নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৬, ২০২৫, ১২:০২ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৬, ২০২৫, ১২:০২ এএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাটডাউন ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেছেন, সরকারকে বলব আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুই মিনিটে কাকরাইল ছেড়ে ক্যাম্পাসে চলে যাব।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় কাকরাইল মোড়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, সরকারকে বলব আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। দাবি মেনে নিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুই মিনিটে রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে চলে যাব। যদি দাবি না মানা হয় তাহলে রাস্তা থেকে আমাদের কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না। আমি আরও বলছি, আমাদের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রাস্তায়, তাই ক্যাম্পাস আর খোলার দরকার নেই। ওই ক্যাম্পাস বন্ধ থাকুক, শাটডাউন থাকুক।
অধ্যাপক রইস উদ্দিন বলেন, খালেদা জিয়া ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর এ কারণেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দুর্ভাগ্য যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথের ১৮ হাজার শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই ২০ বছরে একটি হল নির্মাণ করা হয়নি। এমন বৈষম্য পৃথিবীতে নেই। তাই হলের দাবিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্রিয়াশীল সংগঠন একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। পাশাপাশি আমাদের ৩০৬ কোটি টাকার বাজেট কর্তন না করার দাবি জানিয়েছি। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত নির্মাণে সরকারের অগ্রগতি প্রকল্পের তালিকায় রাখার দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এই দাবি নিয়ে কাকরাইল মোড়ে আসার আগেই পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৈষম্যবিরোধী এই বাংলাদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হতে পারে না। তাই আমরা গতকাল হামলায় জড়িত পুলিশের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
গত বুধবার তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উপস্থিতি ও পরবর্তী সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে এই শিক্ষক নেতা বলেন, তিনি জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের কাতারের একজন লোক। তার কাঁধে কাঁধ রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করেছিল। তাই আমরা তার কাছে আশা করেছিলাম যেসব শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হয়েছেন, সে বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করবেন।
উনি (মাহফুজ) বলেছেন, ১০ মিনিটের মধ্যে রাস্তা খালি করে দিতে। পুলিশ প্রটেকশনে থেকে ফ্যাসিবাদী আচরণ করলে কেমনে হবে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০ শিক্ষকের প্রটেকশন ১৮ হাজার শিক্ষার্থী। সুতরাং সাবধান ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আচরণ যেন দ্বিতীয়বার উচ্চারিত না হয়। কোনো শক্তি আমাদের এখান থেকে সরাতে পারবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে এই শিক্ষক বলেন, আর কালক্ষেপণ করবেন না। দ্রুত সময়ে আমাদের দাবি মেনে নেন। আমি কথা দিচ্ছি, দুই মিনিটের মধ্যে আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে যাব। আর যতদিন পর্যন্ত দাবি মানার বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা না দেবে, ততক্ষণ এখানেই অবস্থান করব। আরেকটা বিষয় হলো, সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানেই আছেন, সুতরাং ওই ক্যাম্পাস অটোমেটিক শাটডাউন। আমাদের দাবি আগে মানতে হবে, সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। এরপরই আমরা এই স্থান ত্যাগ করব।
এর আগে বিকালে অধ্যাপক রইস উদ্দিন বলেন, আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে এসেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমাদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি, কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। আমাদের অধিকার চাইতে এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন চলবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে না। দাবি আদায় করে আমরা ঘরে ফিরব।
তিনি বলেন, আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় তবে তা ভালো হবে না। আমার চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তফা হাসান বলেন, আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী তিন দফা দাবি আদায়ে কাকরাইলে এসে আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুধু অফিস খোলা রয়েছে। কোনো ক্লাস হচ্ছে না, কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। এতেই বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। আমরা অফিসিয়ালি শাটডাউন ঘোষণা করতে পারি না, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় আন-অফিসিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন রয়েছে। কেননা সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা রাস্তায়, এ অবস্থায় ক্লাস-পরীক্ষা কে নেবে?
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সরকার চাইলেই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারে। সামনে বাজেট ঘোষণা করবে সরকার, সেখানে আমাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। শাটডাউনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, অফিসিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা করা হয়নি এবং এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ক্লাস হচ্ছে না বা পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা শাটডাউনের ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারেন।