Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

বদলি বন্ধে ভোগান্তিতে শিক্ষক

মো. নাঈমুল হক

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০১:২৩ এএম


বদলি বন্ধে ভোগান্তিতে শিক্ষক

প্রায় দুই মাসেও চালু হয়নি প্রাথমিকের কার্যক্রম

মার্চের প্রথম সপ্তাহে বদলি কার্যক্রম চালু হতে পারে

—শাহ রেজওয়ান হায়াত, মহাপরিচালক, ডিপিএ

বগুড়ার হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তানিয়া সুলতানা। তার বাসা বগুড়ার শাহজাহানপুরে। স্বামীর কর্মস্থলও সেখানে। বাসা থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় বাসে, হেঁটে ও সিএনজি অটোতে এ পথ পাড়ি দেন তিনি। নিয়মিত যাতায়াতে ব্যয় করেন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনার আগে একবার বদলির আবেদন করেছিলাম। তখন আমাদের বদলি কার্যক্রম দুবছরের মতো বন্ধ ছিল। 

এরপর গত বছরও বদলির আবেদন করেছিলাম।’ তার উপজেলায় বর্তমানে সহকারী শিক্ষকের ১১টি পদ খালি আছে, গত বছর তিনি তার উপজেলার তিন বিদ্যালয় পছন্দের তালিকা উল্লেখ করে বদলির আবেদন করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। অথচ দুই শিশুসন্তানকে বাসায় রেখে তাকে সারা দিন কষ্ট করতে হচ্ছে। আর এ বছর তো বদলির আবেদন এখনো শুরুই হয়নি। ফলে তার ভোগান্তি কবে দূর হবে— এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বদলি বন্ধ থাকায় তানিয়া সুলতানার মতো এমন হাজারো শিক্ষক ভোগান্তিতে রয়েছেন। 

জানা গেছে, প্রতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইনের মাধ্যমে বদলি কার্যক্রম চলবে। কিন্তু ইতোমধ্যে জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে ফেব্রুয়ারিও শেষদিকে; কিন্তু এখনো বদলি কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকা, ২০২৩-এ বলা হয়েছে, সাধারণভাবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষাবছরের জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে একই উপজেলা বা থানা, আন্তঃউপজেলা বা থানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ বদলি করা যাবে। তবে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনসাপেক্ষে আবশ্যকতা বিবেচনায় বছরের অন্য সময়েও অনলাইনের মাধ্যমে বদলি করা যাবে। 

একইভাবে বদলি ভোগান্তিতে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি প্রাথমিক শিক্ষকরা। বদলির জন্য তাদের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হয়। ভোগান্তির কথা জানিয়ে মাবিয়া সুলতানা নামে এক শিক্ষয়িত্রী বলেন, ২০২০ সালে আমি রাঙ্গামাটির সাত্রাইছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হই। আমার বাসা থেকে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে প্রতিদিন খরচ হয় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। যোগদানের পরের বছরই আমার সিজার করতে হয়। এ কারণে আমি বদলির আবেদন করি। সব ডাক্তারি কাগজপত্রও জমা দিয়েছি। কিন্তু ওই বছর আমার বদলি হয়নি। এরপর গতবছরও আবেদন করেছি। কিন্তু আশেপাশের কয়েকজনের বদলি হলেও আমার বদলি হয়নি। এ বছরও আবেদন করতে চাচ্ছি। অথচ এখনো আবেদন শুরুই হয়নি। 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান আমার সংবাদকে জানান, সহকারী শিক্ষক অনলাইন বদলি নির্দেশিকামতে শিক্ষক বদলি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চালু থাকার নিয়ম থাকলেও অদৃশ্য কারণে ফেব্রুয়ারি মাস প্রায় শেষের দিকে; কিন্তু বদলি কার্যক্রম চালু না হওয়ায় শিক্ষকরা কাঙ্ক্ষিত বিদ্যালয়ে বদলি হতে না পারায় হতাশ ও মনোকষ্ট নিয়ে পাঠদানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চালিয়ে যাচ্ছেন।  আনন্দহীন শিক্ষা শিক্ষা নয়, তাই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত বদলি চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা তার।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত আমার সংবাদকে বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ব্যস্ততার কারণে বদলি কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারিনি। এবার সম্পূর্ণ অনলাইনে বদলি কার্যক্রম চলবে। সে জন্য সফটওয়্যার উন্নয়নের কাজ চলমান ছিল। আমরা আশা করছি, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বদলি কার্যক্রম চালু হতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বদলির ব্যাপারে তিনি বলেন, সেখানকার বদলির বিষয়টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেখেন। আমরা সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ করি না।
 

Link copied!