Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

বিমার টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক

গ্রাহকদের অভিযোগের পাহাড়

মো. ইমরান খান

মো. ইমরান খান

মার্চ ২৩, ২০২৪, ১১:৪২ পিএম


গ্রাহকদের অভিযোগের পাহাড়
  • বিমা দাবির টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গ্রাহক
  • গ্রাহকের চাপে ঘরবাড়িছাড়া এজেন্টরা

কিছু বিমা কোম্পানির অবস্থা খারাপ রয়েছে। আমরা উন্নয়নের চেষ্টা করছি
—আইডিআরএ মুখপাত্র

কিছু কর্মকর্তার অনিয়মের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে 
—জনসংযোগ কর্মকর্তা, ফারইস্ট

নিজের শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থ জমা দিয়ে এখন তা  উদ্ধারে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকদের। একটু লাভের আশায় কষ্টে অর্জিত অর্থ জমা রেখে বিপাকে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। নিজের সঞ্চিত অর্থ ফেরত পেতে এখন নিয়মিত ফারইস্টের প্রধান কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রাহকরা। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত এসব গ্রাহকের অভিযোগের অন্ত নেই। বিমা দাবি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। অনেকে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন। গত বুধবার দুপুরে পল্টনস্থ ফারইস্টের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ফারইস্টের এজেন্টদের বিরুদ্ধে। রসালো আর মুখরোচক কথায় গ্রাহকদের মন ভিজিয়ে টাকা নিয়ে এখন রীতিমতো দৌড়ের ওপর আছেন তারা। বিমা দাবি না পেয়ে অনেকে দায়ী করছেন এজেন্টদের। এতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন অনেক এজেন্ট। উপায় না পেয়ে অনেকে দ্বারস্থ হচ্ছেন আইডিআরএ। তাতেও মিলছে না সুরাহা। 

সোনারগাঁ থেকে আসা তাজউদ্দিন নামে একজন দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, তিনি ১০ বছর মেয়াদি বিমা করেছিলেন। প্রায় ১০ লাখ টাকা জমা করেন তিনি। দুবছর আগে পলিসি পরিপক্ব হয় তার। বিমা দাবি পাওয়ার জন্য স্থানীয় অফিস থেকে হতাশ হয়ে শেষ ভরসা হিসেবে আসেন ফারইস্টের প্রধান কার্যালয়ে। এখানেও হতাশ হন তিনি। বিমা দাবি পরিশোধর জন্য একের পর এক তারিখ দেয়া হয় তাকে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে এসেও মিলছে না সাড়া। ফের দেয়া হয় নতুন তারিখ। 

নাটোর থেকে আসা আবুল কালাম আজাদ নামে একজন গ্রাহক দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, তিনি ১২ বছর মেয়াদি বিমা করেন। প্রায় দুবছর আগে তার পলিসি ম্যাচিউর হলেও দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বিমা দাবি নিয়ে। একের পর এক তারিখ দেয়া হচ্ছে তাকেও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এজেন্ট আমার সংবাদকে জানান, ভালো ভেবে আমরা মানুষকে বিমা করতে উৎসাহিত করেছি এবং অনেকের বিমার ভারও নিয়েছি; শেষে এমনটি হবে ভাবতে পারিনি। এখন সবাই এসে আমাদের দায়ী করছেন। আমাদের তো কিছুই করার নেই। বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানান অনেকেই।

কোম্পানির তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনিষ্পন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১৮০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ২০২৩ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির পরিমাণ ৬১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২৩ সালে অনিষ্পন্ন দাবি ও নতুন মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির পরিমাণ দুই হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

এর মধ্যে কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালে দাবি পরিশোধ করা হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ দুই হাজার ৩৩০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর ২০২৪ সাল থেকে ২০২৬ সালে নতুন করে মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি উত্থাপিত হবে তিন হাজার ১৩৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগামী তিন বছরে মোট মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি পরিশোধ করতে হবে পাঁচ হাজার ৪৬৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দাখিল করা কোম্পানিটির অনিষ্পন্ন ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবির হিসাব পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ফারইস্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা চঞ্চল হোসাইন দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, পূর্ববর্তী কিছু কর্মকর্তার অর্থ আত্মসাতের কারণে তাদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করছি বিমা দাবি পরিশোধ করার। কিছুদিনের মধ্যে বড় একটা ফান্ড পাব, তাতে বড় অংশের একটা বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারব বলে আশা করছি।

ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বেশকিছু জীবন বিমা কোম্পানির অবস্থা খারাপ পর্যায়ে আছে। আমরা বিমাগুলোর উন্নয়নের চেষ্টা করছি; এর জন্য বিভিন্ন নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে।’ 

পঞ্চগড় থেকে হতদরিদ্র সুলতানা জানান, ছাগল, হাঁস, মুরগি বিক্রি করে বিমায় টাকা দিয়েছি; এখন আর বিমা কোম্পানির কেউ আমাদে চেনে না, স্থানীয় অফিসে গিয়ে পাত্তা পাই না; তাই ঢাকায় আসছি। এখানে বারবার তারিখ দেয় কিন্তু সময়মতো এসে টাকা পাই না।

তিনি আরও বলেন, ওষুধ কেনার টাকা নেই, চলতে অনেক কষ্ট হয়। রোজা রেখে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় আসতে অনেক কষ্ট। 

সূত্রমতে, আগামী তিন বছরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ গ্রাহকদের বিমা দাবি পরিশোধ  করতে হবে পাঁচ হাজার ৪৬৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর কোম্পানির সম্পদ রয়েছে এক হাজার ৯২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির সব সম্পদ বিক্রি করলেও মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবির বাকি তিন হাজার ৬৮০ কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। ফলে বিমা দাবি পরিশোধে টাকার জোগান নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
 

Link copied!