ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক থামছে না

মো. নাঈমুল হক

এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ০৩:২০ পিএম

শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক থামছে না

কর্তৃপক্ষ বলছে প্রশিক্ষণ ঘাটতি

  • প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুরু হয় নতুন শিক্ষাক্রম
  • বছর পার হলেও ধোঁয়াশা কাটেনি শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের
  • বৃদ্ধি পায় কোচিং, গাইড ও মোবাইল ফোননির্ভরতা 
  • মূল্যায়ন বিভ্রান্তিতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা

মুখস্থ থেকে বেরিয়ে অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মাঝামাঝি পর্যায়ে দেশ। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক সঙ্গী হয়ে ছিল। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না দেয়ায় এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে যথাযথভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারেননি শিক্ষকরা। এ কারণে সন্তানদের পড়া খুঁজে পাননি অভিভাবকরা। মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও ছিল ধোঁয়াশা। তবে সারা দেশের অধিকাংশ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ হওয়ায় বর্তমানে এ সমস্যা কিছুটা কমে এসেছে। অবশ্য কারিকুলাম বোঝার ক্ষেত্রে শহরের শিক্ষকদের তুলনায় গ্রামের শিক্ষকরা পিছিয়ে রয়েছে। 

জানা গেছে, দীর্ঘ তিন বছরের আলোচনা ও পর্যালোচনার পর শুরু হয় নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু শিক্ষাক্রমের শুরুতে নাম মাত্র অনলাইন প্রশিক্ষণ পায় শিক্ষকরা। এতে নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না পাওয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষকরা। এছাড়া শিক্ষকদের বিশাল অংশ ছিল প্রশিক্ষণের বাইরে। এ বছর এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (ইআইআইএন) ও ইআইআইএনবিহীন শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেয়েছে। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইআইআইএন ধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সব শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেলেও ইআইআইএনবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শুধুমাত্র প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেয়েছে। 

ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সব শিক্ষক প্রশিক্ষণ না পেলেও তারা প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। বর্তমানে শিক্ষাক্রমের বিতর্ক কিছুটা কমেছে। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমের শুরুতেই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কারণ এ শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। শিখন, শেখানো ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পুরোপুরি ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। বইয়ের বিষয়বস্তুরও এসেছে ব্যাপক আকারের পরিবর্তন। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএ) সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গত বছর প্রশিক্ষণ পাইনি। ফলে শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় আমাদের অজানা ছিল। এ বছর মার্চের ১৮ তারিখ থেকে ৫ ধাপে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেয়েছে। আজ আমিও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছি। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেকাংশে আমাদের ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। এ প্রশিক্ষণটা গত বছর দেয়া প্রয়োজন ছিল। 

প্রশিক্ষণ দিতে না পারার কারণ জানিয়ে ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম ও স্কিম বিভাগের পরিচালক মাহফুজ আলী বলেন, গত বছর আমরা দায়িত্ব পেয়েছি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। এরপর শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সময় স্বল্পতার কারণে সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হয়নি। একটা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনেক ধরনের ম্যানুয়ালের প্রয়োজন। সেই ম্যানুয়াল তৈরিতে আমাদের সময় ব্যয় করতে হয়েছে। কোন বিষয়ে কীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে? এটাতো ছোট কোনো কাজ না। তাই সব কিছু এতো অল্প সময়ে ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি।

কোচিং, গাইড ও মোবাইল ফোনের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি : নতুন কারিকুলামে সবগুলো বিষয়ে দুর্বোধ্য কাজ ও অনুশীলনী দেয়া হয়েছে। এগুলোর সমাধানের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট বা কোচিং, গাইড ও ইউটিউব বা গুগলের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এর ফলে অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। কারিকুলাম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই তাদের। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রণেতারা বলেছে, নতুন শিক্ষাক্রম প্রাইভেট, কোচিং ও গাইড নির্ভরতা কমাবে। কিন্তু বর্তমানে এর উল্টো ফল দেখা যাচ্ছে। 

মুগদা আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুল থেকে এসাইনমেন্ট দেয়। আর গুগল ও ইউটিউব থেকে সেগুলো দেখে দেখে লিখে নিয়ে যায়। এটাতে ওর কোনো লাভ হচ্ছে না। অন্যদিকে পড়ার কথা বলে মোবাইল নেয়। কিছুক্ষণ পড়ার পরই গেমস শুরু করে। কতক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখা যায়। এ অভিভাবক সন্তানকে স্কুলের শিক্ষকের কাছে কোচিংয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগে প্রাইভেট শিক্ষক রাখতাম। কিন্তু নতুন কারিকুলাম আসার পর প্রাইভেট শিক্ষক তেমন বুঝতে পারছিলেন না। সেজন্য স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়তে দিয়েছি। নরসিংদীর ঘোড়াদিয়া হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, নতুন কারিকুলামের বইয়ে অনুশীলনী খুবই কম দেয়া হয়েছে। একটা জিনিস বুঝার জন্য বারবার অনুশীলন ও চর্চার প্রয়োজন।  সেজন্য গাইড কিনেছি। 

মূল্যায়ন বিভ্রান্তিতে অভিভাবক ও শিক্ষকরা : গ্রাম ও শহরের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের শুরুতেই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তিতে ছিলেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের কথা থাকলেও সেই পদ্ধতি এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না অভিভাবক ও শিক্ষকরা। গ্রামের অধিকাংশ স্কুলে পুরোনো সিস্টেমে মডেল টেস্ট ও সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। অনেক স্কুলে মডেল টেস্ট ও এসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আবার শহরের স্কুলগুলোতে কারিকুলাম মূল্যায়নের পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও নৈপুণ্য অ্যাপসে মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য অর্জন করা যাচ্ছে না। এর ফলে শিক্ষার্থীর শেখায় বড় ধরনের গ্যাপ দেখা যাচ্ছে। 

অভিভাবকরা পড়া খুঁজে পাচ্ছেন না : পুরোনো পদ্ধতির মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের প্রয়োগের সক্ষমতা দেখা হবে। এর জন্য স্কুলগুলো এসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটার ভুল ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা। মোবাইল থেকে নকল করে লেখা জমা দিচ্ছে। এরই ওপর তার রেজাল্ট তৈরি হচ্ছে। স্কুল থেকে কোনো পড়া না দেয়ায় সন্তানকে পড়ার জন্য বলতেও পারছেন না অভিভাবকরা। সেজন্য অনেক অভিভাবকের ধারণা কারিকুলামে পড়াশোনা নেই। আগের সিলেবাসের তুলনায় বর্তমানে পড়া অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বইগুলোর মানে তেমন পরিবর্তন পাচ্ছেন না। একই বিষয়বস্তুর সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে অভিভাবকদের মাঝে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য ড. তারিক আহসান বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পড়ার চাপ কমিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা নির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বিষয়গুলো নতুন হওয়ার কারণে অনেক অভিভাবকের ধারণা পড়াশোনা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে অভিভাবকরা এ বিষয়টি বুঝতে পারবেন। 

তিনি আরও বলেন, নতুন কারিকুলামে একজন শিক্ষার্থী জীবন ও জীবিকার বিষয়ের মাধ্যমে কিছু সফট স্কিল তৈরি করে দিচ্ছে। এর ফলে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে সে খাপ খাইয়ে চলতে পারবে। বাকি ৯টা বিষয়ের উদ্দেশ্য তাকে সৃজনশীল করা, সমস্যা সমাধানে পারদর্শী করা এবং জীবন সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা। ট্র্যাডিশনাল সিস্টেমে আমাদের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। এই শিক্ষার্থীরা বিদেশে বা যে কোনো পেশায় গেলে তারা অদক্ষ হিসেবে যায়। কারিগরি লেভেলে তৈরির যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেটি সত্য নয়। 

বিজ্ঞান ও গণিতে একই বিষয় পড়ায় এ বিষয়গুলোতে আমরা পিছিয়ে যাব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে বিজ্ঞানের শিখন ঘণ্টা বেড়েছে। আমাদের কন্টেন্ট (বিষয়) কাভারেজ কমেনি, বরং বেড়েছে। উল্টো আমাদের এখানে দুটো জিনিস যুক্ত হয়েছে, কম্পিটেন্সি ও ইন্টার ডিসিপ্লিনারি এরিয়া। কম্পিটেন্সি থাকার ফলে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানকে শুধু পড়ার জন্য পড়বে না। জীবনের সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানকে নিয়ে যাবে। এতে তার মূল্যবোধও তৈরি হচ্ছে।
 

Link copied!