Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫,

ওবায়দুল কাদের

৫ আগস্ট বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২৬, ২০২৫, ১২:০৮ পিএম


৫ আগস্ট বাথরুমে পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন আতঙ্কে পাঁচ ঘণ্টা স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল-এর নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব তথ্য জানান। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে কথা বলেন আওয়ামী লীগের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক।

সেদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি খুবই ভাগ্যবান। হয়তো সেদিন আমার বেঁচে থাকারই কথা ছিল না। নিজের বাসা ছেড়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। চারদিক থেকে মিছিল এসে সংসদ এলাকা ঘিরে ফেলে। শুরু হয় লুটপাট। যে বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম, সেখানে হামলা চালানো হয়। তারা জানত না আমি সেখানে আছি। আমি স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকাই। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে অবস্থান করি।”

তিনি আরও বলেন, “একপর্যায়ে কয়েকজন বাথরুমে ঢুকতে চায়। আমার স্ত্রী বলেন আমি অসুস্থ। বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিই। কয়েকজন তরুণ মুখে মাস্ক পরে, হাতে লাল পতাকার ব্যাজ নিয়ে ঢোকে। প্রথমে উত্তেজিত থাকলেও আমাকে দেখে আচরণ বদলে যায়। সেলফি তোলে, কেউ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে, কেউ জনতার হাতে দেওয়ার।”

পরে তারা একজন সাধারণ রোগীর মতো পরিচয় দিয়ে একটি ইজিবাইকে করে তাকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়। “ভাগ্য ভালো ছিল বলেই বেঁচে গেছি,” বলেন তিনি।

সেদিন ছাত্রলীগকে উত্থান দমনে ব্যবহার করা হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমি কখনও বলিনি ছাত্রলীগ অভ্যুত্থান দমন করুক। ইউটিউবে কেউ একজন এসব বলেছে, সেটা সত্য নয়।”

তৎকালীন পরিস্থিতিতে নিজের দায়িত্ব ও অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমি তখন দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পার্টি অফিস, মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন পুড়ছিল। আমি কি নিজেকে, আমার নেত্রীকে নিরাপদ রাখব না? কেউ থাকলেও সেটাই করত।”

জনরোষের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা আকস্মিক ঘটনা ছিল। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে এক দফায় গিয়ে শেষ হয়েছে। ষড়যন্ত্র ছিল, ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থ হয়েছে।”

দীর্ঘ সময় সাধারণ সম্পাদক থাকার পরও জনরোষের পূর্বাভাস বুঝতে না পারার বিষয়ে কাদের বলেন, “মানুষ ভুল করে। আমিও ভুল করে থাকতে পারি। তবে আমি চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি, কোনো পদ বিক্রি করিনি।”

আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমালোচনা থাকবে। তবে আমাদের উন্নয়ন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সময় হলে ইতিহাস সঠিক মূল্যায়ন করবে।”

অনেকদিন নীরব থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেকে বলে আমাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। তা ঠিক নয়। আমি অসুস্থ ছিলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আমার খোঁজ নিয়েছেন।”

দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, আছে। তিনবার সাধারণ সম্পাদক হওয়া অনেকের পছন্দ না হওয়াও স্বাভাবিক। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও তাই ঘটে।”

সাক্ষাৎকারের শেষভাগে ওবায়দুল কাদের বলেন, “৫ আগস্টের দিনটি আমার জীবনে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। তবে আমি ভাগ্যবান ছিলাম—বেঁচে ফিরতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।”

ইএইচ

Link copied!