবহার করা হয়নি। লৈঙ্গিক পরিবর্তন সম্পর্কে কোনো কথাই বলা হয়নি। এখানে হিজড়া জনগোষ্ঠী বা থার্ড জেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। রাষ্ট্র এই ‘হিজড়া জনগোষ্ঠী’কে স্বীকৃতি দিয়েছে। হিজড়ারাও মানুষ। সৃষ্টির এই বৈচিত্র সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যেই এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কারণ, বিরূপ আচরণের কারণে তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হিজড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যাতে বিরূপ আচরণ না করা হয়, সে বিষয়েই মূলত সচেতন করা হয়েছে। 
 

Link copied!