Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

ইফতার সাহরি তৈরিতে ভোগান্তি

মহিউদ্দিন রাব্বানি

মার্চ ১৫, ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম


ইফতার সাহরি তৈরিতে ভোগান্তি

যেসব এলাকায় গ্যাসের স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে তারা যেন এলপিজি ব্যবহারের দিকে নজর দেন
—নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

  • গ্যাস নেই, প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে বিল
  • বিকল্প জ্বালানি খাতে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে
  • সংকটেও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা

যারা প্রথমদিকে লাইন নিয়েছেন তারা পাবেন, যারা শেষদিকে  নিয়েছেন তারা ঠিকভাবে পাবেন না
—প্রকৌশলী কামরুজ্জামান পরিচালক, পেট্রোবাংলা

‘বিকেল ৫টা বাজে, ঘণ্টাখানেক পর ইফতার করতে হবে। এখনো চুলায় গ্যাস আসেনি। সারা দিন তো গ্যাস থাকেই না। ইফতারের সময়েও গ্যাস পাচ্ছি না। রোজার মাসে অন্তত গ্যাসটা দেন। গ্যাস দিতে না পারলে প্রতি মাসে যে এক হাজার ৮০ টাকা বিল নেন, ওটা মওকুফ করেন।’ যাত্রাবাড়ী এলাকার একজন গৃহিণী গ্যাস সংকটের কারণে কষ্টের কথাগুলো এভাবেই বর্ণনা করেন।

আবাসিকে গ্যাস সংকট গ্রাহকদের বহু দিনের অভিযোগ। রমজান মাসে প্রতিটি মুসলিম পরিবারে রান্না-বান্নায় বিশেষ আয়োজন থাকে। পরিবর্তন আসে খাবারে ম্যানু ও সময়ের। রাজধানীজুড়ে গ্যাস সংকটে বিপাকে গৃহিণীরা। ইফতার ও সাহরি তৈরিতে দারুণ বেগ পেতে হয় তাদের। বছরের অন্য সময়ে যা-তা ইফতার ও সাহরি খেতে হয় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী। এমন পরিস্থিতিতে আবাসিকের গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে মাসের বিল পরিশোধের পাশাপাশি বাড়তি টাকা খরচ করে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। গ্যাসের এই সংকট সহসা কাটছে না। আমিন আল রাশিদ নামে একজন বলেন, রোজার মাসে অন্তত গ্যাসটা দেন। না পারলে মাসে যে এক হাজার ৮০ টাকা বিল নেন, ওটা মওকুফ করেন। সেটিও যদি না পারেন তাহলে ইলেকট্রিক চুলা কিনে দেন এবং মাসে মাসে তার বিলটা দিয়ে দেন। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শীতকাল চলে যাওয়ার পর আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও সময়মতো রান্নার জন্য তা যথেষ্ট নয়। তবে গ্রাহককে প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে এলপিজি বা ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করায় জ্বালানি খাতে গ্রাহকের মাসিক খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। আবার নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়লেও মানুষের আয় বাড়ছে না। এ অবস্থায় রোজায় গ্যাস সংকট রাজধানীবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়াবে। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গ্যাসের গ্রাহকরা যারা গ্যাস পাচ্ছেন না, স্বল্পচাপ পাচ্ছেন, তাদের বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করতে বললেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ খুবই কম। রমজানে অনেক এলাকায় সাহরি ও ইফতারের খাবার বানাতে পারছে না, এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, যেসব বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ আছে, যেহেতু আমাদের একটি মাত্র এফএসআরইউ কাজ করছে, ৩০ মার্চের আগে আরেকটি এফএসআরইউ আসবে না। সুতরাং আমাদের যে আমদানি করা গ্যাস ছিল, ২০ শতাংশ আমরা আমদানি করতাম, তার মধ্যে ১০ শতাংশ কমে গেছে। আমাদের নিজেদের যে গ্যাস ছিল তার থেকেও আমাদের উত্তোলন কমে গেছে। এগুলো বিবেচনায় এনে বাসাবাড়ির গ্যাসের ব্যাপারে আমাদের বিকল্প একটি সমাধান তো আছেই, এলপিজি। সবাইকে অনুরোধ করব, যেসব এলাকায় গ্যাসের স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে তারা যেন এলপিজি ব্যবহারের দিকে নজর দেন।

তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব গ্যাসের উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব। তবে রমজানে কিছু সময় বিদ্যুৎবিভ্রাট হতে পারে, যোগ করেন তিনি। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন ৩৪ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ৩৫০ থেকে ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। ফলে রমজানেও আবাসিকে গ্যাস সংকট থেকেই যাচ্ছে। মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের কাছ থেকে নির্ধারিত অঙ্কে গ্যাসের বিল আদায় করা হয়। এদিকে দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার এবং এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার হিসাবে গ্যাসের দাম আদায় করা হয়। এরপর গ্রাহক ব্যবহার করুক বা না করুক নির্ধারিত অঙ্কের বিল তাকে পরিশোধ করতে হয়। 

বিদ্যমান এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার ৯৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার এক হাজার ৩৭৯.৭০ টাকা, দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার এক হাজার ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার এক হাজার ৫৯১.৯২ টাকা করতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ডিসেম্বরে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে বিইআরসি। পাশাপাশি বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাড়াতে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল বলে জানা গেছে। তখন বিইআরসি জানায়, মূল্যায়ন কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আবাসিকে গ্যাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, গ্রাহকের অভিযোগ আছে, অভিযোগ থাকবেই। যারা প্রথম দিকে লাইন নিয়েছেন তারা ঠিকমতো গ্যাস পাবেন, আর যারা শেষ দিকে লাইন নিয়েছেন তারা ঠিকভাবে পাবেন না। ওই লাইনে অতিরিক্ত গ্রাহক হলে তো তারা গ্যাস পাবেন না। দেশে বর্তমানে আবাসিকে ৩৫০ থেকে ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
 

Link copied!