Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

উপজেলা নির্বাচনি গেজেট প্রকাশ, আজ ইসি বৈঠকের পর পূর্ণাঙ্গ তফসিল

স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় উৎসাহ

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

মার্চ ২১, ২০২৪, ১২:২১ এএম


স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় উৎসাহ
  • প্রচারের জন্য ছাপানো যাবে রঙিন পোস্টার
  • জনসংযোগ চালানো যাবে সামাজিকমাধ্যমেও
  • বাড়ানো হয়েছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতা

আসছে মে মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের বৃহৎ এ নির্বাচন মে’র প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে চার ধাপে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৪ মে এ নির্বাচন হতে পারে— নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এমন আভাস আগেই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। আজ নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে। বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফসিলের বিষয় নির্ধারণ হবে। বৈঠক শেষে যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। একই বৈঠকে ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা ও তফসিলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— এমনটি ইসির পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইসির দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। কিন্তু ভোটের তারিখ জানানো হলেও পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। আজকের বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের ইসি বৈঠকের বিষয়টি জানিয়েছেন। 

অশোক কুমার দেবনাথের ভাষ্যমতে, আজ প্রথম ধাপের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। অপরদিকে জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন নিয়েও আজকের বৈঠকে আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে। ওই উপনির্বাচনেরও তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে আজ। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে কি না, সে বিষয়েও আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।  

জানা গেছে, গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাচনের পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য ২৫০ সমর্থকের স্বাক্ষর বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া রঙিন পোস্টার ছাপানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনসংযোগ করতে পারবেন প্রার্থীরা। সংশোধিত বিধিমালায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধন করে প্রকাশিত গেজেটে আরও বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সইসহ সমর্থনসূচক তালিকা জমা দেয়ার বিধান বাদ দেয়া হয়েছে। 

আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিমালায় আরও কিছু সংশোধনী এনে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে আগামী উপজেলা নির্বাচনেই এসব বিধান কার্যকর হবে। সংশোধিত বিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের জামানত রক্ষায় প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে। এতদিন তা ছিল এক অষ্টমাংশ। এবার থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে অনলাইনে। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীরা জনসংযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন। সাদা-কালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ও ব্যানার করতে পারবেন তারা।  দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় অংশীজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ না নিলে সেক্ষেত্রে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না— এমন ভাবনা থেকেই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে উন্মুক্ত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল। 

দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এলে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে, সেই চিন্তা থেকেই এবার স্থানীয় এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তবে ক্ষমতাসীন দলের এ সিদ্ধান্তে দলের ভেতরে বিভেদ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। কারণ, গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেই উৎসাহ পেয়ে দেশজুড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে অংশ নেন; তারা কিন্তু প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে বেশ ভালো ফলই করেছিলেন। নির্বাচনে তারা বিরোধী দলের চেয়ে প্রায় ছয়গুণ আসনে জয়লাভ করেছেন। কিন্তু বিপত্তি হচ্ছে, বিজয়ী স্বতন্ত্র এমপির সমর্থক ও আওয়ামী লীগের পরাজিত এমপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক এই বিরোধিতা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশেষ বর্ধিত সভা করে থাকে; কিন্তু এবার দলটি জাতীয় নির্বাচনের পর একটি বিশেষ বর্ধিত সাধারণ সভা করেছে। ওই সভার অন্যান্য এজেন্ডার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিল দলীয় বিরোধ নিষ্পত্তি করা। বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে সেই নির্দেশনাই দেয়া হয়েছিল; কিন্তু সেই নির্দেশনা খুব একটা কাজে আসেনি। এখনো বিরোধী মনোভাব বিদ্যমান রয়েছে। এখন উপজেলা নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে স্থানীয় পর্যায়ে দলের ভেতরে সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

এদিকে বিরোধী দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ জানিয়ে দিয়েছেন, দলটি উপজেলা নির্বাচনে অংশ  নেবে না। যদি দলের কেউ সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ফলে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, বিএনপি এবং তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা নির্বাচনে আসছে না। ফলে এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগই।  
 

Link copied!