Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ

১৫ বছরে অভাবনীয় সাফল্য

মহিউদ্দিন রাব্বানি

মার্চ ২১, ২০২৪, ১২:৪০ এএম


১৫ বছরে অভাবনীয় সাফল্য
  • বিদ্যুতে আলোকিত ৮৪ হাজার গ্রাম
  • ৫০ বছরে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ৫০ গুণ

দেশের প্রতিটি ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর সক্ষমতা তৈরি করেছে সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদ্যুতের মিটারসহ পুরো ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশনে কাজ চলছে। সরকারের বর্তমান লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত করা। 

শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দেশে ৮৪ হাজার গ্রাম এখন আলোকিত। রাতের অন্ধকার ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুতের আলো। গ্রাম, শহর, নগর, বন্দর সর্বত্রই বিদ্যুতের সুফল পাচ্ছে নাগরিকরা। অধুনা বিশ্বে বিদ্যুৎহীনতা কল্পনা করা যায় না। দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে পারাটা সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এখনকার লক্ষ্য হলো দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত করা।

শিল্প, ব্যবসা, কৃষি থেকে শুরু করে শিক্ষা-চিকিৎসা সব ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ এখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতায়নের ফলে শিল্পের চাকা এগিয়ে চলছে। গতি বেড়েছে অর্থনৈতিক খাতে। বর্তমানে পল্লী, শহর, দ্বীপ ও পাহাড়ি জনপদের মোট ৮৪ হাজার ২৪৮ গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতায়িত। 

গত এক যুগে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ নানা সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবির তথ্যমতে, সরকার শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর স্বাধীনতার ৫০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৫০ গুণ।  বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল ২৭টি। ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১৫০টিতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৫ বছরে কেন্দ্র বেড়েছে ১২৩টি। 

২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। চলতি বছর ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুতে উৎপাদনে সক্ষমতা বেড়েছে ৩০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াটে। মোট সঞ্চালন লাইন ১৫ বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ২৪৬ কিলোমিটার। গ্রিড সাব-স্টেশন ক্ষমতা বেড়েছে ৫১ হাজার এমভিএ। বিদ্যুতায়িত বিতরণ লাইন এক দশকে বেড়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ১৬৭ কিলোমিটার। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো ৪৭ শতাংশ মানুষ। ২০২৩ সালে ৫৩ শতাংশ বেড়ে শতভাগে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকারের ১৫ বছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৩৮২ কি.ও./ঘণ্টা। এছাড়া ২০০৯ সালে বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল এক কোটি ৮ লাখ। বর্তমানে গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লাখ। সেচ সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজারটি। বিতরণ সিস্টেম লস কমেছে প্রায় সাত শতাংশ। 

গ্রাহকসেবায় যুক্ত হয়েছে ডিজিটালাইজেশন। সর্বমোট ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার প্রি-পেইড ও স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। সেচকাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ই-টেন্ডারিং, ই-নথি, ইআরপি, স্ক্যাডা, জিআইএসসহ অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যার চালুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে পেপারলেস অফিস স্থাপন করা হচ্ছে। 

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর বিদ্যুৎ ছিল এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, ২০০০-০১ অর্থবছরে তা চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি এবং সরকারি-বেসরকারি মিশ্র খাত সৃষ্টির জন্য আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়ন ও অনুমোদন দেয় সরকার।  পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান-২০০০’ প্রণয়ন করা হয়। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৪৮৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়। ১৩ হাজার ৭১৩টি গ্রামকে বিদ্যুতায়িত করা হয়।   বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

বোর্ডের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  অদূর ভবিষ্যতে আরও ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ ও মেরামত বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে সরকারকে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে যখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলো, তখন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল সব মিলিয়ে ৪৭ শতাংশ। আর তখন বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো চার হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা। 

২০২১ সালে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে এটি ২০২২ সালে সম্পূর্ণ হয়। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের বড় একটি সফলতা। নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় একটি অর্জন। এর ফলে আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে; বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। বিদ্যুতের কারণে গ্রামের মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে, কাজেরর বিপুল  সন্ধান পেয়েছে। 
 

Link copied!